বীর দাস। ছবি: সংগৃহীত।
একই ভারতের দুই রূপের কথা শুনিয়ে গেরুয়া শিবিরের রোষানলে পড়লেন স্ট্যান্ড-আপ কমেডিয়ান বীর দাস। ওয়াশিংটনের মঞ্চে একটি শোয়ে তাঁর শ্লেষাত্মক মন্তব্যে উঠেছে দেশের নারীদের প্রতি দু’মুখো ব্যবহারের ছবি। এর পরেই যেন আগুনে ঘৃতাহুতি! বীরের ওই চাঁচাছোলা কটাক্ষ ঘিরে নেটমাধ্যমে একের পর এক আক্রমণাত্মক মন্তব্য ধেয়ে এসেছে তাঁর দিকে। এমনকি, দেশকে অপমান করার অভিযোগে দিল্লির তিলক মার্গ থানায় বীরের বিরুদ্ধে এফআইআর-ও করেছে বিজেপি। দেশের বাস্তব চিত্র তুলে ধরার জন্য অনেকেই অবশ্য প্রশংসায় ভরিয়ে দিয়েছেন বীরকে।
আমেরিকার ওয়াশিংটনের জন এফ কেনেডি সেন্টারে ‘আই কেম ফ্রম টু ইন্ডিয়াজ’ নামে তাঁর নিজের শোয়ে বীরের মন্তব্য ছিল, ‘‘আমি এমন ভারতের বাসিন্দা, যেখানে আমরা দিনে নারীদের (দেবী রূপে) পুজো করি এবং রাতে তাঁদেরই গণধর্ষণ করি।’’ শুধু তা-ই নয়, করোনার বিরুদ্ধে লড়াই, কৃষি আইনের বিরুদ্ধে আন্দোলন, ধর্ষণের মামলা-সহ একাধিক জ্বলন্ত সমস্যার কথাও তুলে ধরেছেন ওই শোয়ে। সেই শোয়ের ভিডিয়ো ইউটিউবের মাধ্যমে শেয়ার করতেই তাঁর বিরুদ্ধে সমালোচনার ঝড় উঠেছে। বীরের বিরুদ্ধে থানায় গিয়েছেন দিল্লি বিজেপি-র মুখপাত্র আদিত্য ঝা। অভিযোগপত্রের সঙ্গে বীরের বিরুদ্ধে টুইটে আদিত্য লিখেছেন, ‘অন্য দেশে গিয়ে আমাদের জাতিকে কেউ অপমান করবে, তা বরদাস্ত করা হবে না।’ সমালোচনায় সরব বলিউড অভিনেত্রী কঙ্গনা রানাওতও। বীরের উদ্দেশে টুইটারে তাঁর কড়া মন্তব্য, ‘আপনি যখনই ভারতীয় পুরুষদের গণধর্ষণকারী বলে তুলে ধরছেন, তখনই বিদেশে তাকে উৎসাহ দেওয়া হচ্ছে। এ ধরনের মন্তব্যের জন্য আপনার বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা নেওয়া উচিত।’
বীরকে আক্রমণ করেছেন বহু টুইটার ব্যবহারকারীও। এক জন লিখেছেন, ‘বীর এটা বলতে ভুলে গিয়েছেন যে এমন এক ভারত থেকে তিনি এসেছেন, যা রানি লক্ষ্মীবাইয়ের জন্মস্থান।’ অনেকে আবার দ্বিমত পোষণ করেন। তাঁদের মতে, বীরের শোয়ে রাজনীতি, ধর্ম, ক্রীড়ার মতো বহু ক্ষেত্রেই এ দেশের দ্বিচারিতার ছবি ফুটে উঠেছে। অনেকে আবার বীরের সাহসী মনোভাবের তারিফ করেছেন। তবে সামলোচনার মুখে পড়ে মুখ খুলেছেন স্বয়ং বীর। তিনি লিখেছেন, ‘এই (শোয়ের) ভিডিয়োতে ভারতের দ্বিচারিতা নিয়ে শ্লেষাত্মক ছবি তুলে ধরা হয়েছে। যে ভারতে দুই দিকই রয়েছে। ঠিক যেমনটা অন্য দেশেও থাকে। একটি অন্ধকার, অন্যটি আলোর দিক। একটি ভাল, অন্যটি মন্দ যে ভাবে সব কিছুর মধ্যে লুকিয়ে থাকে।’ সেই সঙ্গে তাঁর মন্তব্য, ‘আমরা যে মহান, তা কখনই ভুলতে পারি না— ভিডিয়োতে এই কথাই জানানো হয়েছে। আমাদের যে সব বিষয় মহান করে তুলেছে, তা দিক থেকে নজর ঘোরাবেন না!’