‘দুধপিঠের গাছ’ ছবির একটি দৃশ্য
দুধ পিঠে মাটিতে পুঁতলে কি তার গাছ বেরবে? এই প্রশ্ন বার বার ভাবায় গৌরকে। আড়ংঘাটা গাঁয়ের ছোট্ট ছেলেটা দুধ পিঠে খেতে ভালবাসে। তাই সে স্বপ্ন দেখে, একদিন তার পিঠের গাছ বড় হবে। অনেক অনেক দুধ পিঠে পাওয়া যাবে তখন। শিশুমনের এই ভাবনা নিয়ে ‘দুধপিঠের গাছ’ তৈরি করলেন পরিচালক উজ্জ্বল বসু।
তবে আর পাঁচটা ছবির থেকে ‘দুধপিঠের গাছ’ কিছুটা আলাদা। শুধু গল্পের নিরিখে নয়, ছবি তৈরির নিরিখেও। এ ছবির প্রযোজকের ভূমিকায় কোনও বড় প্রযোজনা সংস্থা নয়, বরং রয়েছে আস্ত একটা গ্রাম! রানাঘাটের আড়ংঘাটা গ্রামের ৯৩০টি পরিবার প্রায় ২২ লক্ষ টাকা তুলে এই ছবি তৈরি করতে সাহায্য করেছে পরিচালককে। এমনটা করার কারণ কী? পরিচালক বললেন, “এর আগে বেশ কিছু চিত্রনাট্য নিয়ে কয়েকজন প্রযোজকের কাছে গিয়েছিলাম। কিন্তু আমার চিত্রনাট্য তাঁদের পছন্দ হয়নি। তাই ভেবেছিলাম, প্রযোজক ছাড়াই ছবি করব। অন্যদিকে দেখছিলাম, গ্রামের মানুষের কাছে আমরা কোনও ভাবেই ভাল ছবি পৌঁছে দিতে পারছি না। তখনই মনে হল যদি আমি আমার ছবির সঙ্গে তাঁদের যুক্ত করি অর্থাৎ তাঁরাই অভিনয় করবেন, তাঁরাই প্রযোজক হবেন, তা হলে হয়তো ছবির প্রতি তাঁদের আগ্রহ জন্মাতে পারে। আমাকে দেখে আরও পাঁচজন গ্রামে গিয়ে ছবি করতে পারেন। এ ভাবেই গ্রামবাসীদের মধ্যেও ভাল ছবি দেখার অভ্যাস তৈরি হবে।”
পরিচালকের আক্ষেপ, সিনেমা হলগুলি একে একে বন্ধ হয়ে যাওয়ায় ভাল বাংলা ছবি থেকে বঞ্চিত হচ্ছেন গ্রাম বাংলার দর্শক। তাঁর বিশ্বাস, ভাল ছবি দেখালে সেখানকার দর্শক তা গ্রহণ করবেন। নিজের গ্রাম থেকেই সেই কাজ শুরু করতে চেয়েছেন তিনি। উজ্জ্বল বললেন, “আড়ংঘাটা আমার গ্রাম। আমি সেই গ্রামেই জন্মেছি, বড় হয়েছি। তাই ভাবলাম, নিজের গ্রাম থেকেই শুরু করা যাক এই উদ্যোগ।”
আরও পড়ুন: দীপিকা এবং আলিয়া থাকছেন সঞ্জয় লীলা ভন্সালীর আগামী ছবিতে, নায়কের ভূমিকায় তা হলে কে?
রানাঘাটের ওই গ্রামে রুজিরুটি উপার্জন করতেই রক্ত জল করতে হয় অনেককে। পরিচালকের কাছে জানতে চাওয়া হল, ছবির জন্য টাকা খরচ করতে তাঁরা রাজি হলেন? তাঁর উত্তর, “গ্রামবাসীদের কেউই এ বিষয়ে আপত্তি জানাননি। বরং সাহায্যের জন্য এগিয়ে আসেন। এক বৃদ্ধা মাসিমা একদিন শ্যুটিং-এ এসে একটি লক্ষ্মীর ভাঁড় তুলে দিয়েছিলেন আমার হাতে। সেখানে তাঁর নাতির জমা্নো শ'পাঁচেক টাকা ছিল। কিছু মানুষ অর্থ না দিয়ে অন্য ভাবে সাহায্য করেছেন। যে বাড়িতে আমরা শ্যুটিং করেছি, সেখানে সরষে চাষ হচ্ছিল। কিন্তু আমাদের কাজের জন্য সেই সরষে তুলতে না পেরে তাঁদের অর্থনৈতিক ক্ষতি হয়েছে তবুও কেউ কিছু বলেননি।”
এই ছবিতে মোট ৪০জন শিশুশিল্পী রয়েছে। একজন বাদে বাকি সকলকেই বেছে নেওয়া হয়েছে আড়ংঘাটা গ্রামে বসবাসকারী পরিবারগুলি থেকে। তা ছাড়াও ছবির অন্যান্য চরিত্রে দেখা যেতে চলেছে গ্রামবাসীদের। পরিচালক জানান, বাংলা ইন্ডাস্ট্রিতে বহু পরিচালক এবং অভিনেতাও দেশ-বিদেশ অর্থ সংগ্রহ করে দিয়েছেন ছবির জন্য। অন্যদিকে, বীরভূম জেলার জয়দেবের ‘শ্যামসখা’ আশ্রম ছবিটি মুক্তির জন্য অর্থ দিয়ে সাহায্য করেন বলেও তিনি জানিয়েছেন ।
আরও পড়ুন: একাধিক নায়িকার সঙ্গে প্রেম, খরচ জোগাতে রাতভর ট্যাক্সিও চালাতেন রণদীপ
আগামী ২১ অক্টোবর প্রেক্ষাগৃহে মুক্তি পাচ্ছে ‘দুধপিঠের গাছ’। পরিচালকের কথায়, ছোট্ট গৌরের সঙ্গে এই ছবি অতিমারির কালে মানুষকেও আবার নতুন করে স্বপ্ন দেখতে শেখাবে। ভালোবাসা দিয়ে তৈরি এই ছবি হারিয়ে যাওয়া শৈশব ফিরিয়ে দেবে দর্শককে। তিনি আশাবাদী, ‘দুধপিঠের গাছ’ ফের ভাল বাংলা ছবিকে ভালবাসতে শেখাবে গ্রাম বাংলার দর্শকদের।