Rabindranath

Arati Mukherjee: ভাঙা গানের স্মৃতি এখনও ভুলতে পারেন না, সেই আরতির কণ্ঠে ফের আসছে রবীন্দ্রসঙ্গীত

আরতি বলছেন, ‘‘রবীন্দ্রনাথের গান তো বাণীপ্রধান। তাই তাঁর বাণীগৌরব এবং সুর অক্ষুণ্ণ রেখে একটু নতুন ভাবে কিছু গান উপস্থাপিত করতে চাই।’’

Advertisement

ঋতপ্রভ বন্দ্যোপাধ্যায়

কলকাতা শেষ আপডেট: ২৫ অক্টোবর ২০২১ ১৯:৪১
Share:

বাংলার শ্রোতা মাত্রেই স্মরণে রাখতে পারেন, রবীন্দ্রনাথের ‘ভাঙা গান’ আরতি মুখোপাধ্যায়ের কণ্ঠে বিশেষ মাত্রা পেয়েছিল। ফাইল চিত্র

দীর্ঘ দিন পর ফের আরতি মুখোপাধ্যায়ের কণ্ঠে শোনা যাবে রবীন্দ্রসঙ্গীত। মুম্বই থেকে সাতাত্তর ছুঁইছুঁই শিল্পী আনন্দবাজার অনলাইনকে বলছেন, ‘‘আমার শরীর ভাল নেই। পা এবং কোমরের যন্ত্রণায় ভুগছি বেশ কিছু দিন ধরে। বেশি ক্ষণ দাঁড়িয়ে থাকতে পারি না ইদানীং। কিন্তু এই সব প্রতিবন্ধকতা নিয়েও ইচ্ছা রয়েছে রবীন্দ্রনাথের কিছু গান রেকর্ড করার। এই নিয়ে বহু ভাবনাচিন্তা রয়েছে। রবীন্দ্রনাথের গান তো বাণীপ্রধান। তাই তাঁর বাণীগৌরব এবং সুর অক্ষুণ্ণ রেখে একটু নতুন ভাবে কিছু গান নিবেদন করতে চাই।’’

Advertisement

বাংলার শ্রোতা মাত্রেই স্মরণে রাখতে পারেন, রবীন্দ্রনাথের ‘ভাঙা গান’ আরতির কণ্ঠে বিশেষ মাত্রা পেয়েছিল। যদিও সেই গানের রেকর্ড প্রকাশিত হওয়া নিয়ে বিস্তর জটিলতা হয়। কী ঘটেছিল বছর চল্লিশ আগে? আরতি বলছেন, ‘‘১৯৮১ সালে আমি ছ’টি শাস্ত্রীয় সঙ্গীত এবং ছ’টি রবীন্দ্রসঙ্গীত রেকর্ড করি এইচএমভি থেকে। রেকর্ড প্রকাশিত হল ১৯৯৭ কী ’৯৮ সালে। ১৭-১৮ বছর ধরে গানগুলো পড়েছিল। এক বার বর্ধমানের সংস্কৃতি হলে আমার একটা অনুষ্ঠান ছিল। আমি ট্রেনে যাচ্ছিলাম। কামরায় উঠে দেখি কণিকাদি বসে। উনি আমাকে জিজ্ঞাসা করলেন আমি কী করছি। তখন আমি কথার ফাঁকে ওই রেকর্ডটির কথা ওঁকে বলি। জানাই যে গানগুলো কিছুতেই প্রকাশিত হচ্ছে না। যখনই কর্তৃপক্ষকে বলেছি, তখনই ওঁরা এড়িয়ে গিয়েছেন এই বলে যে, বিশ্বভারতী কর্তৃপক্ষ অনুমতি দিচ্ছেন না।’’

এর পর কণিকার উদ্যোগে প্রকাশিত হয় সেই সবক’টি গান। আরতি বলছেন, ‘‘রেকর্ডিংয়ের সময়ে শাস্ত্রীয় সঙ্গীতের বন্দিশগুলোর প্রশিক্ষক ছিলেন এ কানন এবং মালবিকা কানন। আসলে এই গান তো রবীন্দ্রনাথ নিজেই তৈরি করে গিয়েছেন। যেমন, ‘সুখহীন, নিশিদিন’ এসেছে তারানা থেকে। ‘চরণধনি শুনি’ সিন্ধুরা রাগে ধামার। আবার বোলরে পাপিহারা মিয়াঁমল্লারের বিখ্যাত বন্দিশ। সেখান থেকে যে গান রচিত হল, সেটি ‘কোথা যে উধাও হল’। এই গানটির অন্তরাতে মল্লারের সঙ্গে আড়ানা মিশিয়েছিলেন রবীন্দ্রনাথ। 'ডাকো মোরে আজি নিশিথে’ পরোজ রাগের খুব মিষ্টি গান। ছ’টি ক্লাসিকাল বন্দিশ এবং ছ’টি রবীন্দ্রনাথের গান—এই ছিল রেকর্ডে। রবীন্দ্রসঙ্গীতের প্রশিক্ষক ছিলেন সুবিনয় রায়। খুব সুন্দর রেকর্ডিং হয়ে গেল। কিন্তু গান প্রকাশিত হল না। আমিও বলে বলে ক্লান্ত হয়ে গিয়েছিলাম।’’ তার পর? আরতি অতীতচারী, ‘‘কণিকাদি সমস্তটা শুনে খুব রেগে গেলেন। ‘ভাঙা গান’ কলকাতার শিল্পীরা তখনও বড় একটা গাইতেন না। কোনও শাস্ত্রীয় সঙ্গীত শিল্পী বন্দিশ গেয়ে দিতেন। আর অন্য জন রবীন্দ্রসঙ্গীত গাইতেন। কণিকাদি বললেন, ‘আমরা এত দিন গান করছি, এটা তো আমরাই ভাবিনি। তুই এত সুন্দর করে ভাবলি কী করে!’’’

Advertisement
ধরো জনসম্মোহিনী রাগ, পরোজ, রাগের গান—এ সব বড় একটা লোকে গায় না। কিংবা, আঠারো মাত্রার লক্ষ্মী তাল। কে গাইছে বলো তো এই তালের গান?
আরতি মুখোপাধ্যায়
আরও পড়ুন:

বর্তমানে আরতির ভাবনায় কিছু রবীন্দ্রসঙ্গীত রয়েছে।

অন্য কোন গান থেকে উনি অনুপ্রাণিত হয়েছেন, সেই গানগুলোর সঙ্গে রবীন্দ্রসঙ্গীত উপস্থিত করার ইচ্ছা আছে।
আরতি মুখোপাধ্যায়

আরতির কণ্ঠে ‘ভাঙা গান’

এর পর কণিকা নিজে উদ্যোগী হন। আরতি বলছেন, ‘‘তখন নিমাইসাধন বসু ছিলেন বিশ্বভারতীর উপাচার্য। কণিকাদি বললেন, ‘আমি নিমাইবাবুকে বলব। তুই এক বার শান্তিনিকেতনে আয়।’ এর পরে তিনি আর নিমাইবাবু এইচএমভিতে যুগ্ম ভাবে চিঠি দিলেন। ওঁদের জন্যই গানগুলো প্রকাশিত হয়। বিশ্বভারতীর বোর্ডকেও ওঁরা বলেছিলেন।’’

কিন্তু কার জন্য গানগুলো প্রকাশিত হয়নি? আরতির বক্তব্য, ‘‘কারও নাম তো আমি বলতে পারি না। আসলে অনেকেরই সে সময়ে হয়তো মনে হয়েছিল, আমি যে ভাবে যে গানগুলো করেছি, তা প্রকাশিত হলে তাঁদের সমস্যা হতে পারে। নিশ্চয়ই কিছু ব্যাপার ছিল। আমি বলতে পারব না। কণিকাদি সব খুঁড়ে খুঁড়ে বের করেছিলেন। বলেছিলেন, ‘আমি বুঝে গিয়েছি, ব্যাপার কী।’ উনিই বিশ্বভারতী কর্তৃপক্ষকে বলেন, ‘আপনারা বলুন, কে এই গান প্রকাশে বাধা দিয়েছে? আমাদের কাছে কোনও দিন গানগুলো এসেই পৌঁছল় না, অথচ বলা হচ্ছে, আমরা নাকি বাধা দিচ্ছি!’ আমি বম্বেতে কত গান করেছি, কখনও তো এমন দেখিনি। জর্জদার কাছে আমি গান শিখতাম। তিনিও সে সময়ে বলেছিলেন, ‘আমার মেয়েটারে এমন হেনস্থা করল, আমি এটা ভাবতেও পারি না!’’

বর্তমানে আরতির ভাবনায় তেমনই কিছু রবীন্দ্রসঙ্গীত রয়েছে। বলছেন, ‘‘রবীন্দ্রনাথ ধ্রুপদ-ধামার, টপ্পা, ভাঙা গান যেমন রচনা করেছেন, তেমন বেশ কিছু স্বল্পশ্রুত তালেও গান বেঁধেছেন। যেমন আড়খেমটা তালে তিনি যে গানটি বেঁধেছেন কিংবা পিলু-বরোয়াঁ রাগের গান ‘তুমি কোন কাননের ফুল’ —সে সব রাগ-তাল তো লিখে দিয়ে গিয়েছেন নিজেই। জনসম্মোহিনী, পরোজ রাগের গান—এ সব বড় একটা লোকে গায় না। কিংবা, আঠারো মাত্রার লক্ষ্মী তাল। কে গাইছে এই তালের গান? আসলে এখন অনেকে অনেক রকম ভাবে চেষ্টা করছেন। সে সব খারাপ আমি বলছি না। কিন্তু রবীন্দ্রসঙ্গীত গাইতে গেলে ‘গিমিক’ বা চালাকি করলে চলে না। রবীন্দ্রসঙ্গীতের বাণীগৌরব এবং তার লয় খুব গুরুত্বপূর্ণ। যেমন আড়খেমটা তালটির নিজস্ব একটা চলন রয়েছে। এখন সেই তালে নিবদ্ধ কোনও গান যদি অতি ধীর লয়ে গাওয়া হয়, সেই গানের রস ক্ষুণ্ণ হয়, ভাব ক্ষুণ্ণ হয়। রবীন্দ্রনাথ তো কিছু একটা ভেবে গানগুলো বেঁধেছিলেন। সঙ্গীত পরিবেশনের সময় সেটা অনুধাবন করতে হবে।’’

আরতির কথায়, ‘‘‘সুখহীন নিশিদিন’ গানটি যে তারানা থেকে এসেছে, সেই ‘দারা দিম, দারা দিম’-এরও একটা অর্থ রয়েছে। সেই অর্থ, সুর এবং তালের রসে সিক্ত করে রবীন্দ্রনাথ গানটি বেঁধেছিলেন। সেই ভাব অক্ষুণ্ণ রাখাটা জরুরি। এর জন্য শিখতে হবে, বুঝতে হবে। রবীন্দ্রনাথের সৌন্দর্যবোধকে এর জন্য অনুধাবন করা প্রয়োজন। অন্য যে সব গান থেকে তিনি অনুপ্রাণিত হয়েছিলেন, সেই গানগুলোর সঙ্গে রবীন্দ্রসঙ্গীত নিবেদন করার ইচ্ছা আছে।’’

অতিমারিকালে দীর্ঘ দিন কলকাতা আসতে পারেননি। মুম্বইয়ে থেকেই শুরু করেছেন রবীন্দ্রসঙ্গীতের নতুন রেকর্ডের কাজ।

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement