Uttam Kumar

Uttam Kumar: বাবা বললেন সুপ্রিয়ার বাড়ি থেকে গৌরী দেবীর কাছে না ফিরলে ‘দেয়া নেয়া’-র শ্যুট বন্ধ করে দেব

উত্তমকাকু বাবাকে বলেছিলেন, ‘‘আমায় এক মাস সময় দে। এক্ষুণি বেণুকে ছেড়ে যেতে পারব না। সম্পর্ক তৈরি না হলে তোর কথা শুনব।’’

Advertisement

সৈকত মিত্র

কলকাতা শেষ আপডেট: ২৪ জুলাই ২০২১ ০৯:০৬
Share:

উত্তমকুমার এবং শ্যামল মিত্রের বন্ধুত্বের গল্প সৈকত মিত্রের কলমে।

সাল ১৯৪৮। দাদুর কথা শুনে ডাক্তারি না পড়ায় নৈহাটির রাজপ্রসাদের বাড়ি থেকে বিতাড়িত আমার বাবা শ্যামল মিত্র। আশ্রয়ের খোঁজে তিনি এসে উঠেছেন দক্ষিণ কলকাতার চক্রবেরিয়া রোডে। সেখানে বাবার পিসির বাড়ি। পাশের পাড়া গিরিশ মুখার্জি রোড। মহানায়ক উত্তমকুমার তখন অরুণ। বাবার থেকে বছর তিনেকের বড়। সবে পোর্ট ট্রাস্টের চাকরিতে ঢুকেছেন। কিন্তু স্বপ্ন অভিনেতা হওয়ার। আর বাবার জেদ গানের দুনিয়ায় নাম করবেন। সেই সময় রোজ তাঁরা রকে বসে আড্ডা দিতেন। সেই থেকে উত্তমকুমার-শ্যামল মিত্রের বন্ধু্ত্বের শুরু। এই বন্ধুত্ব তাঁরা শেষ দিন পর্যন্ত ধরে রেখেছিলেন।

Advertisement

আমার ঠাকুমা যদিও মহানায়ককে আজীবন অরুণ বলে ডেকেছেন। উত্তম কাকু বাবাকে কখনও ‘বাবু’, কখনও ‘মিত্তির কায়েত’ বলে সম্বোধন করতেন। সারা সপ্তাহ ধরে শ্যুটের পর প্রায় প্রতি শনিবার সন্ধেবেলা বাবারা আসর বসাতেন মহানায়কের বাড়িতে। আড্ডা, গান, খাওয়াদাওয়া মিলিয়ে সে এক হইহই ব্যাপার।

Advertisement

প্রচুর ছবির গান উত্তমকাকুর বাড়িতে বসে তৈরি হয়েছে। মহানায়ক নিজের গান রেকর্ডিং-এর সময় নিজে উপস্থিত থাকতেন। দরকারে পরামর্শও দিতেন। সুযোগ করে আমাদের বাড়িতে চলে আসতেন। মাকে ডেকে বলতেন, ‘‘বৌরানি খুব খিদে পেয়েছে। খাবার দাও।’’ আমাদের বাড়ি থেকেও টিফিন বাক্সে করে তাঁর কাছে মায়ের হাতের রান্না করা বিউলির ডাল, আলু পোস্ত, ভেটকি মাছের কাঁটা চচ্চড়ি গিয়েছে কতবার!

একটি ঘটনা মনে পড়ছে আজ। ‘দেয়া নেয়া’ ছবির শ্যুটের সময় মহানায়ক ভবানীপুরে ছেড়ে চলে এসেছেন ময়রা স্ট্রিটে। সুপ্রিয়া দেবী ওরফে বেণু আন্টির কাছে। বাবা শুনেই মহানায়ককে ডেকে বলেছিলেন, ‘‘উত্তম, ভবানীপুরে ফিরে না গেলে ছবির শ্যুট বন্ধ।’’ সেই মতো সত্যি সত্যিই বাবা বন্ধ করে দিয়েছিলেন শ্যুটিং। আসলে, বরাবর মহানায়কের পাশে বাবা গৌরী দেবীকে দেখে বাবা অভ্যস্ত। সুপ্রিয়া দেবীকে তাই প্রথম দেখায় মানতে পারেননি। তখন উত্তম কাকু বাবাকে বলেছিলেন, ‘‘আমায় এক মাস সময় দে। এখনই বেণুকে ছেড়ে যেতে পারব না। যদি দেখি সম্পর্ক তৈরি হয়নি, তোর কথা শুনব।’’

যথারীতি কাকু কোনও দিনই বেণু আন্টিকে ছাড়তে পারেননি। বাবাও এক সময় তাঁর কথা ফিরিয়ে নেন। আসলে, মহানায়কের প্রতি বেণু আন্টির টান দেখার পরে বাবা আর তাঁকে দূরে সরিয়ে রাখতে পারেননি। তবে বাবা গৌরী দেবী, বেণু আন্টি দু’জনেরই খুব প্রিয় ছিলেন।

এক মাস পরে সব মিটমাট হয়ে যেতেই আবার শ্যুট শুরু। পেশার বাইরেও উত্তমকুমারের উপর শ্যামল মিত্রের ভয়ানক অধিকার বোধ ছিল। পরস্পরের অতি প্রিয় ছিলেন। তাই এক মাত্র আমার বাবা-ই বোধহয় মহানায়ককে এই নির্দেশ দিতে পেরেছিলেন।

(লেখক: সঙ্গীতশিল্পী, সুরকার শ্যামল মিত্রের পুত্র।)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement