(বাঁ দিকে) দেবলীনা কুমার (ডান দিকে) গৌরব চট্টোপাধ্যায়। ছবি: সংগৃহীত।
১৯৫০ সালে ছেলে গৌতম জন্মালেন। ওই বছরই উত্তমকুমারের ইচ্ছেয় ভবানীপুরে গিরিশ মুখার্জি রোডের চট্টোপাধ্যায় পরিবারে কোজাগরী লক্ষ্মীপুজো শুরু হল। ভবানীপুরের চট্টোপাধ্যায় বাড়িতে আজও বনেদিয়ানায় একটুও জরার ছাপ নেই। দেবীপ্রতিমায় আজও উত্তম-জায়া গৌরীদেবীর আদল। আগামী বছর ভবানীপুরের চট্টোপাধ্যায় বাড়ির পুজো পা দেবে ৭৫তম বর্ষে। ২০২৫-এ গৌরব চট্টোপাধ্যায়ের বাবা গৌতমেরও ৭৫তম জন্মবার্ষিকী। তাই এ বছরের কোজাগরী লক্ষ্মীপুজো শেষ হতে না হতেই চট্টোপাধ্যায় বাড়িতে শুরু হয়ে গেল আগামী বছরের প্রস্তুতি। বেঁচে থাকলে উত্তমকুমারের বয়স হত ৯৮ বছর। তিনি থাকলে ৭৫তম বছরের আয়োজন কি আরও বেশি জমকালো হত? আনন্দবাজার অনলাইনকে মনের কথা জানালেন পুত্রবধূ মহুয়া চট্টোপাধ্যায়।
উত্তমকুমার নেই। নেই তাঁর ‘জ্যান্ত লক্ষ্মী’ গৌরীদেবী। পুজোর ঘরে এখন সংকল্পের আসনে জোড় পরে গৌরব চট্টোপাধ্যায়, সঙ্গে অর্ধাঙ্গিনী দেবলীনা কুমার নিষ্ঠার সঙ্গে পালন করে চলেছেন প্রতিটি আচার। দু’জনে মিলেই বাড়ির পুজোর দায়িত্ব কাঁধে তুলে নিয়েছেন, জানালেন গৌরবের মা। শোনা যায়, উত্তমকুমারের নাকি দেবীদর্শন হয়েছিল। পুজোর কিছু আগে ছাদে একটি ছোট্ট মেয়েকে পা ঝুলিয়ে বসে থাকতে দেখেছিলেন। সেই বাড়িতে বাচ্চা মেয়ে বলতে রত্না বন্দ্যোপাধ্যায় (উত্তম কুমারের ভাইঝি), যাঁকে ‘মাঈ’ বলে ডাকতেন উত্তমকুমার। অভিনেতা নাকি ছাদে ও ভাবে ভাইঝিকে পা ঝুলিয়ে বসতে দেখে বৌদির কাছে গিয়ে বলেন, ‘‘বৌদি, মাঈ ছাদে পা ঝুলিয়ে বসে। পড়ে যাবে। ওকে দেখো।’’ মা বলেছিলেন, ‘‘মাঈ তো ঘুমোচ্ছে!’’
এই ঘটনার রেশ কাটার আগেই কোজাগরী লক্ষ্মীপুজোর দু’দিন আগে থেকে নাকি রোজ একটি লক্ষ্মীপেঁচা উত্তমকুমারের বাড়িতে আসতে আরম্ভ করল। দেখতে দেখতে তাঁর নাম, যশ, অর্থ বেড়ে চার গুণ। সেই থেকেই নাকি তাঁর বাড়িতে ঘটা করে শুরু হল লক্ষ্মীপুজো। সেই যে শুরু হল, কোনও বছর ফাঁক পড়েনি পুজোয়। মহুয়ার কথায়, ‘‘তাঁর প্রয়াণের পর থেকে গৌতম ওঁর সাধ্যমতো চেষ্টা করেছিলেন এই পুজোর ধারা বজায় রাখার। এখন গৌরব যতই কাজ থাকুক না কেন, এই দু’দিন ছুটি নেবেই। সকাল থেকে নির্জলা উপোস রাখে। পুজো শেষ করে ভোগ খায়।’’ গৌরবকে যোগ্য সঙ্গত করেন পুত্রবধূ দেবলীনা। বিয়ের পর থেকেই এ বাড়ির পুজোর দায়িত্ব নিজে থেকেই কাঁধে তুলে নিয়েছেন দেবলীনা। তাই বৌমার প্রশংসায় পঞ্চমুখ শাশুড়ি বলেন, ‘‘ও যেন দশভুজার মতো সব দিক সামাল দেয়। ওর বাপের বাড়িতে বড় পুজো হয়। সে দিকটা যেমন সামলায়, তেমনই এই বাড়ির পুজোও সামলায়। কোথাও এক ফোঁটা খুঁত নেই ওর। আমাদের বাড়িতে পুজোর দিন সকালে গঙ্গায় স্নান করে ঘট তুলে আনতে হয়, সেই দায়িত্ব এখন দেবলীনার কাঁধে।’’
উত্তমকুমারের বাড়ির পুজোয় প্রতি বছর প্রতিমা সাজানো হয় নতুন শাড়ি ও সোনার গয়নায়। সেই শাড়ি প্রতি বছরই কেউ না কেউ মানত করেন। বিসর্জনের সময় আবার দেবীকে লালপাড় শাড়ি পরানো হয়। আর এই শাড়িটি প্রতি বছর পরিবারের কোনও মেয়ের হাতে তুলে দেওয়া হয়। ৭৫তম বছরে শাড়ি দেওয়ার দায়িত্ব রয়েছে গৌরবের পিসির ছেলের উপর। তাই আগামী বছর বেনারসিতে দেবীকে সাজানোর ইচ্ছে রয়েছে চট্টোপাধ্যায় পরিবারের। প্রতি বছর হরেক রকমের ভোগের আয়োজন করা হয়। সঙ্গে থাকে পায়েস, চন্দ্রপুলির মতো মিষ্টি। তবে ৭৫তম বছরে পদের তালিকাতেও বেশ কিছু নতুন সংযোজন থাকবে। এমনকি, বিশেষ ভাবে বিসর্জনের পরিকল্পনাও হচ্ছে। জোড়া তিনেক ঢাকের সঙ্গে শোভাযাত্রা বার করার পরিকল্পনা রয়েছে বলেই জানালেন মহুয়াদেবী।
লক্ষ্মীপুজোর দিন বাড়ির মেয়ে-বৌদের সোনার গয়না বেনারসি শাড়িতে সাজার চল রয়েছে। তাই আগামী বছর কোনও এক থিমেই সাজগোজ হবে বলেই জানালেন উত্তমকুমারের পুত্রবধূ। আগামী বছর আরও বেশি স্পেশ্যাল। কারণ, ২০২৫-এর ওই সময়ে গৌরবের বাবারও ৭৫তম জন্মদিন উপলক্ষে জমকালো আয়োজন হবে। উত্তমকুমার বেঁচে থাকলে কি নতুনত্ব আসত পুজোয়? মহুয়ার কথায়, ‘‘ আমার শ্বশুরমশাইয়ের ‘কিং এগ্জ়িট’ হয়েছে। রাজার মতো চলে গেছেন। স্বর্ণাক্ষরে তাঁর নাম লেখা রয়েছে মানুষের মনে। তিনি থাকলে আলাদা কিছু হত কি না, জানি না। তবে গৌরব দাদুর ধারাকে বজায় রেখে এই পুজোকে আরও ভালর দিকে নিয়ে যাওয়ার চেষ্টা করছে। ওর দাদু চাইতেন, লক্ষ্মী যেন বাঁধা থাকেন আমাদের কাছে, সেই চেষ্টাই ও করছে।’’