নায়কের ভূমিকায় অভিনয় করার কথা ছিল উত্তমকুমারের।
বাংলা বলবেন রাজ কপূর! অভিনয়ও করবেন। তা-ও আবার বাংলা ছবিতে! কার সঙ্গে জুটি বেঁধে? স্বয়ং উত্তমকুমার। বলিউড বলে, মুম্বইয়ে বাংলার নায়কের প্রথম ছবি ‘ছোটি সি মুলাকাত’ নাকি মুখ থুবড়ে পড়েছিল রাজের সৌজন্যেই। তাই কি দুই তারকা জুটি বাঁধেননি? জানা নেই। তবে উত্তম-রাজকে নিয়ে বাংলা ছবি তৈরির আনুষ্ঠানিক ঘোষণাও হয়েছিল। সেই ছবির পরিচালনা করার কথা ছিল হৃষীকেশ মুখোপাধ্যায়ের। উত্তমকুমারের ৪২তম প্রয়াণবার্ষিকীতে এমনই অজানা তথ্য আনন্দবাজার অনলাইনকে জানিয়েছেন প্রচারবিদ সুদীপ্ত চন্দ। তাঁর কথায়, ছবির আনুষ্ঠানিক ঘোষিত নাম ‘আনন্দ সংবাদ’। প্রযোজক অসীম দত্ত। নিবেদনে প্রিয়া ফিল্মস। অশোককুমার-বৈজয়ন্তীমালা অভিনীত তপন সিংহের ‘হাটে বাজারে’ও এই প্রযোজনা সংস্থার নিবেদন।
সেই সময় বিভিন্ন পত্র-পত্রিকায় ছবির বিজ্ঞাপনী পোস্টার প্রকাশিত হত। ১৯৬৭ সালে ‘হাটে বাজারে’র বিজ্ঞাপনী প্রচারের উল্টো পিঠে ঘোষিত হয়েছিল ‘আনন্দ সংবাদ’-এর কথা। নায়িকা তখনও ঠিক হয়নি। দুই তারকার মুখ দিয়ে সাজানো সেই পোস্টার দেখে ভীষণ অবাক হয়েছিলেন তখনকার পাঠক-দর্শকেরা। কারণ অনেকেই জানতেন না, রাজ কপূর ভবানীপুরের মিত্র ইন্সটিটিউশনের ছাত্র। পৃথ্বীরাজ কপূর মুম্বই যাওয়ার আগে কালীঘাট অঞ্চলে থাকতেন। তাই শুধু বলা নয়, বাংলা লিখতেও পারতেন রাজ!
হৃষীকেশ মুখোপাধ্যায়ের ছবি মানেই ‘আনন্দ’। হাতেগোনা মানুষ জানেন, ‘আনন্দ সংবাদ’-এর হিন্দি রূপ ‘আনন্দ’! ছবিতে জুটি বাঁধেন রাজেশ খন্না-অমিতাভ বচ্চন। রাজেশ তখন মধ্যগগনে। অমিতাভ সবে উঠছেন। ছবির প্রাণ সলিল চৌধুরীর গান। বাকিটা ইতিহাস। এ রকম একটি ছবি নয়। একমুঠো ছবি নামঘোষণা বা কিছু দিন শ্যুটিংয়ের পর আর শেষ হয়নি। মুক্তির আলোও দেখেনি। সেই ছবিতে নায়কের ভূমিকায় অভিনয় করার কথা ছিল উত্তমকুমারের!
এই ছবিটিও মুক্তির আলো দেখেনি।
সেই তালিকাও নেহাত ছোট নয়। ‘চোখ’ ছবিতে উত্তমকুমারের সঙ্গে জুটি বাঁধার কথা ছিল সাবিত্রী চট্টোপাধ্যায়ের। ‘কান্তার কন্যা’ ছবিটি তৈরি হলে মহানায়কের নায়িকা হতেন কাবেরী বসু। এই জুটির ‘শ্যামলী’, ‘রাইকমল’, ‘আমি সে ও সখা’ জনপ্রিয়। প্রেমেন্দ্র মিত্রের ‘নদীর নামটি অঞ্জনা’ চিত্রায়িত হলে নামভূমিকায় অভিনয় করতেন উত্তমকুমার। উত্তম-তনুজার ‘দেয়া নেয়া’, ‘রাজকুমারী’, ‘অ্যান্টনি ফিরিঙ্গী’ দেখেননি এমন বাঙালি নেই। এঁদের জুটির জনপ্রিয়তা মাথায় রেখেই মহাশ্বেতা দেবীর উপন্যাস ‘যমুনা কে তীর’ তৈরির কথা ভেবেছিলেন পরিচালক সুনীল বন্দ্যোপাধ্যায়। পরে নায়িকা-বদল ঘটে। তনুজার জায়গায় ঠিক হয় অপর্ণা সেন অভিনয় করবেন। পরিচালকের সেই ভাবনা যদিও বাস্তবায়িত হয়নি।
একই ভাবে ১৯৭০ সালে তপন সিংহের ‘কোথায় পাব তারে’ মুক্তির আলোই দেখেনি। কালকূটের জনপ্রিয় উপন্যাসের ছায়ারূপেরও মুখ্য আকর্ষণ উত্তমকুমার। পরিচালক আর উত্তমকুমারের জুটি দর্শকদের উপহার দিয়েছে ‘ঝিন্দের বন্দি’, ‘জতুগৃহ’র মতো ছবি।