এক ছেলের গর্বিত মা তিনি। কাউকে সন্তানের পিতৃ-পরিচয় না জানিয়ে একার দায়িত্বে তাকে পৃথিবীর আলো দেখিয়েছেন। পরে জানিয়েছেন বাবার নাম। বহু ব্যয়ের বিয়েও তাঁর বুদ্ধির জোরে ‘সহবাস’ আখ্যা পেয়েছে! আইন বিয়ে নয়, দক্ষিণেশ্বরের ভবতারিণীকে সাক্ষী রেখে ধর্মত তিনি যশ দাশগুপ্তের স্ত্রী। তিনি নুসরত জাহান। কটাক্ষ-কেচ্ছা-কেলেঙ্কারির ককটেল। সংসার-সন্তান-সিনেমা-রাজনীতি র রূপকথা। কে যেন তাঁকে ডাকত ‘নয়না’ বলে? ৩১ তম জন্মদিনে নুসরত ফিরে দেখবেন তাঁর অতীত?
দেখতে গিয়ে চোখে ভাসবে পুরনো বাড়ি? পার্ক সার্কাসের যে বাড়িতে মহ. শাহ জাহান এবং সুস্মিতা খাতুন তাঁদের তিন মেয়েকে নিয়ে থাকতেন। বাড়িটা ভরে থাকত তিন মেয়ের হুটোপুটিতে। ছোট থেকেই নুসরত বাবার মেয়ে। বাবার গা ঘেঁষে থাকতে ভালবাসতেন। পড়াশোনায় মেধা ছিল। তখন বেশ শান্তই তিনি।
সেই সময়েই নাকি আয়নার সামনে নানা সাজে আসতেন নুসরত। ঘুরে ফিরে নিজেকে দেখতেন। তখন থেকেই কি অভিনয়ের ইচ্ছে ঘুমিয়ে ছিল তাঁর মনে? ২০১০-এ তাঁর ফেয়ার ওয়ান মিস কলকাতা খেতাব জয় সে দিকেই ইঙ্গিত দেয়। তার পরেই তিনি অভিনয় দুনিয়ায় পা রাখেন। জিতের বিপরীতে রাজ চক্রবর্তীর ‘শত্রু’ তাঁর প্রথম ছবি।
ছবি হিট। এই ছবির পরেই রুপোলি পর্দার সোনালি নায়িকা দীঘল, ভাসা ভাসা চোখের মেয়েটি। পরপর দু’বছর তাঁর ঝুলিতে ‘খোকা ৪২০’, ‘খিলাড়ি’, ‘পাওয়ার’, ‘যোদ্ধা’র মতো জনপ্রিয় ছবি। ২০১৭-য় আচমকা এই সাফল্যে ঝাঁকুনি। তাঁর সেই সময়ের প্রেমিক কাদের খান জড়িয়ে পড়েন পার্ক স্ট্রিট ধর্ষণ কাণ্ডে।
রাজ্য রাজনীতি থেকে সাধারণ মানুষ। সবাই জানত প্রেমিককে পালাতে সাহায্য করেছিলেন নুসরত নিজে। তার পরেও কেউ তাঁকে কোনও প্রশ্ন করতে পারেনি! একাধিক আইনজীবী অপরাধীকে আশ্রয় এবং পালাতে সাহায্য করার অভিযোগে তাঁকে গ্রেফতারের আবেদন জানিয়েছিলেন। এক অদৃশ্য শক্তির নির্দেশে প্রশাসন তাঁকে কোনও দিন কোনও প্রশ্ন করেনি!
নুসরত কিন্তু তার পরেও অনায়াস। সৃজিত মুখোপাধ্যায়, বিরসা দাশগুপ্ত, রবি কিনাগী, অরিন্দম শীলের মতো প্রথম সারির পরিচালকের ছবিতে একের পর এক অভিনয় করে গিয়েছেন। কাদের খানের মতোই সে সময়ে নুসরতের জীবনে জড়িয়ে গিয়েছিলেন আরও এক পুরুষ, ভিক্টর ঘোষ। জামশেদপুরের এই ব্যবসায়ীকে নাকি লুকিয়ে বিয়েও করেছিলেন নায়িকা। যদিও এই ঘটনা কোনও কারণে বিশেষ চর্চিত নয়।
নুসরত জীবনে একের পর এক ধাপ উঠেছেন। একের পর এক পুরুষের সঙ্গে জড়িয়েছে তাঁর নাম। টলি পাড়ার গুঞ্জন, প্রথম সারির এক প্রযোজক নাকি নুসরতের প্রেমে স্ত্রীকে বিচ্ছেদ পর্যন্ত দিতে চেয়েছিলেন। নায়িকার সঙ্গে নাম জড়িয়ে গিয়েছে রাজনৈতিক মহলের নেতা-মন্ত্রীদেরও। এর পরেই তাঁর জীবনে আসেন নিখিল জৈন।
নিখিল জৈনের বস্ত্রবিপণির তিনি মুখ ছিলেন বেশ কিছু বছর। একটা সময় নিখিল চোখে হারাতেন তাঁর ‘নয়না’কে। নুসরতের ডাগর চোখ তাঁকে পরিবারের বিরুদ্ধে যাওয়ার সাহস জুগিয়েছিল। বহু অর্থ ব্যয় করে তুরস্কে উড়ে গিয়ে বিয়ের আসর সাজিয়েছিলেন ২০১৯-এর জুনে। ওই বছরেই তিনি তৃণমূল কংগ্রেসের হয়ে সংসদের সদস্য নির্বাচিত হয়েছিলেন।
মুসলিম হয়ে হিন্দুকে বিয়ে করে তিনি বিরাগভাজন হয়েছিলেন হিন্দু এবং মুসলিম ধর্মগুরুদের। তাঁর সিঁদুর, চূড়া, মঙ্গলসূ্ত্র, শাড়ির বিরুদ্ধে তোপ দেগেছিলেন তাঁরা। পরিবর্তে নুসরত রথযাত্রায় রথের রশি টেনেছেন। দুর্গাপুজোয় ঢাক বাজিয়েছেন। বিসর্জনে সিঁদুর খেলেছেন। নিজেকে পরিচয় দিয়েছেন ‘ঈশ্বরের সন্তান’ বলে। তাঁর ভাবনাতেই তিনি সকলের চেয়ে আলাদা।
ধুমধামের এই বিয়ের আয়ু মাত্র দু’বছর! ২০২১-এর জুনেই ফের বিচ্ছেদ। বহুমূল্য বিবাহ নিমেষে তকমা পেয়েছিল সহবাসের! নুসরত এর পরেই যশ দাশগুপ্তের বাহুলগ্ন। সম্প্রতি, নুসরত আর যশ প্রকাশ্যে এনেছেন তাঁদের সম্পর্কের কথা। সেখানে নুসরত স্পষ্ট বলেছেন, যশের কথাতেই তিনি বাড়ি ছেড়ে পালিয়েছিলেন! চলে গিয়েছিলেন তাঁরা রাজস্থানে। তখনও তাঁদের প্রেম আড়ালেই ছিল। এই সময়েই তাঁদের দেখা গিয়েছিল দক্ষিণেশ্বর মন্দিরেও। শাখা-সিঁদুর সে দিনও ছিল নুসরতের অঙ্গে। যুগলের সঙ্গে ছিলেন মদন মিত্র।
যশরতের ভালবাসার ফসল ঈশান। ছেলের নাম পুরসভার ওয়েবসাইটে নথিভুক্ত করার সময়েই প্রকাশ্যে যাবতীয় গোপনীয়তা। বাবার নামে ছেলের নাম, ঈশান জে দাশগুপ্ত রাখেন তিনি। তারও আগে অন্তঃসত্ত্বা নুসরতকে যশের হাত ধরে পার্ক স্ট্রিটে ঘুরতে দেখা গিয়েছে। পরে পুরো ঘটনা প্রকাশ্যে আসার পরে আর আড়াল টানেননি তাঁরা। সন্তানের জন্ম দেওয়া থেকে পুজো, দীপাবলি প্রতিটি উৎসবেই হাতে হাত রেখে উদযাপন করেছেন চুটিয়ে।