‘রসগোল্লা’ ছবি দিয়ে অভিনয়ে পা রেখেছিলেন উজান।
ফিরব বললে ফেরা যায় নাকি? না, ব্যাপারটা সব সময় সে রকম নয়। অক্সফোর্ডে স্নাতকোত্তরের পাঠ শেষ করে দেশে ফিরে এসেছেন উজান। উজান গঙ্গোপাধ্যায়। পরিচালক কৌশিক গঙ্গোপাধ্যায় ও অভিনেত্রী চূর্ণী গঙ্গোপাধ্যায়ের ‘লক্ষ্মী ছেলে’।
সেই নামেই কৌশিক গঙ্গোপাধ্যায় পরিচালিত নতুন ছবি মুক্তি পাচ্ছে আগামী ২৫ অগস্ট। তারই প্রচার অনুষ্ঠানে বৃহস্পতিবার ‘আনন্দবাজার অনলাইন’-এর মুখোমুখি উজান। তাঁর সামনে এখন বিস্তর পরিকল্পনা। উজ্জ্বল ভবিষ্যৎ। তার আগে অবধারিত প্রশ্ন, বাস্তবেও কি উজান এতটাই লক্ষ্মী?
নায়ক বললেন, ‘‘লক্ষ্মী ছেলে আমার থেকেও বেশি লক্ষ্মী। আমার চেয়ে সেন্সিটিভ। সাহসী। মানুষের উপকার সে আমার চেয়ে অনেক বেশি করতে চায়। মনে হয় ওর চেয়ে আমার অনেক কিছু শেখার আছে।’’
বলেই পিছনে থাকা ‘লক্ষ্মী ছেলে’-র পোস্টারের দিকে ফিরলেন উজান। ছবিতে নিজেরই ক্ষত ভরা মুখ। ঈষৎ কঠিন। ধুলোকাদা মাখা শরীরে শক্ত করে আঁকড়ে ধরা এক শিশু। যার চারটি হাত, দুটি পা! সেই লক্ষ্মী ছেলেকে দেখতে দেখতে উজান বললেন, ‘‘এই ছেলেটাও যে সারা ক্ষণ লক্ষ্মী হয়ে থাকবে এমন কোনও নিশ্চয়তা নেই কিন্তু। সবার মধ্যেই উল্টো পিঠ থাকে। আমিও তেমনই।’’
পাভেল পরিচালিত ‘রসগোল্লা’ ছবি দিয়ে অভিনয়ে পা রেখেছিলেন উজান। তার পরই বাবার পরিচালনায় ‘লক্ষ্মী ছেলে’-র নায়ক। করোনা আবহে দীর্ঘ দিন আটকে থাকার পর ছবিটি মুক্তি পাচ্ছে। সে নিয়ে উন্মাদনা তো রয়েছেই। পাশাপাশি চলছে পড়াশোনা। উজান যে অত্যন্ত ভাল ছাত্র, তা সকলেই জানেন। বাবার পরিচালনায় এই প্রথম ছবিতে অভিনয় করছেন, সে দিক দিয়েও স্বপ্নপূরণ। বললেন, “অভিনয় করাটা যে আমার প্যাশন, তা নিয়ে কোনও সন্দেহ নেই। যখনই মঞ্চে উঠি বা ক্যামেরার সামনে আসি, আমি আমার সেরাটুকু দিই। এ রকম পরিস্থিতিতে দাঁড়িয়ে, যখন আমি সদ্য মাস্টার্স করে এসেছি, স্বাভাবিক ভাবেই গবেষণা করার ইচ্ছেটা তৈরি হয়েছে। ডক্টর উজান গাঙ্গুলি হব, ছোট থেকেই ইচ্ছে ছিল। সেটা হয়ে যেতেও পারি পরে।”
লক্ষ্মী ছেলে জানালেন, খুব শীঘ্রই অন্যান্য ছবিতেও তাঁকে দেখা যাবে। নিজেও গল্প লিখে রাখছেন একের পর এক। তাঁরও যে অনেক গল্প বলার আছে! বাবার মতো তিনিও পরিচালনায় আসতে চান। ছোট থেকে বাবার সঙ্গে থেকে লাইট, ক্যামেরা, সেট সব কিছু নিয়েই ধারণা তৈরি হয়ে চলেছে। যত তাড়াতাড়ি সম্ভব পুরো দমে নিজের কাজ শুরু করতে চান। তাঁর কথায়, “এখন আমি অভিনেতা। কিন্তু পরবর্তী কালে আরও দুটো সত্তা নিজের মধ্যে বাঁচিয়ে রাখতে চাই। এক, পরিচালক সত্তা, যে গল্প বলতে চায়। দুই, ছাত্রের সত্তা। যার শেখার ইচ্ছে ফুরোবে না। গবেষণা করার মানসিকতা থাকলে আমার অভিনয়েও সুবিধে হবে। নতুন জিনিস আবিষ্কার করার খিদে চরিত্রগুলোকেও নতুন করে বুঝতে সাহায্য করবে।”
যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয় থেকে ইংরেজি সাহিত্যে স্নাতক উজান অক্সফোর্ডে গবেষণা করতে গিয়েছিলেন ‘সেন্সরশিপ’ নিয়ে। কোনও সাহিত্য বা ছবি পাঠক বা দর্শকের মনে যে অনভুতি সঞ্চার করে, তা দিয়েই কী ভাবে বিন্দু থেকে সিন্ধুর রহস্য উন্মোচন করা সম্ভব তা নিয়েই উজানের গভীরে ডুব দেওয়া। জীবনকেও যে এতটাই গভীরে দেখেন লক্ষ্মী ছেলে!
জানালেন, প্রবাস তাঁকে বিশেষ কিছু শেখায়নি। তবে আবহাওয়া, পরিবেশ গল্প বদলে দেয়। লন্ডনে হাড়হিম করা ঠান্ডায় মাঝরাতে জানলায় বসে গিটারের কর্ড ধরা যায় না। তাই ফিরে এসেছেন কলকাতায়।