আট বছরের কেরিয়ারে ১২টি ছবি। তার মধ্যে মাত্র তিনটি ছবির জন্য উদিতা গোস্বামীকে মনে রেখেছে দর্শক। ‘পাপ’, ‘জেহর’ এবং ‘অক্সর’। এই ছবিগুলির জনপ্রিয়তার অন্যতম কারণ ছিল এর গান।
উদিতার বাবা বারাণসীর। মা ছিলেন শিলঙের মেয়ে। ঠাকুমা ছিলেন নেপালের রাজবংশের মেয়ে। ১৯৮৪ সালের ৯ ফেব্রুয়ারি উদিতার জন্ম দেহরাদূনে।
স্কুল ও কলেজজীবন থেকেই মঞ্চে পারফর্ম করতে ভালবাসতেন উদিতা। ধীরে ধীরে শুরু করেন মডেলিং। আরও ভাল করে মডেলিং করবেন বলে দেহরাদূন থেকে চলে যান দিল্লি।
এম টিভি-র একটি মডেলিং প্রতিযোগিতায় জয়ী হন তিনি। তার পর মডেলিংয়ের সুযোগ পেতে সমস্যা হয়নি। সুপারমডেল হিসেবে তিনি-ই প্রথম জায়গা পেয়েছিলেন বিখ্যাত ‘এল’ পত্রিকায়।
একটি পত্রিকায় উদিতাকে দেখে পছন্দ হয় পূজা ভট্টের। তিনি সে সময় সবে পরিচালনায় এসেছিলেন। ভেবেছিলেন প্রথম ছবিতে নেবেন বিপাশা বসুকে। কিন্তু বিপাশা অনেক বেশি পারিশ্রমিক চাওয়ায় তিনি পিছিয়ে আসেন। এর পর উদিতার সঙ্গে তাঁর কথা চূড়ান্ত হয়।
বক্স অফিসে ‘পাপ’ সফল না হলেও সাহসী নায়িকা হিসেবে জনপ্রিয়তা পেয়েছিলেন উদিতা। সে সময় খোলামেলা ও সাহসী দৃশ্যে অভিনয় করতে স্বচ্ছন্দ, এমন বেশ কিছু নায়িকা ছিলেন ইন্ডাস্ট্রিতে। বিপাশা ছাড়াও তাঁদের মধ্যে অন্যতম ছিলেন তনুশ্রী দত্ত, কোয়েনা মিত্র ও মল্লিকা শেরাওয়াত।
এর পর ‘জেহর’ এবং ‘অক্সর’ ছবিতে কাজ করেন উদিতা। প্রথম ছবির মতো তাঁর দ্বিতীয় ও তৃতীয় ছবিও বাণিজ্যিক দিক থেকে অসফল। ‘জেহর’ ছবিতে প্রথমে কাজ করার কথা ছিল মল্লিকার। কিন্তু ইমরান হসমীর জন্য তিনি সরে আসেন ছবি থেকে।
এই দু’টি ছবিরই গান ছিল সুপারহিট। এর পর বলিউডে আরও কিছু ছবিতে অভিনয় করেছিলেন উদিতা। ‘দিল দিয়া হ্যায়’, ‘অগর’, ‘কিসসে প্যায়ার করুঁ’, ‘ফক্স’, ‘চেজ’, ‘রোক’, ‘মেরে দোস্ত পিকচর অভি বাকি হ্যায়’ এবং ‘ডায়রি অব এ বাটারফ্লাই’ ছবিতে অভিনয় করেছিলেন তিনি।
কিন্তু এর মধ্যে তাঁর কোনও ছবিই বক্স অফিসে সফল হয়নি। এক দিকে তিনি, অন্য দিকে তাঁর প্রেমিক মোহিত সুরীও খারাপ সময়ের মধ্যে দিয়ে যাচ্ছিলেন। মহেশ ভট্টের আত্মীয় মোহিতের সঙ্গে উদিতার পরিচয় তাঁর দ্বিতীয় ছবি ‘জেহর’-এর সময় থেকেই।
মোহিতও পরিচালক হিসেবে নিজের জায়গা পাচ্ছিলেন না ইন্ডাস্ট্রিতে। ‘ওহ লমহে’ এবং ‘আওয়ারাপন’— মোহিতের এই দু’টি ছবি-ই ফ্লপ হয়েছিল। তা ছাড়া কঙ্গনা রানাউতের সঙ্গে তাঁর সম্পর্ক নিয়েও গুঞ্জন শোনা যাচ্ছিল।
কেরিয়ার এবং ব্যক্তিগত জীবন, দু’দিকে ঝড় সামলাতে না পেরে উদিতা বলিউড ছাড়ার সিদ্ধান্ত নেন। তিনি লস অ্যাঞ্জেলসে গিয়ে অভিনয়ের কোর্স করেন। মোহিত সুরীর সঙ্গে তাঁর প্রেমও সে সময়ে ভেঙে গিয়েছিল।
তবে দু’জনের প্রতি দু’জনের দুর্বলতা ছিল। ২০১০-এ মোহিত এ রকমও জানিয়েছিলেন, ‘ক্রুক’ ছবি সফল হলে তিনি উদিতাকে বিয়ে করবেন। কিন্তু সে ছবিও বক্স অফিসে ব্যর্থ হয়। এর পর মোহিতের ছবি ‘মার্ডার টু’ ছিল সুপারহিট।
এই ছবির পরেই মোহিত লস অ্যাঞ্জেলস থেকে উদিতাকে নিয়ে আসেন। আবার জোড়া লাগে ভাঙা সম্পর্ক। তবে উদিতা বুঝেছিলেন, নায়িকা হিসেবে প্রতিষ্ঠা পাওয়া সে মুহূর্তে কঠিন। তাই তিনি ডিজে হওয়ার চেষ্টা করলেন। এক সাক্ষাৎকারে বলেছিলেন, তিনি-ই প্রথম নায়িকা হবেন যিনি ডিজে-দুনিয়াতেও দক্ষ।
২০১৩ সালে মোহিত সুরীর ‘আশিকি টু’ সুপারহিট হয়। সে বছরই তিনি এবং উদিতা বিয়ে করেন। তার আগেই উদিতার নায়িকাজীবন কার্যত শেষ হয়ে গিয়েছিল। তাঁর শেষ ছবি ‘ডায়রি অব এ বাটারফ্লাই’ মুক্তি পেয়েছিল ২০১২ সালে।
২০১৮ সালে প্রকাশ পায়, চার বছর আগে ২০১৪-এ উদিতা তাঁর স্বামীর ফোনে আড়ি পেতেছিলেন। কেন এই কাজ তিনি করিয়েছিলেন, সে কথা অবশ্য প্রকাশিত হয়নি। তবে এই ঘটনা প্রভাব ফেলেনি তাঁদের দাম্পত্যে।
মোহিত-উদিতার মেয়ের জন্ম হয় ২০১৫ সালে। তার তিন বছর পরে জন্ম হয় তাঁদের ছেলের। রুপোলি দুনিয়া ছেড়ে উদিতা এখন ব্যস্ত সংসারের ঘেরাটোপেই। অভিনেত্রীর তুলনায় তাঁর বেশি পরিচিতি ডিজে হিসেবে।
উদিতার তুরুপের তাস ছিল সাহসী দৃশ্যে তাঁর স্বচ্ছন্দ অভিনয়। কিন্তু ইন্ডাস্ট্রিতে বিপাশা বসু, কোয়েনা মিত্র, রিয়া সেন, তনুশ্রী দত্ত, মল্লিকা শেরাওয়াত, অমৃতা অরোরার মতো নায়িকাদের ভিড়ে তিনি হারিয়েই গেলেন।