বলিউডের সাফল্যের জন্য প্রতারণার উদাহরণও আছে অনেক। যেমন ধরুন ১৯৭৭-এর কথা। সে সময় ‘খুন পসিনা’ ছবি তৈরি করছিলেন প্রকাশ মেহরা। তখন অমিতাভ বচ্চন, বিনোদ খন্না দু’জনেই সুপারস্টার। প্রকাশ প্রথমে চিত্রনাট্য নিয়ে গেলেন বিনোদের কাছে। বিনোদের সেই চিত্রনাট্য বেশ পছন্দ হল। ভাল লাগল তাঁকে যে চরিত্র অফার করা হয়েছে, সেটাও।
বিনোদ খন্না ডেট দিয়ে দিলেন ছবির জন্য। এর পর সেকেন্ড লিডের জন্য প্রকাশ গেলেন অমিতাভ বচ্চনের কাছে। তাঁর সঙ্গে অমিতাভের সম্পর্ক ছিল বেশ ভাল।
অমিতাভ চিত্রনাট্য পড়লেন। প্রকাশের কাছে ন্যারেশন শুনলেন। কিন্তু তাঁর নিজের চরিত্রের তুলনায় ভাল লাগল বিনোদ খন্নাকে অফার করা চরিত্র।
প্রকাশকে অনুরোধ করলেন অমিতাভ। যেন বিনোদকে অফার করা চরিত্রটা তাঁকে দেওয়া হয়।
বন্ধুত্বের খাতিরে অমিতাভের জন্য প্রকাশ এর আগেও পক্ষপাতমূলক কাজ করেছেন। তিনি সেটা এ বারও করলেন। পাল্টে দিলেন চিত্রনাট্য। কিন্তু জানালেন না বিনোদ খন্নাকে।
পরিবর্তনের খবর বিনোদ জানলেন শুটিং-এর প্রথম দিন। তিনি বুঝলেন, তাঁর চরিত্রের উপর গুরুত্ব সরিয়ে দেওয়া হয়েছে। তিনি খুব রেগে গেলেন।
বিনোদ সরাসরি প্রকাশকে বললেন। অপারগ প্রকাশ তখন বোঝাতে লাগলেন বিনোদকে। বলতে চাইলেন যে, দু’টি চরিত্রই সমান গুরুত্বপূর্ণ। কিন্তু বিনোদ কোনও কথাই শুনতে নারাজ।
তিনি রাগের চোটে শুটিং ফ্লোর ছেড়ে চলে গেলেন। উঠলেন নিজের গাড়িতে। তার পিছন পিছন গেলেন প্রকাশ মেহরাও। তাঁর হাতে বিনোদের সঙ্গে করা চুক্তিপত্র।
প্রকাশ সেই কাগজ দেখিয়ে বিনোদকে বললেন, তাঁকে এই ছবির শুটিং করতেই হবে। তিনি সেটা করতে বাধ্য।
পরিচালকের মুখে এই কথা শুনে আরও রেগে গেলেন বিনোদ। প্রকাশের সামনেই তিনি ছিঁড়ে ফেললেন চুক্তিপত্র।
অবস্থা এতই জটিল হল যে, রাগের চোটে প্রকাশকে মারতে অবধি গেলেন বিনোদ। সাফ জানালেন, তাঁর চরিত্র পছন্দ হয়নি। তিনি এই ছবিতে অভিনয় করতে পারবেন না।
এই ঘটনার জেরে দ্বিধাবিভক্ত হয়ে যায় ইন্ডাস্ট্রি। একদল বলেন, প্রকাশ মেহরা দোষী। অন্য পক্ষের বক্তব্য ছিল, বিনোদ খন্নাকেই ক্ষমা চাইতে হবে।
শেষে দু’তরফই নরম হয়। বিনোদ খন্না ক্ষমা চান। অন্যদিকে প্রকাশ মেহরা নিজের ভুল স্বীকার করেন। নতুন করে চিত্রনাট্য লেখা হয়। তবে পরিচালনা করেন প্রকাশের সহকারী পরিচালক রাকেশ কুমার।
বক্সঅফিসে সুপারহিট হয় ‘খুন পসিনা’। ছবির সাফল্যের মূলধন ছিল অমিতাভ ও বিনোদের জোরালো অভিনয়। এই ছবি নিয়ে তিক্ততা অবশ্য বেশি দিন প্রভাব ফেলেনি অমিতাভ-বিনোদের ব্যক্তিগত সম্পর্কে। (ছবি: আর্কাইভ)