বড় ব্যানার থেকে লঞ্চ, বিপরীতে নামী অভিনেতা, ভিন্ন ধারার ছবিতেও নিজের অভিনয় দক্ষতাকে প্রমাণ করেও ইন্ডাস্ট্রি থেকে রাতারাতি হারিয়ে গিয়েছিলেন বলিপাড়ার ‘বেবি ফেসড’ অভিনেত্রী টিউলিপ জোশী। যে যশরাজ ব্যানার তাঁকে একদা লঞ্চ করেছিল গ্ল্যামার দুনিয়ায়, তাঁরাও সরে গিয়েছিলেন পাশ থেকে।
মুম্বইয়ের এক গুজরাতি পরিবারে ১৯৭৯ সালের ১১ সেপ্টেম্বর জন্ম টিউলিপের। বাবা ছিলেন গুজরাতি। মা আর্মেনিয়ান। টিউলিপের মা এক পাঁচ তাঁরা হোটেলে রিসেপশনিস্টের কাজ করতেন। ব্যবসায়ী বাবা সেই হোটেলেই ব্যবসার কাজে গিয়ে প্রেমে পড়েন টিউলিপের মায়ের। বেশ কিছু দিন প্রেমের পর বিয়ে করেন তাঁরা।
ছোটবেলাটা মুম্বইয়েই কেটেছে তাঁর। প্রথমে যমুনাবাই স্কুল তারপর মিঠিবাই কলেজ থেকে রসায়নে স্নাতক হন টিউলিপ। আর কলেজে পড়ার সময় থেকেই তাঁর ‘বেবি ফেস’-এর জন্য টিউলিপের কাছে আসতে থাকে মডেলিংয়ের অফার।
প্রথমদিকে টিউলিপের মডেল হওয়ার কোনও বাসনাই ছিল না। পড়াশোনাতে ভালই ছিলেন। তাই ইচ্ছে ছিল সে দিকেই এগোবেন। কিন্তু ভাগ্য অন্য গল্প লিখছিল তাঁর জন্য। গ্ল্যামার জগতের হাতছানি উপেক্ষা করতে পারলেন না তিনি।
মডেলিং থেকে ক্রমশ তিনি পা দেন বিজ্ঞাপনের দুনিয়াতেও। বিভিন্ন বিখ্যাত অ্যাডের মুখ হয়ে ওঠেন তিনি। কিন্তু বলিউড তখনও দূর অস্ত্।
সাল ২০০০। মিস ইন্ডিয়া প্রতিযোগিতা শুরু হবে। টিউলিপ ভাবলেন বলিউডে যদি জায়গা পাকা করতে হয়, তাহলে বিউটি কনটেস্টের অংশীদার হওয়া বুদ্ধিমানের কাজ। কারণ, ঐশ্বর্যা-সুস্মিতারাও কয়েক বছর আগে যে একই কাজ করেছিলেন।
যেমন ভাবা তেমন কাজ। কিন্তু হায়! মিস ইন্ডিয়া জেতা তো দূর। ফাইনালিস্টের তালিকাতেও নাম ছিল না টিউলিপের। অথচ সে বছরই লারা দত্ত ‘মিস ইউনিভার্স’, প্রিয়ঙ্কা চোপড়া ‘মিস ওয়ার্ল্ড’ এবং দিয়া মির্জা ‘মিস এশিয়া’র খেতাব জিতেছিলেন। তাই টিউলিপেরও বলিউডে উড়ানের ইচ্ছে সে সময়ের জন্য স্থগিত হয়ে যায়।
এর ঠিক দু’বছর বাদে টিউলিপের প্রিয় বন্ধুর বিয়ে। সম্বন্ধ হয়েছে মুম্বইয়ের বিখ্যাত পরিচালকের ছেলের সঙ্গে। হ্যাঁ, ঠিক ধরেছেন পাত্র যশ চোপড়ার পুত্র আদিত্য চোপড়া। পাত্রী পায়েল খন্না। টিউলিপও নিমন্ত্রিত।
আদিত্য-পায়েলের বিয়েতেই প্রথম টিউলিপকে দেখেন যশ। আর দেখা মাত্রই যশ চোপড়া ঠিক করে নেন এই মেয়েকে যশরাজ ব্যানারে লঞ্চ করবেন তিনি। কিন্তু সে সময় বলিউডের সবচেয়ে বড় ব্যানারে নতুন কাউকে লঞ্চ করব বললেই তো আর করা যায় না। দরকার উপযুক্ত গ্রুমিং। শুরু হল টিউলিপের গ্রুমিং সেশন।
যশ ভেবেছিলেন টিউলিপ নামটা দর্শকদের কাছে খুব একটা আকর্ষণীয় হবে না। সে জন্য টিউলিপের নাম বদলে তিনি রাখেন সঞ্জনা। বেশ কিছু দিন গ্রুমিং এর পর শুটিং শুরু হয়। ছবির নাম ‘মেরে ইয়ার কি শাদি’। বিপরীতে জিমি শেরগিল এবং উদয় চোপড়া।
কিন্তু সেই ছবি বক্স অফিসে খুব একটা সাফল্য পেলনা। যশ চোপড়ার ব্যানার দিয়ে নিজের বলিউড কেরিয়ার শুরু করেও আঁচড় কাটতে পারলেন না টিউলিপ। এর ঠিক এক বছর পর গ্ল্যামার ছবি ছেড়ে ‘মাত্রুভূমি’ ছবিতে অভিনয় করেন টিউলিপ। সেই ছবিতে টিউলিপের অভিনয়ের ভূয়সী প্রশংসা হয়। তিনি যে শুধুই গ্ল্যামারাস নায়িকা নন একজন সুদক্ষ অভিনেত্রীও, প্রমাণ করেন টিউলিপ।
এর পর ‘দিল মাঙ্গে মোর’, ‘ধোঁকা’, ‘শূন্য’ প্রভৃতি ছবিতে অভিনয় করলেও বক্স অফিস অধরাই থেকে যায় টিউলিপের জীবনে। এ দিকে তখন আদিত্য চোপড়ার সঙ্গে টিউলিপের বেস্ট ফ্রেন্ড পায়েলের বিচ্ছেদ হবে হবে করছে। সেই সময় টিউলিপের উপর থেকেও সাহায্যের হাত উঠিয়ে নেয় যশরাজ ফিল্মস।
এর পর দু’-তিনটে ছবি করলেও আর ঘুরে দাঁড়াতে পারেননি টিউলিপ। গ্ল্যামারের অন্ধকারে ক্রমশ তলিয়ে যায় তাঁর কেরিয়ার। অর্থ তছরুপের অভিযোগে তাঁর বিরুদ্ধে এফআইআরও করে এক প্রযোজনা সংস্থা।
বেশ কিছু বছর পর শোনা যায়, বিয়ে করেছেন টিউলিপ। তাঁর স্বামী ক্যাপ্টেন নাইয়ার প্রাক্তন আর্মি অফিসার। নাইয়ার এবং টিউলিপকে নিয়েও ট্রোল হয়েছিল সোশ্যাল মিডিয়ায়। সুন্দরতার নিরিখে ক্যাপ্টেন নাইয়ার নাকি টিউলিপের যোগ্য নন, এমনটাই বলেছিলেন নেটাগরিকদের একাংশ।
তবে সে সবকে পাত্তা না দিয়ে আপাতত গ্ল্যামার জগত থেকে শতহস্ত দূরে স্বামীকে নিয়ে সুখেই ঘর করছেন টিউলিপ। এখন তিনি যোগ শেখান। মাঝে ইনস্টাগ্রামে যোগিনীর বেশে তাঁর ছবি দেখে অনেকে ভেবেছিল তিনি সাধক হয়ে গিয়েছেন।
টিউলিপদের রয়েছে পারিবারিক ব্যবসাও। তাঁদের কোম্পানির বাৎসরিক আয় প্রায় কোটি টাকা। তবে সোনালি জগত থেকে দূরে গিয়েও আফসোস নেই টিউলিপের। নিজের মতো করেই সংসার সাজিয়েছেন তিনি।