তেলুগু ফিল্ম ‘ভূমি কসম’-এ মাত্র তিন মিনিটের একটা নাচের রোল পেয়েছিলেন জয়াপ্রদা। তার জন্য পরিচালক তাঁকে ১০ টাকা দিয়েছিলেন। ফিল্মের সেই তিন মিনিটই যথেষ্ট ছিল জয়াপ্রদার কাছে।
ওই তিন মিনিটের পারফরম্যান্সই তাঁকে সবার নজরে এনে দিল। পর্দায় দর্শক তাঁকে এতটাই পছন্দ করতে শুরু করলেন যে, এর পরই তাঁর কাছে পরিচালকদের প্রস্তাব আসতে শুরু করে।
ফিল্মে যতটা নাম করেছেন, কেরিয়ার নিয়ে যতটা খুশি ছিলেন তিনি, বা যতটা পরিপূর্ণ ছিল তাঁর কর্মজীবন, ঠিক ততটাই অপরিপূর্ণ রয়ে গিয়েছে তাঁর ব্যক্তিগত জীবন।
যাঁকে ভালবেসে ঘর ছেড়েছিলেন, তিনি কিন্তু ঘর ছেড়ে জয়প্রদার হাত ধরে বেরিয়ে আসেননি। তাই বিয়ে করেও জয়াপ্রদা আইনত স্ত্রী হতে পারেননি কোনও দিনই। স্বামীর সংসারে সারা জীবন তৃতীয় ব্যক্তি হয়েই রয়ে গিয়েছেন।
জয়াপ্রদার আসল নাম ললিতা রানি। অন্ধ্রপ্রদেশের রাজামুন্দ্রী শহরে জন্ম জয়াপ্রদার। বাবা কৃষ্ণ রাও ছিলেন তেলুগু ফিল্মের প্রযোজক। ছোটবেলা থেকে তাঁর মায়ের ইচ্ছা ছিল মেয়েকে বড়পর্দায় দেখা। তাঁর জন্য মেয়েকে ছোট থেকেই নাচের ক্লাসে ভর্তি করিয়ে দেন।
স্কুলের একটা নাচের অনুষ্ঠানে তাঁকে দেখে ওই তেলুগু ফিল্মে তিন মিনিটের নাচের দৃশ্যের জন্য সই করান পরিচালক। পাঁচটি আলাদা ভাষার ফিল্মে অভিনয় করেছেন তিনি।
তাঁর অভিনয় এবং তাঁর রূপ প্রতিটা ফিল্মের জন্য পরিচালকদের কাছে তাঁকেই প্রথম পছন্দ করে তুলেছিল। কেরিয়ারের দিক থেকে ১৯৮৫ সাল ছিল জয়াপ্রদার জীবনে সবচেয়ে ভাল বছর। সেই সময় বলিউডের সর্বোচ্চ পারিশ্রমিক নেওয়া অভিনেত্রী হয়ে উঠেছিলেন তিনি।
এরপরই আয়কর দফতরের নজরে পড়েন তিনি। কর সংক্রান্ত একাধিক অভিযোগ থেকে নিষ্কৃতি পেতে অনেক কাঠখড় পোড়াতে হয় তাঁকে। সে সময়ই তাঁকে মানসিক সমর্থন দিতে শুরু করেন পরিচালক শ্রীকান্ত নাহাতা।
তখন ঢালের মতো সমস্ত বিপদ থেকে তাঁকে রক্ষা করতেন শ্রীকান্ত। দু’জনে খুব ভাল বন্ধু হয়ে যান। ক্রমে তাঁদের মধ্যে ঘনিষ্ঠতা বাড়তে শুরু করে। কিন্তু তাঁদের প্রেমে বাধা ছিল শ্রীকান্তের পরিবার।
শ্রীকান্ত আগে থেকেই বিবাহিত ছিলেন। তাঁর তিন সন্তানও ছিল। কিন্তু শ্রীকান্তকে একটাই ভালবেসে ফেলেছিলেন যে, জয়াপ্রদা সব জেনেও পিছিয়ে আসতে পারেননি। দু’জনে পরিবারের বিরুদ্ধে গিয়ে গোপনে বিয়েও করে ফেলেন।
প্রথম প্রথম জয়ার বিশ্বাস ছিল, শ্রীকান্ত তাঁর প্রথম স্ত্রীকে ছেড়ে তাঁর কাছে চলে আসবেন। তাঁদের সম্পর্ক আইনি স্বীকৃতি পাবে। কিন্তু তা আর হয়নি। শ্রীকান্ত কোনওদিন তাঁর স্ত্রীকে ডিভোর্স দেননি। বাড়ি ছেড়ে পুরোপুরি জয়ার কাছেও চলে আসেননি।
আরও আশ্চর্যের বিষয় ছিল, শ্রীকান্তের স্ত্রী এই বিষয় নিয়ে কোনও উচ্চবাচ্য করেননি। একসময় শোনা গিয়েছিল, জয়া আর শ্রীকান্তের স্ত্রীর মধ্যে নাকি সমঝোতা হয়েছে, শ্রীকান্ত তাঁদের দু’জনকেই সমান সময় দেবেন। কিন্তু এই বিষয়ও কেউ কোনও দিন মুখ খোলেননি।
স্ত্রীর মর্যাদা না পাওয়ায় কোনওদিন শ্রীকান্তের সন্তানের মা-ও হতে পারেননি জয়াপ্রদা। মাতৃত্ব উপভোগ করার জন্য বোনের ছেলেকে দত্তক নিয়েছিলেন তিনি। শ্রীকান্তের সঙ্গে সম্পর্ক তাঁর কেরিয়ারেও প্রভাব ফেলেছিল ভীষণ ভাবে। পরে ফিল্ম ছেড়ে রাজনীতিতে যোগ দেন তিনি।
তবে যতই ভালবাসা পেয়ে থাকুন না কেন, শ্রীকান্তের সংসারে ব্রাত্যই থেকে গিয়েছেন জয়াপ্রদা। সারাজীবন শ্রীকান্তের জীবনে তৃতীয় ব্যক্তি হিসাবেই রয়ে গিয়েছেন।