রূপঙ্কর ও অঙ্কুশ
পনেরো হাজারে সেলেব সেলফি!
সিনেমায় ক্যামিও চরিত্র থাকে। যেখানে অভিনেতারা নিজস্ব ভূমিকাতেই উপস্থিত হন। আপনার বাড়ির প্রাইভেট অনুষ্ঠানেও কিন্তু সেলেবরা ক্যামিও করতে পারেন। অবশ্যই পারিশ্রমিকের বিনিময়ে। ১৫ হাজার থেকে ১ লক্ষের মধ্যে ঘোরাফেরা করে পারিশ্রমিকের অঙ্কটা।
শপিং মল, রেস্তরাঁয় কোনও সেলিব্রিটির সঙ্গে দেখা হলেই আসে সেলফি তোলার অনুরোধ। কিন্তু সে তো ক্ষণিকের মোলাকাত। বিয়েবাড়ি, জন্মদিনের অনুষ্ঠানে আধঘণ্টা বা একঘণ্টার জন্য তারকাদের সঙ্গ পাওয়া এখন আশ্চর্যের নয়। টালিগঞ্জের অনেক অভিনেতাই পেশাগতভাবে এই কাজটা করে থাকেন।
ব্যক্তিগত পার্টি, বিয়েতে সেলেব্রিটিরা এসে অন্যান্য অতিথিদের সঙ্গে কথা বলবেন। ছবি তুলবেন। তিনি যেন অতিথি নন, বাড়িরই লোক। ঘরোয়া অনুষ্ঠানে সেলেব্রিটিরা এলে গৃহকর্তার সামাজিক মর্যাদা বাড়ে।
বিক্রম
অনেক তারকা আধঘণ্টা-পঁয়তাল্লিশ মিনিটের জন্য এই অ্যাপিয়ারেন্স দিয়ে থাকেন। অধিকাংশই এই বিষয়ে মুখ খুলতে নারাজ। শাহরুখ খান পর্যন্ত প্রাইভেট পার্টিতে গিয়ে নাচেন। তা হলে টলিউডের সেলেবদের এত রাখঢাক গুড়গুড় কেন?
অভিনেতা বিক্রম চট্টোপাধ্যায় বলছেন, ‘‘ট্রেন্ডটা সবে শুরু হয়েছে। কিছুদিন গেলে হয়তো জড়তা কেটে যাবে।’’ বিক্রম নিজেও যান। বললেনও সে কথা, ‘‘একটি অনুষ্ঠানে টলিউডের ১৪-১৫ জন নামী তারকাকে দেখেছিলাম!’’
সাধারণত ইভেন্ট ম্যানেজারের মাধ্যমে যোগাযোগগুলো হয়ে থাকে। অনেক সময় নেতা কিংবা প্রভাবশালী ব্যক্তিদের তরফে তারকাদের কাছে সরাসরি প্রস্তাব আসে।
ঠিক কী করতে হয় এই অনুষ্ঠানগুলোয়? সবচেয়ে বেশি আসে তারকার সঙ্গে সেলফি তোলার অনুরোধ। নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক ছোট পরদার এক নায়িকার কথায়, ‘‘সেলেবদের নিয়ে সাধারণ মানুষ কৌতূহলী। তাই আমরা কীভাবে কাজ করি, ব্যক্তিগত জীবন কেমন তাঁরা জানতে চান।’’ বিক্রম যেমন বলছেন, ‘‘আমাদের এখানে সিনেমা করে তো বেশি টাকা পাওয়া যায় না। ইভেন্ট আর শো করেই আসল টাকা। এখন প্রাইভেট পার্টিতে অ্যাটেনডেন্স দিলেও ভাল টাকা পাওয়া যাচ্ছে। লাইফস্টাইল বজায় রাখার জন্য এসব করায় আমি কোনও আপত্তি দেখি না।’’
তবে অনেকের এই ধরনের পার্টিতে অস্বস্তি হয়। মিমি চক্রবর্তী বলছেন, ‘‘কোনও ইভেন্টে পারফর্ম করতে হলে ঠিক আছে। কিন্তু ওই প্রাইভেট ফাংশনে গিয়ে হেসে-হেসে অচেনা লোকজনের সঙ্গে কথা বলতে পারব না।’’
ইভেন্ট আয়োজক মুসিবুর রহমান বলছেন, ‘‘বিত্তবান শ্রেণিই তারকাদের অ্যাফোর্ড করতে পারেন।’’
বিয়েবাড়ি, অন্নপ্রাশন বা জন্মদিনে উপস্থিত থাকার জন্য প্রায়ই ফোন আসে রূপঙ্করের কাছে। অনুরোধটা এরকম… ‘‘দাদা আমার মেয়ের বিয়ে। গায়ে হলুদ থেকে বিয়ে অবধি প্লিজ একটু থাকবেন। গান গাইতে হবে না। শুধু ঘুরে বেড়াবেন। আপনার সাম্মানিক আমরা পাঠিয়ে দেব।’’ গান ছাড়া এরকম অনুরোধে কোনওদিনই রাজি হননি রূপঙ্কর। তবে একবার একটা ফোন এসেছিল ‘‘আমার মেয়ে অসুস্থ। অকারণে ওর দম বন্ধ হয়ে আসে। আপনার গান শুনলে ও নিশ্বাস নিতে পারে। একবার আমাদের বাড়িতে আসবেন?’’ গিয়েছিলেন রূপঙ্কর। পারিশ্রমিকের প্রশ্নই ওঠে না।
অভিনেতাদের জনপ্রিয়তা অনুযায়ী পারিশ্রমিক নির্ধারিত হয়। ধারাবাহিকের লিড চরিত্র হলে টাকা বেশি। সিনেমার অভিনেতারা এক থেকে দে়ড় লক্ষ টাকার কাছাকাছি নিয়ে থাকেন। অঙ্কুশ, নুসরত, সায়ন্তিকা...এই ধরনের পার্টিতে একাধিকবার গিয়েছেন। অঙ্কুশের কথায়, ‘‘ব্যক্তিগত অনুষ্ঠানে দু’বার গিয়েছি। কিন্তু একটু অস্বস্তি হয়। অচেনা লোকজনের সঙ্গে খুব পরিচিতের মতো করে কথা বলতে হয়!’’ ব্যক্তিগত জীবন ব্যক্তিগত থাকে না। তারকা হওয়ার বিড়ম্বনা তো এটাই। যদিও বিনিময়ে মেলে অর্থ।