মনামি ঘোষ ও সোনালি চৌধুরী
রুপোলি পর্দায় কয়েক জন অভিনেতা-অভিনেত্রীকে প্রশ্ন করতে ইচ্ছে করে, এত বছর পরেও কী করে বয়সটাকে একই জায়গায় আটকে রেখেছেন? অবশ্য উলটোও হয়। এ মা! এই তো ক’বছর হল ইন্ডাস্ট্রিতে এসেছে, এর মধ্যেই মায়ের চরিত্রে! প্রথম রহস্যের উত্তর খোঁজা যাক। এই ব্যাপারে যিনি প্রাতঃস্মরণীয়, তিনি ভারতীয় সিনেমার কিংবদন্তি অভিনেত্রী রেখা। কিন্তু বাংলা ইন্ডাস্ট্রিতেও এমন কিছু তারকা আছেন যাঁরা ১৫-২০ বছর বা তারও বেশি সময় টলিউডে কাটিয়ে ফেলেছেন। এবং এখনও অনায়াসে বাবা-মা-জ্যাঠা-জেঠির চরিত্র এড়িয়ে যেতে পারছেন। কেউ তো এখনও রমরমিয়ে করছেন মুখ্য চরিত্র। এঁদের পুরনো-নতুন ছবি দেখে সালের ফারাক করা কঠিন। লম্বা সময় ধরে নিজেকে প্রায় একই রকম রাখা মোটেও সহজ কাজ নয়। কড়া ডায়েট না কি ঘণ্টার পর ঘণ্টা জিমে কাটানো না কি প্রচুর ঘুম বা বোতল বোতল জল পান? জিনগত কারণ নয় তো? চেহারা ধরে রাখার মূলমন্ত্র কী? আনন্দ প্লাসের কাছে এই প্রশ্নের উত্তর দিলেন সেই ‘অন্যতম’সেলেবরা।
টোটা রায়চৌধুরী
অনেক ছোট থেকেই আমি ডিসিপ্লিনড। হস্টেলে থাকতাম তো। আর ছিলাম ফুটবল পাগল। ভেবেছিলাম খেলোয়াড় হব। ভাল ফুটবল খেলার জন্য স্পিডের দরকার, সেটা বাড়ানোর জন্য অ্যাথলেটিকস শুরু করলাম। পাশাপাশি মার্শাল আর্ট। প্রথম ছবির সময় আমার কোমরের মাপ ছিল ৩২ ইঞ্চি। সেই সময় যিনি আমার পোশাকের মাপ নিয়েছিলেন, তিনি বলেছিলেন, ‘সকলেরই দু’-চারটে ছবি করার পর ৩২টা ৩৯ হয়ে যায়।’ সে দিন তাঁকে বলেছিলাম, ‘ভবিষ্যতে কতটা কী করতে পারব জানি না। কিন্তু আজীবন আমার কোমর ৩২-ই থাকবে।’ তাই আছে!
কল টাইম যখনই হোক না কেন, আমি রোজ আধঘণ্টা জিমে এক্সারসাইজ করবই। সেটা ভোর পাঁচটা হতে পারে বা রাত দশটা! পাশাপাশি কড়া ডায়েটও মেনে চলি।
মনামি ঘোষ
বয়স ধরে রাখার জন্য বা কমবয়সি দেখানোর জন্য কী করতে হয়, তা আমার জানা নেই। একজন শিল্পীকে যতটা চর্চা করতে হয়, আমিও তাই করি। সম্প্রতি জিমে যাওয়া শুরু করেছি। এক মাসও হয়নি। খবরটা শুনে আমার এক বন্ধু মজা করে বলেছেন, ‘তুমি জিমে যেও না। এত সুন্দর চেহারার পুরো কৃতিত্ব জিম নিয়ে নেবে।’ আমার এই লুক বা চেহারা ধরে রাখার জন্য বলার মতো সত্যিই কিছু করি না। এটা এক্কেবারে ঈশ্বরপ্রদত্ত। তবে ছোটবেলায় নাচ শিখতাম। বহু বছর নিয়মিত নাচ করেছি। এক সময় যোগ ব্যায়ামও করতাম। যোগ ব্যায়ামে আমি জেলার সেরাও হয়েছি। রাজ্যস্তরের প্রতিযোগিতায় গিয়েছি। কিন্তু এখন নিয়মিত নাচ বা যোগ ব্যায়াম কোনওটাই করি না। হয়তো ছোটবেলার ফল এখনও পাচ্ছি। কোনও নির্দিষ্ট ডায়েটও ফলো করি না। যা ভাল লাগে তাই খাই, তবে পরিমিত। সারাক্ষণ বিউটি পার্লারে পড়ে থাকি না। ছোট থেকে দেখেছি মা, পিসি কখনও বেসন-দই, কখনও হলুদ-মধু ব্যবহার করতেন ত্বকের জন্য, আমি মাঝেমধ্যে তাই করি।
আরও পড়ুন: ‘পরিচালকের সঙ্গে নয়, সংসারটা একদম অন্য মানুষের সঙ্গে’
সোনালি চৌধুরী
আমার মন্ত্র নিজেকে আপডেট রাখা। চেষ্টা করি সব সময় অভিনয় সম্পর্কে, লুক সম্পর্কে আপডেটেড থাকতে। না হলে পিছিয়ে পড়তে হবে। সত্যি বলতে কী, আমি যখন এই ইন্ডাস্ট্রিতে এসেছিলাম, তখন একটু গোলগালই ছিলাম। ঘটি বাড়ির মেয়ে তো, আলুপোস্ত খেতে ভালবাসি। কিন্তু সে সব কন্ট্রোল করতে হয়েছে। সবই খাই, কিন্তু পরিমাণে কম। আমার দুর্বলতা মিষ্টি। ইচ্ছে করলেও রোজ খাই না। শারীরচর্চার জন্য আমার কাছে বেস্ট অপশন নাচ। ছোট থেকেই নিয়মিত নাচ করি পাশাপাশি যোগ ব্যায়াম। এ সবের পাশাপাশি লক্ষ রাখি, মেকআপ ও হেয়ার স্টাইলের প্রতি। যেটা যখন ইন, সেটাই ফলো করার চেষ্টা করি। তাই হয়তো পরিচালক-প্রযোজকরা আজও আমাকে মা–কাকিমার চরিত্র অফার করেন না। চারদিকে এত নতুন নতুন পোশাকের হাতছানি, চেহারা না ঠিক রেখে পারা যায় বলুন!
অরুণিমা ঘোষ
তরতাজা থাকার ক্রেডিট আমার বাবা-মাকে দেব। দু’জনেই স্লিম ও সুস্বাস্থ্যের অধিকারী। আমি ওঁদের কাছ থেকেই পেয়েছি। সপ্তাহে তিন দিন ওয়র্কআউট ও যোগ ব্যায়াম করি। বেশি ভাত খাই না বটে, তবে মিষ্টি খেতে খুব ভালবাসি। যখন ইচ্ছে করে, টানা দু’দিন গপগপ করে রাজভোগ, পেস্ট্রি যা পাই খেয়ে নিই। তার পর হয়তো তিন সপ্তাহ মিষ্টি ছঁুয়েও দেখব না। রূপচর্চা নিয়েও আমি বেশ উদাসীন। অবশ্য পর্যাপ্ত ঘুমোই, আর প্রচুর জল খাই।
ভাস্বর চট্টোপাধ্যায়
রহস্যটা কী তা বলা মুশকিল। কিছুটা জিনগত তো বটেই। তবে আমি বরাবর একটা নিয়মের মধ্য দিয়েই চলি। সকালে সূর্যপ্রণাম করি। সপ্তাহে তিন দিন জিমে যাই। আমি খেতে খুব ভালবাসি, বিশেষ করে মিষ্টি। কিন্তু তাই বলে কাছা খুলে খাই না! আমার ডায়েটে ভাত থাকলেও তা এক মুঠোর বেশি নয়। আজ প্রায় বহু বছর হয়ে গেল সেটে বাড়ির তৈরি খাবারই নিয়ে যাই। পারতপক্ষে বাইরে খাই না। খেলেও সিলেক্টেড রেস্তরাঁতেই যাই। পার্টিতে গেলেও রাত দশটার মধ্যে বাড়ি ফিরে আসি। তাতে ডিনার হোক বা না হোক। রোজ সাড়ে দশটার মধ্যে ঘুমিয়ে পড়ি। সিরিয়ালে নাইট শিফট করি না। সাড়ে দশটা থেকে সাড়ে ছ’টা পর্যন্ত আমার ঘুম চাই-ই চাই। ‘মা’ সিরিয়ালে আমি বাবার ভূমিকায় অভিনয় করেছিলাম। ভয় ছিল, বাবার তকমা না পড়ে যায়! তার পর আর কোনও বাবার চরিত্রে অভিনয় করতে হয়নি। লম্বা খেলতে গেলে সচেতন তো থাকতেই হবে। এ ব্যাপারে আমার অনুপ্রেরণা উত্তমকুমার ও প্রসেনজিৎ চট্টোপাধ্যায়।
রিমঝিম মিত্র
অনেকেই বলে, আমি প্রায় ১০ বছর ধরে একই রকম দেখতে রয়ে গিয়েছি। এটা কিছুটা জিনগত কারণে। আমার মা-দাদু-দিদিমা প্রত্যেকেই আমার চোখে ভীষণ গ্ল্যামারাস ছিলেন। মা যোগাসন করতেন, বাবা খেলোয়াড় ছিলেন। আমি অবশ্য কোনওটাই করি না। ওঁদের পরিশ্রমের ফল আমি ভোগ করছি। এক সময় অনেক বছর ধরে নাচ শিখেছি, কিন্তু এখন আর নিয়মিত নাচ করা হয় না। আগে তো রোজ সাঁতারও কাটতাম। কিন্তু এখন সে সবও শিকেয় তোলা! জিমেও যাই না। কোনও ডায়েট মেনে চলি না। বলতে পারেন আমি বেশ অলস। নিজের যদি মনে হয়, ওজন বেড়ে গেল তা হলে ভাত খাওয়াটা একটু কমিয়ে দিই এই যা!