Abir Chatterjee Birthday

জন্মদিনে ‘আবির-ভাব’, হাতে কেরিয়ারের রিপোর্ট কার্ড, যাতে কিছু লাল দাগ তো থাকবেই!

তাঁর জীবনের মূলমন্ত্র ‘স্লো অ্যান্ড স্টেডি’। তাই প্রতিযোগিতার নেশা থাকলেও বিশেষ তাড়া নেই। জন্মদিনে নিজের কেরিয়ারের ‘রিপোর্ট কার্ড’ নিজেই তৈরি করলেন আবির চট্টোপাধ্যায়।

Advertisement

পৃথা বিশ্বাস

কলকাতা শেষ আপডেট: ১৮ নভেম্বর ২০২২ ১০:৪৯
Share:

জন্মদিনে নিজের রিপোর্ট কার্ড নিজেই তৈরি করলেন আবির চট্টোপাধ্যায়। ছবি: শৌভিক দেবনাথ।

যখন প্রথম ছবির প্রস্তাব পেয়েছিলেন, গায়ে কাঁটা দিয়েছিল। সেই গল্প বলতে বলতেই টি-শার্টের আস্তিন গুটিয়ে দেখালেন, ‘‘দেখুন এখনও গায়ে কাঁটা দিচ্ছে!’’

Advertisement

সাড়ে ১৩ বছর ধরে টানা বড় পর্দায় কাজ করার পরও যাঁর প্রথম ছবির গল্প বলতে গিয়ে গায়ে কাঁটা দেয়, তিনি কে? পর্দার ব্যোমকেশ, না কি সোনাদা? না কি সেই অসংখ্য চরিত্র, যারা মাঝেমাঝেই ফ্র্যাঞ্চাইজ়ির চাপে ঢাকা পড়ে যায়? তাতে অবশ্য কোনও আফসোস নেই। নিজের কেরিয়ারের রিপোর্ট কার্ড বানিয়ে খুশি আবির চট্টোপাধ্যায়।

শুক্রবার, ১৮ নভেম্বর তাঁর ৪২তম জন্মদিন। অন্তত গুগ্‌ল তাই বলছে। তথ্যটা কি ঠিক? আবিরসুলভ মুচকি হেসে নায়ক বলেন, ‘‘এই তথ্যটা ঠিক। বাকি যা যা মারাত্মক কথা দেখেছি, পড়লেও হাসি পায়। কখনও দেখেছি, আমার নাকি বিশাল একটা বাংলো বাড়ি আছে। আবার কখনও দেখেছি, আমার নাকি আরও বড় একটা মেয়ে আছে, বিচিত্র সব তথ্য! বয়সটা অবশ্য ঠিকই দেখায়।’’

Advertisement

‘ব্যেমকেশ হত্যামঞ্চ’ ছবির দৃশ্য। ব্যোমকেশের প্রথম ছবির সাফল্যের পর অবশ্য আবিরকে আর ঘুরে তাকাতে হয়নি। ছবি: সংগৃহীত

গুগ্‌ল যতই চেষ্টা করুক, আবিরকে নিয়ে গসিপ করে কার সাধ্যি? ইন্ডাস্ট্রিতে তাঁর গায়ে বরাবরই ‘বোরিং’ ছাপ। সাতে-পাঁচে থাকেন না, প্রেম করেন না, গসিপ করেন না, মেপে কথা বলেন, কোনও রকম বিতর্কে থাকেন না, এত বছর ধরে ছবির নায়ক হয়েও কোনও খুচরো প্রেম পর্যন্ত নেই। তিনি বরাবরই ‘ক্লিন ফ্যামিলি ম্যান’! হয়তো চাকরিজীবনের মার্কেটিং আর সেল্‌সের প্রশিক্ষণই তাঁকে এমন ভাবমূর্তি ধরে রাখার ফিকিরগুলো শিখিয়ে দিয়েছিল।

তবে সে কথা মানতে নারাজ আবির। বললেন, ‘‘ব্যক্তিগত জীবন নিয়ে হয়তো কোনও রকম গুজব নেই এত বছরেও। কিন্তু বোরিং কি বলা যায়? আমার তো মাঝেমাঝেই কত লোকের সঙ্গে ঝগ়ড়া হয়! সৃজিতের (মুখোপাধ্যায়) সঙ্গে হয়েছে, অনীকদার (দত্ত) সঙ্গে ‘অপরাজিত’র সময়ে হয়েছে। যদিও সেটাকে ঠিক ঝগড়া বলা যায় না। তবে হ্যাঁ, আমরা কেউ-ই সে সময়ে খুব একটা মিষ্টি ভাষায় কথা বলিনি। এ রকম মাঝেমাঝেই কিন্তু আমার ঝগড়া হয়।’’ তিনি জানেন, তাঁকে নিয়ে সবচেয়ে বড় অভিযোগ কী। বলেন, ‘‘আমায় নিয়ে সবচেয়ে বড় অভিযোগ, আমি কারও ফোন তুলি না। মাঝেমাঝে ল্যাদ খেয়েই তুলি না। আবার মাঝেমাঝে আমার মনে হয়, ফোনে কথা বলে লাভ নেই। যেটা আমি বোঝাতে চাই, সেটা সামনাসামনি বলাই ভাল। সেই জন্যেই ফোনে কথোপকথন এড়িয়ে যাই। তাতে অনেক ভুল বোঝাবুঝি হয়। নানা লোকে নানা কথা বলে।’’

ব্যক্তিগত জীবন নিয়ে হয়তো কোনও রকম গুজব নেই এত বছরেও। কিন্তু ‘বোরিং’ কি বলা যায় তাঁকে? ফাইল চিত্র।

তার পর খানিকটা হালকা চালেই বললেন, ‘‘আমি কিন্তু আমার বন্ধুদের সঙ্গে দিব্যি আড্ডা দিই। জমিয়ে পরনিন্দা-পরচর্চাও করি। অবসর সময়ে প্রচুর ‘রিল’ দেখি। কে কী করছে, সব খবরই রাখি। যতটা বোরিং ভাবা হয়, আমি মোটেই ততটা বোরিং নই।’’

যিনি বিভিন্ন সাক্ষাৎকারে প্রায় প্রতি বারই বলেন, ‘‘এই বিষয়টা অফ দ্য রেকর্ড বলব,’’ তিনি যে সাবধানী, তাতে তো কোনও সন্দেহ নেই। তবে এটা ঠিক যে, তিনি ‘বোরিং’ মোটেই নন। এবং তাঁর গল্পটাও একেবারেই ‘বোরিং’ নয়।

নাট্যব্যক্তিত্ব ফাল্গুনী চট্টোপাধ্যায় এবং রুমকি চট্টোপাধ্যায়ের পুত্র আবির। যেখানে তাঁর বোন তিন বছর বয়স থেকেই মঞ্চে অভিনয় করেন, সেখানে আবিরের ছোটবেলা কেটেছে ক্রিকেট-ফুটবল খেলে। বাড়িতে নাটকের মহড়া দেখে সব চরিত্রের সংলাপ মুখস্থ হয়ে যেত। কিন্তু সে সবে তাঁর খুব একটা উৎসাহ ছিল না। বরং কখনও নাটক দেখতে যাওয়ার জন্য বিকেলের খেলা বাদ গেলে বেজায় বিরক্ত হতেন। সেই ছেলেই যে এক দিন পাকা চাকরি ছেড়ে অভিনয় করতে আসবেন, কেউ-ই ভাবেননি। আবির ভেবেছিলেন? যিনি এখন বলেন, ‘‘কেউ উপরে বসে নিশ্চয়ই হাসছিলেন।’’

কলেজে পড়ার সময় থেকেই টুকটাক অভিনয়। বন্ধুদের সঙ্গে চুটিয়ে নানা ধরনের সিনেমা দেখতেন। এমবিএ করার সময়ে দু’বছর পড়ার চাপে অভিনয় বন্ধ থাকলেও চাকরি পাওয়ার পরে অভিনয় চালিয়ে গিয়েছেন আবির। শুরু করেছিলেন ছোট পর্দা থেকেই। সে সময় সিনেমার ‘হিরো’ হতে গেলে ছোট পর্দা থেকে অভিনয় শুরু করার খুব একটা চল ছিল না। অথচ সে সময় যাঁরা ছোট পর্দা দাপিয়ে বেড়িয়েছিলেন, তাঁরা সকলেই পরবর্তী সময়ে বাংলা সিনেমার প্রথম সারির অভিনেতা-পরিচালক হয়ে ওঠেন। সেই দীর্ঘ তালিকায় ছিলেন আবিরও। তাই তাঁর স্বীকার করতে সমস্যা নেই যে, যাবতীয় শিক্ষা ছোট পর্দা থেকেই।

‘বাস্তুশাপ’ ছবিটি আবিরের খুব প্রিয় ছবির তালিকায় উপরের দিকেই থাকে। ছবি: সংগৃহীত

দেবাংশু সেনগুপ্তর ‘বহ্নিশিখা’ ধারাবাহিকের কথা বলতে বলতে ফের চোখ চকচক করে ওঠে আবিরের। সেটাই ছিল তাঁর প্রথম ‘ব্রেক’। ধারাবাহিকে অভিনয় করতে করতেই তিনি ‘ইন্ডিয়া বুল্‌স সিকিউরিটিজ়’-এ চাকরি করতেন। বহু জায়গায় গিয়ে বহু ক্লায়েন্টের সঙ্গে ঘুরে ঘুরে কথা বলতে হত তাঁকে। তবে দুপুরের পর শেয়ার মার্কেটের কাজ কমে গেলে শুটিং ফ্লোরে হাজির হতেন। আবিরের কণ্ঠে স্পষ্ট কৃতজ্ঞতার সুর, ‘‘আমার তখনকার সহকর্মীদের নাম হয়তো কেউ-ই কখনও জানবেন না। অথচ তাঁরা না থাকলে আজ আমার ব্যোমকেশ-সোনাদা হয়ে ওঠা হত না। তাঁরা সব রকম ভাবে সহযোগিতা করেছিলেন বলেই অভিনয় আর চাকরি দুটোই চালাতে পেরেছিলাম। আমায় টেলিভিশনের সকলেও খুব সাহায্য করতেন। যখন ‘খুঁজে বেড়াই কাছের মানুষ’ করছি, তখন রানাদা-সুদেষ্ণাদিরা রবিবারের বদলে সোমবার ছুটি দিত গোটা ইউনিটকে। কারণ, রবিবার আমি গোটা দিন শুটিং করতে পারতাম।’’ তবে আবির এ-ও বলেন যে, ‘‘সে সময় টেলিভিশনে কাজ করার একটা ব্রিদিং স্পেস ছিল। এখনকার মতো কাজের এত চাপ ছিল না। এখন তো দেখি, বেশির ভাগ সিরিয়ালের সাত দিনই টেলিকাস্ট থাকে। এখনকার মতো চাপ হলে হয়তো আমি করতেই পারতাম না! সেই সময়ে কাজ শেখার সময় পেতাম আমরা। যখন শেষমেশ টেলিভিশন ছা়ড়ছি, তখন একটু একটু করে কাজের ধরন বদলাচ্ছে। অভিনয়ের ধরন বদলাচ্ছে। হিসেব বদলাচ্ছে। সেগুলো আমার খুব মনোমতো হচ্ছিল না। তাই তখন ছেড়ে দেওয়াতে ঘুরিয়ে লাভই হয়েছিল আমার।’’

প্রথম ছবি ২০০৯ সালে ‘ক্রস কানেকশন’। প্রস্তাব পেয়ে মনে হয়েছিল, ‘‘কিছু একটা করে দেখাতেই হবে’’। আশপাশের সহকর্মীরা তখন সকলেই ধীরে ধীরে ছোট পর্দার পাশাপাশি বড় পর্দায় পা রাখছেন। আবিরের মনে হচ্ছিল যেন একটা ‘মুভমেন্ট’ হচ্ছে। একে অপরকে দেখে অনুপ্রেরণা জুটিয়ে নিতেন সকলে। প্রচুর টেলিফিল্মের কাজ করেছিলেন। এখন আবিরের আফসোস, সেগুলো কোথাওই ঠিকমতো পাওয়া যায় না। তবে সেই টেলিফিল্মের ট্রেন্ডটাই ধীরে ধীরে বড় পর্দায় আসছিল। তিনিও ঝাঁপ দিয়েছিলেন সেই ধারায়। ‘ক্রস কানেকশন’-এর সময় তাঁর উপস্থিতিতেই একজন সুদেষ্ণা রায়-অভিজিৎ গুহকে বলেছিলেন, ‘‘কাদের নিচ্ছ? কেউ তো চেনেই না!’’ তবে ছবি হাউসফুল হওয়ার পর আর সে কথা মনে থাকেনি।

কারও তাঁকে পছন্দ হত না, আবার কোনও ছবি তাঁর পছন্দ হত না। খানিক গর্বের সঙ্গেই বললেন। -ফাইল চিত্র

ব্যোমকেশের প্রথম ছবির সাফল্যের পর অবশ্য আবিরকে আর ঘুরে তাকাতে হয়নি। ছোট পর্দায় তখন তাঁর জনপ্রিয়তা তুঙ্গে। তবু ছেড়ে দিয়েছিলেন খানিক ঝুঁকি নিয়েই। যদিও পর পর প্রচুর কাজ করেননি। কারও তাঁকে পছন্দ হত না, আবার কোনও ছবি তাঁর পছন্দ হত না। খানিক গর্বের সঙ্গেই বললেন, ‘‘খুব ভুলভাল কাজ কখনও করতে হয়নি। কিছু একটা ক্লিক করে গিয়েছে।’’ তখন ছবি বাছতেন দর্শকাসনে নিজেকে বসিয়ে চিত্রনাট্য শুনে। ১৩ বছর পরও সে ভাবেই বাছেন। তবে এখন অভিজ্ঞতা অনেক বেড়েছে, দৃষ্টিভঙ্গি বদলেছে। তাই আরও বাড়তি কিছু জিনিস খেয়াল রাখেন ছবি বাছাইয়ের সময়ে।

রাজ চক্রবর্তী পরিচালিত ‘বোঝে না সে বোঝে না’ ছবিটা করার পর তিনি টের পেয়েছিলেন, একসঙ্গে কত দর্শকের কাছাকাছি পৌঁছে গেলেন। ছবি: সংগৃহীত

নিজের রিপোর্ট কার্ডে কী লিখবেন? অভিনেতা হিসাবেই বা নিজের মূল্যায়ন কী?

ব‌্যোমকেশ-সোনাদার মতো দু-দু’টো সফল ফ্র্যাঞ্চাইজ়ি তাঁর ঝুলিতে। অনেকেই বলেন তিনি ‘সেফ খেলেন’। তবে তিনি তা মানতে নারাজ। আবির মনে করেন, একটা গল্প সফল ভাবে বলা যেমন কঠিন, একটা সফল গল্প এগিয়ে নিয়ে যাওয়াও ততটাই কঠিন। সেটা যখন তিনি সফল ভাবেই পারছেন, তা হলে মন্দ কী! জাতীয় স্তরেও ব্যোমকেশের জন্যই খ্যাতি অর্জন করতে পেরেছেন। পাশাপাশি শুধু সিনেমা নয়, বাংলা সাহিত্যের অন্যতম আইকনিক চরিত্রগুলোর সঙ্গে দর্শক তাঁকে মেলাতে পারেন, এটা যতটা চাপের, ততটা গর্বেরও। তবে অভিনয়ের রিপোর্ট কার্ড বানানোর সময়ে সম্পূর্ণ অন্য ছবির কথা উল্লেখ করলেন আবির। মনে করিয়ে দিলেন, তিনি ২০১৪ সালে ‘দ্য রয়্যাল বেঙ্গল টাইগার’, ‘হৃদ্‌মাঝারে’, ‘যদি লভ দিলে না প্রাণে’র মতো নানা স্বাদের ছবি করেছেন। নতুন পরিচালকদের সঙ্গে যেমন বার বার কাজ করেছেন, তেমনই অতনু ঘোষ, কৌশিক গঙ্গোপাধ্যায়, সৃজিত মুখোপাধ্যায়, সন্দীপ রায়, অরিন্দম শীলের মতো প্রতিষ্ঠিত পরিচালকদের সঙ্গেও একাধিক কাজ করেছেন। তাঁর অনেক ছবি বাণিজ্যিক ভাবে লাভের মুখ না দেখলেও তিনি মনে করেন, সেগুলোও যথেষ্ট সফল। কোনও ছবি আশানুরূপ না হলেও তিনি গর্বের সঙ্গে বলেন ছবিগুলো ‘তাঁর’।

ফ্র্যাঞ্চাইজ়ির ছাতা অবশ্য অনেকটাই বড়। এড়িয়ে যাওয়ার জো নেই। কেরিয়ারের প্রথম মাইলফলক যে ‘ব্যোমকেশ বক্সী’, তা মেনে নিতেই হবে। দ্বিতীয়টা কী? ২০১৪ সালের ১৯ ডিসেম্বর। একই সঙ্গে মুক্তি পায় ‘ব্যোমকেশ ফিরে এলো’ এবং ‘বাদশাহী আংটি’। ফেলুদা-ব্যোমকেশ একসঙ্গে। দুটো চরিত্রে একই মুখ— আবির। তাঁর মনে উথাল-পাথাল চললেও দর্শক কিন্তু হইহই করে ছবি দেখেছিলেন। দু’টো ছবিই যথেষ্ট ব্যবসা করেছিল। অথচ নানা রকম জটিলতায় ‘ফেলুদা’ আর করা হয়নি আবিরের।

ফেলুদা মিস্‌ করেন? প্রশ্নের উত্তরে এক মুহূর্তও না ভেবে আবির বলেন, ‘‘না। ২৭ এপ্রিল ২০১৮ সালের পর থেকেই আরও করি না।’’ কারণটা স্পষ্ট। সে দিনই মুক্তি পায় সোনাদার প্রথম ছবি ‘গুপ্তধনের সন্ধানে’। বাজারে প্রচুর ব্যোমকেশ থাকলেও যেমন ব্যোমকেশ বলেই দর্শকের সামনে প্রথম ভেসে ওঠে আবিরের মুখ, এখন তিনটে ছবির সাফল্যের পর ‘সোনাদা’ নামের সঙ্গেও জুড়ে গিয়েছে তাঁর মুখটাই। বিশেষত বাচ্চারা তাঁকে ‘সোনাদা’ নামেই চেনে। বস্তুত, বাচ্চাদের ভালবাসা পাওয়াটাও আবির তাঁর রিপোর্ট কার্ডে ‘স্টার’ পাওয়ার মতোই রাখলেন। তবে কি না তিনি ফেলুদাকে ‘মিস্‌’ না করলেও হয়তো ফেলুদা তাঁকে ‘মিস্‌’ করছিল। তাই অনীক দত্তের আগামী ছবির মধ্যে দিয়ে তাঁকে ঠিক ধরে ফেলল। ছবি সরাসরি ফেলুদাকে নিয়ে নয়। তবে ফেলুদা, সত্যজিৎ রায়, ধাঁধা, রহস্য সবই আছে। মজার বিষয় সেখানে আবিরের চরিত্রের নাম হবে ‘তোপসে’!

রিপোর্ট কার্ডে আরও একটা সাল উল্লেখযোগ্য— ২০১৫। ‘হর হর ব্যোমকেশ’ দিয়ে তাঁর পর্দায় ব্যোমকেশ হয়ে প্রত্যাবর্তন এবং ‘বাস্তুশাপ’-এর মতো ছবিতে অভিনয়ের সুযোগ তো ছিলই। ব্যক্তিগত ভাবে সে বছরটা তাঁর জন্য একটা মাইলফলক। ছবি বাছাইয়ের পদ্ধতি, কাজের প্রতি মানসিকতা, শরীরচর্চা এবং গ্রুমিংয়ের দিকে নজর দেওয়া, নিজের ভাবমূর্তি গড়ে তোলা— সবেতেই আমূল পরিবর্তন হয় তখন থেকেই। ২০১৭ সাল থেকে বেশ কিছু ছবি বাণিজ্যিক ভাবেও বেশ সফল হয়। দর্শক-ইন্ডাস্ট্রি, সকলেরই তাঁর প্রতি ভরসা তৈরি হয়। সেই থেকেই তাঁর মনে হয়, দায়িত্ব আরও বেড়ে গেল, আরও বেশি পরিশ্রম করতে হবে।

বাচ্চারা যে এখন তাঁকে ‘সোনাদা’ নামে চেনে, তা আবিরের কাছে এক বড় প্রাপ্তি। ছবি: সংগৃহীত

নিজের অভিনয় নিয়ে ভাবেন? আবির বলেন, ‘‘শিল্পী হিসাবে নিজের সঙ্গে কথা বলা খুব জরুরি। অনেক ক্ষেত্রেই মনে হয়, এই জায়গাটা তো অন্য রকম করতে চেয়েছিলাম। তা হলে কেন পারলাম না? নিজের কাজ যে সব সময় দেখি তা নয়। তবে অভিনয় নিয়ে ভাবনাচিন্তা করি। আই অ্যাম নট ভেরি হ্যাপি উইথ মাইসেল্‌ফ অল দ্য টাইম।’’ শুধু আত্মমূল্যায়ন নয়, তিনি মনে করেন মানুষের সঙ্গে মেশা, তাঁরা কী মনে করছেন, তা বোঝাটাও জরুরি।

তাঁর কাজের সবচেয়ে কড়া সমালোচক কারা? আবিরের জবাব, ‘‘বাবা-মা তো আছেনই। আমার স্ত্রী নন্দিনী আসলে আমার চেয়েও বেশি ফিল্মি। তাই ওর মতামতকে গুরুত্ব দিই। আর আমার কিছু খুব কাছের বন্ধু আছে। আমার সবচেয়ে প্রিয় বন্ধু আমার আড়ালে আমার দারুণ প্রচার করে। কিন্তু সামনে কখনও প্রশংসা করে না। বরং সোজাসুজি বলে দেয় কোন জায়গাটা খারাপ হয়েছে।’’

আবির বরাবরই প্রতিযোগী। তাঁর সমসাময়িক অভিনেতারা যেখানে জাতীয় স্তরে চুটিয়ে কাজ করছেন, সেখানে তিনি হিন্দিতে ওয়েব সিরিজের কাজ (‘অবরোধ টু’) করলেন বেশ দেরিতেই। কখনও মনে হয় না পিছিয়ে পড়ছেন? আবির বলছেন, ‘‘একদমই সে ভাবে ভাবি না। আমি বরাবরই স্লো অ্যান্ড স্টেডি কাজে বিশ্বাসী। তাতে কাজে মানটা ধরে রাখতে আমার সুবিধা হয়। মুম্বইতে অবশ্যই কাজ করতে চাই। তবে এমন কিছু করতে চাই, যাতে আমায় মানাবে। আমার খুব তাড়া নেই। বাকিরা কী করছে, টুকটাক দেখার চেষ্টা করি। বোঝার চেষ্টা করি তারা কেন সেই কাজটা করতে রাজি হল, বা কাজটা কেন তাদের কাছেই গেল। আসলে আমরা অনেকেই প্রায় একই সময়ে কেরিয়ার শুরু করেছিলাম। তাই কিছুটা প্রতিযোগিতা থাকে। কোথাও কোনও ভাল কাজ দেখলে মনে হয়, আই নিড টু আপ মাই গেম।”

নতুনদের কাজ দেখেন? দেখেন। এবং বলেন, “প্রচুর ভাল কাজ হচ্ছে। তবে আমার হাল্কা অনুযোগ, আরও বেশি হতে পারে। ট্যালেন্ট আছে, আরও মন দিয়ে কাজ করলে আরও ভাল হবে বলে মনে হয়।”

ওয়েব সিরিজের কনটেন্ট তাঁর একটু বেশি ‘ডার্ক’ লাগে। তবে এক বার দেখা শুরু করলে একটানা অনেক ক্ষণ দেখতে পারেন। বাংলাদেশের বহু কাজ ঘরে বসেই দেখেন। মালয়ালম ছবির দারুণ ভক্ত। তবে এখনও হলে গিয়ে বড় পর্দায় ছবি দেখার মজাটাই তাঁর কাছে আলাদা। নিজের রিপোর্ট কার্ডে খুশি। কিছু ছবি পরে নিজেরই দেখে ভাল লাগেনি ঠিকই। কিন্তু সেই সংখ্যাটা খুব কম বলে তিনি সন্তুষ্ট। মনে করেন, যে কোনও তারকার ফিল্মোগ্রাফিতে ভাল ছবি-খারাপ ছবি বা হিট-ফ্লপের অনুপাত দেখলেই বোঝা যাবে। রিপোর্ট কার্ডে কিছু লাল দাগ থাকবেই।

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement