Theatre

সতর্ক থাকার বার্তা নিয়েই খোলা জায়গায় ফিরছে থিয়েটার

দেওয়ালে পিঠ ঠেকে যাওয়ায় থিয়েটারের সর্বক্ষণের কর্মী, কলাকুশলীদের অনেককে দেখা গিয়েছে আনাজ, মাংস বেচতে বা বাড়িতে পৌঁছে দিতে। এমনকি রাজমিস্ত্রির কাজও করছেন কেউ কেউ।

Advertisement

ঋজু বসু

কলকাতা শেষ আপডেট: ২০ সেপ্টেম্বর ২০২০ ০২:৩৭
Share:

প্রত্যাবর্তন: সল্টলেকের ইজ়েডসিসিতে চলছে নাটকের মহড়া। ছবি: সুদীপ্ত ভৌমিক

মহড়ার সময়েই লোকায়ত সুরের গানটা অনেকের মনে ধরেছে। ‘কলি যুগ আসিল, মুখ ঢাকা পড়িল / দূরত্বের গুরুত্ব বুঝে চলতে হবে তাই, বারে বারে হাত ধুতে হবে ভাই।’

Advertisement

তবে সামাজিক দায়ের জায়গায় হাত ধুয়ে ফেলার দিকে হাঁটছে না অতিমারি জমানার বাংলা থিয়েটার। তাই নতুন বাংলা নাটক ‘জ্বরাসুর বধ পালা’ এই করোনাকালকেই ধরতে চাইছে। কাল, সোমবার সরকারের নির্দিষ্ট আনলক-৪ পর্বে খোলা জায়গার মঞ্চ নাটকও ফিরছে শহরে। সেই লক্ষ্য সামনে রেখেই শহরের নাট্যচর্চাকে মেলে ধরছে পূর্বাঞ্চলীয় সংস্কৃতি কেন্দ্র। অতিমারি পরিস্থিতিতে থিয়েটারের ভবিষ্যৎ নিয়েই বিরাট প্রশ্নচিহ্ন উঠে গিয়েছিল।

দেওয়ালে পিঠ ঠেকে যাওয়ায় থিয়েটারের সর্বক্ষণের কর্মী, কলাকুশলীদের অনেককে দেখা গিয়েছে আনাজ, মাংস বেচতে বা বাড়িতে পৌঁছে দিতে। এমনকি রাজমিস্ত্রির কাজও করছেন কেউ কেউ। ভার্চুয়াল মাধ্যমে মঞ্চনাটকের মেজাজ অবশ্য পুরোটা ফেরেনি। বিক্ষিপ্ত ভাবে শহরে, মফস্সলে খোলা জায়গায় নাটকও অল্পস্বল্প হয়েছে। যেমন পানিহাটির পাইন ঠাকুরবাড়ির দোলতলায় ‘বিসর্জন’-এর অভিনয়। কিন্তু কলকাতার থিয়েটার বা সংস্কৃতির চেনা উঠোনে এ যাবৎ সংস্কৃতির বাদ্যি কার্যত নীরবই ছিল। কেন্দ্রীয় সংস্কৃতি মন্ত্রকের পূর্বাঞ্চলীয় সংস্কৃতি কেন্দ্রের (ইজ়েডসিসি) উদ্যোগে জাগছে সেই নাট্যপ্রেমী কলকাতা।

Advertisement

আরও পড়ুন: বলিউডের রাজনীতিতে অনুরাগের বিরুদ্ধে যৌন হেনস্থার অভিযোগ

সোমবার সন্ধ্যায় ‘জ্বরাসুর বধ পালা’-র প্রথম অভিনয় সল্টলেকে ইজ়েডসিসি-র খোলা পরিসর ‘ঐকতান’-এ। রূপকধর্মী মেজাজে, মঙ্গলকাব্যের গল্পের মোড়কে সমসময়ের কথাই বলবে নাটক। উজ্জ্বল চট্টোপাধ্যায়ের নাটকের বিষয়ের সঙ্গে মিলিয়ে পুরুলিয়ার ছৌ মুখোশের আদলে তৈরি মাস্কও মেশানো হয়েছে এই উপস্থাপনায়। পুরুলিয়ার মুখোশ-শিল্পী ফাল্গুনী সূত্রধরের সৃষ্টিশীল-ভাবনা মিশেছে কলকাতার পরিচালকের পরিকল্পনায়।

অভিনয় প্রাঙ্গণে ৪০০ জনের বসার জায়গা। প্রবেশ অবাধ। তবে ১০০ জনের বেশি ঢুকতে পারবেন না। পরিচালক সৌমিত্র মিত্র বলছিলেন, ‘‘সাবধানে মহড়া হয়েছে। অভিনেতাদের কোভিড-বিমা করিয়ে ডাক্তারি পরামর্শ মেনে থিয়েটার করছি। নাটকের কোরিয়োগ্রাফি থেকে অভিনয়ের কম্পোজ়িশন— সব কিছুতেই পারস্পরিক দূরত্ব বজায় রয়েছে।’’

একই দিনে ইজ়েডসিসি-র আরও একটি প্রাঙ্গণ ভারতীয়মেও কত্থক, শাস্ত্রীয় সঙ্গীত, নাটকের একটি উপস্থাপনা দেখা যাবে। পরিকল্পনা, নির্দেশনায় লুনা পোদ্দার। সেখানেও মাস্ক সতর্কতা-সহ সুরক্ষার কড়াকড়ি। ইজ়েডসিসি-র অধিকর্তা গৌরী বসুর কথায়, ‘‘এই দু’টি কাজেরই আমরা সহযোগী। অভিনয়ের জায়গা দিয়ে সাহায্য ছাড়াও সেট বা সাজসজ্জার ব্যবস্থাপনাতেও পাশে থাকছি।’’ লকডাউনের ক’টা মাস ইজ়েডসিসি-ও ভার্চুয়াল আঙ্গিকেই লোকশিল্পীদের নিয়ে অনুষ্ঠান করছিল। গৌরীদেবী বলছিলেন, ‘‘এত দিনে ৪০০০ লোকশিল্পীকে অল্প হলেও সাহায্য করা গিয়েছে। কিন্তু শহরে আবার নাটকের অভিনয় হওয়াটা রোমাঞ্চকর।’’

রাজ্যের মন্ত্রী তথা নাট্যকর্মী ব্রাত্য বসু অবশ্য মনে করেন, ‘‘এখনও শহরের নাটকের প্রেক্ষাগৃহগুলিতে অভিনয় ফেরানোর পরিস্থিতি তৈরি হয়নি। বিশেষত, পারস্পরিক দূরত্ব রেখে দর্শকদের বসানো মুশকিল।’’ শহরের খোলা জায়গাগুলিতে নাটকের অভিনয় নিয়ে অনেকেই ভাবছেন। কোভিড-ধ্বস্ত কলকাতায় মিনার্ভা নাট্য রেপার্টরিতে দূরত্ব-বিধি মেনে মহড়া শুরু হয়। নাট্যকর্মী সোহিনী সেনগুপ্ত জানালেন, তাঁদের দলেও প্রতি বছরের মতো শিক্ষার্থীরা যোগ দিয়েছেন। ‘শিফট’ ভাগ করে কম জনকে নিয়ে ক্লাস চলছে। সোহিনীর কথায়, ‘‘খোলা জায়গার নাটক তুলে ধরাই এখন রাস্তা। তবে বড় জায়গায় অনেককে নিয়ে বেশি খরচের প্রোডাকশন বাস্তবসম্মত কি না, এটাও ভাবছি। এই ধরনের নাটক কী ভাবে টিকিট কেটে আসা দর্শকদের আকর্ষণ করে, তার ভাবনাচিন্তা চলছে।’’

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement