প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে অক্ষয়
ক্ষমতার রং বদলায়। তার সঙ্গে বদলে যান তাঁরাও, ক্ষমতার আঁচে যাঁরা নিজেদের সেঁকতে চান। রাজনীতি আর বিনোদনের সহাবস্থান আগেও দেখা গিয়েছে। কেউ সরাসরি ময়দানে নেমেছেন, কেউ দূর থেকে আঁচ নিয়েছেন। নরেন্দ্র মোদী প্রধানমন্ত্রী হওয়ার পরে বলিউডে একটা তরঙ্গ ওঠে। সেই স্রোতে ভেসে অনেকেই গেরুয়া শিবিরে পৌঁছতে চান। তিনি দ্বিতীয় বার ক্ষমতায় এলে সেই স্রোতে আরও অনেকে শামিল হন। উল্টো দিকেও আগ্রহ কম ছিল না। ফলে আমির খান, অক্ষয়কুমার থেকে রণবীর সিংহেরা অতি সহজেই সেই ক্ষমতার বৃত্তে ঢুকে পড়েন। তার সঙ্গে বলিউডের ছবিতেও লেগে যায় গেরুয়া রং।
রাজনীতির তারামণ্ডল
দক্ষিণী ইন্ডাস্ট্রি এর অকাট্য প্রমাণ। এন টি রামা রাও, জয়ললিতা থেকে রজনীকান্ত... হিন্দি ইন্ডাস্ট্রিও ব্যতিক্রম নয়। গাঁধী পরিবারের সঙ্গে বলিউডের অনেকেরই ঘনিষ্ঠতা ছিল। অমিতাভ বচ্চনের সঙ্গে ইন্দিরা গাঁধী-রাজীব গাঁধীর ঘনিষ্ঠতা সর্বজনবিদিত। সমাজবাদী পার্টির অমর সিংহের সঙ্গে অমিতাভের সখ্য এবং যার জেরে অভিনেতা রাজনীতির আঙিনাতেই নেমে পড়লেন। বলিউডের এই প্রজন্ম কিন্তু সরাসরি রাজনীতির মঞ্চে নামছে না (সানি দেওল, ঊর্মিলা মাতণ্ডকর ছাড়া যাঁদের কেরিয়ার তলানিতে)। বরং তাঁরা সেই মঞ্চের ঠিক বাইরে যে যাঁর মতো চেয়ার পেতে নিয়েছেন। তাই তো কর্ণ জোহর, রণবীর কপূর, আয়ুষ্মান খুরানা, আলিয়া ভট্ট একযোগে ‘চায়ে পে চর্চা’য় যোগ দেন। প্রিয়ঙ্কা চোপড়ার সঙ্গে সাক্ষাৎ করার জন্য প্রধানমন্ত্রীও সময় বার করে নেন।
সেলফি চর্চা
এ রাজ্যে ক্ষমতায় এসে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় যে সেলেব্রিটি তাসটা খেলেছিলেন, কেন্দ্রে ঠিক সেটাই করেছেন নরেন্দ্র মোদী। সৌজন্যবশত বা আনুগত্যবশত অনেক তারকাই কেন্দ্রীয় সরকারের নানা প্রকল্প-নীতি এনডোর্স করে যাচ্ছেন। অক্ষয়কুমারের ‘টয়লেট: এক প্রেম কথা’, ‘প্যাডম্যান’, ‘মিশন মঙ্গল’ প্রতিটি ছবিই যেন বিজেপি সরকারের গৌরবগাথা তুলে ধরে! ‘কেশরী’তে হিন্দুত্ববাদের ছাপ স্পষ্ট।
সেই সেলফি
নির্বাচনের আগে প্রধানমন্ত্রীর সাক্ষাৎকার নেন অক্ষয়। যেখানে রাজনীতি ছাড়া বাকি সব কিছু ছিল। অথচ নিজের ভোটই দেননি অক্ষয়! কর্ণ জোহর, একতা কপূর, ভিকি কৌশল, রাজকুমার রাও, বরুণ ধওয়নরা হইহই করে প্রধামন্ত্রীর সঙ্গে সেলফি তোলেন, যা নিয়ে উত্তাল হয়েছিল সোশ্যাল মিডিয়া।
রং লেগেছে ছবিতেও
রাজনীতির রং ব্যক্তির পাশাপাশি সিনেমাকেও স্পর্শ করেছে। তৈরি হচ্ছে ‘টয়লেট: এক প্রেম কথা’, ‘উরি’, ‘মিশন মঙ্গল’-এর মতো ছবি। এই ছবিগুলি বিষয়-ভাবনায় অবশ্যই স্বতন্ত্র। কিন্তু প্রতিটি ছবিতেই যদি জোর করে কেন্দ্রীয় সরকারের প্রশস্তি গুঁজে দেওয়া হয়? সে ক্ষেত্রে ছবি তৈরির আসল উদ্দেশ্য নিয়ে সন্দেহ হয় বইকি! যেমন সন্দেহ হয় প্রাক্তন প্রধানমন্ত্রী মনমোহন সিংহকে নিয়ে তৈরি ‘দি অ্যাক্সিডেন্টাল প্রাইম মিনিস্টার’ ছবিটি ঘিরে। ‘নিউটন’, ‘আর্টিকল ফিফটিন’-এর মতো কিছু সাহসী ছবি হলেও, তা সংখ্যায় কম।
কত সহজে ‘মিশন মঙ্গল’ তৈরি হয়ে গেল! কিন্তু রাকেশ শর্মার বায়োপিকের জন্য অভিনেতা মিলছে না। এটি বর্তমান সরকারের বিজয়স্বাক্ষর নয় বলে? নাকি এটি তৎকালীন কংগ্রেস সরকারের গৌরবগাথা বলে? ‘গরম হাওয়া’, ‘নিউ দিল্লি টাইমস’, ‘গুলাল’, ‘ফিরাক’, ‘যুবা’র মতো ছবি কি এই পরিস্থিতিতে তৈরি হওয়া সম্ভব?
খান সমীকরণ
যে সলমন খান কারও পরোয়া করেন না, তিনি পর্যন্ত মোদী স্তুতিতে রত। তবে অবশ্যই নিজস্ব স্টাইলে। লোকসভা নির্বাচনের আগে সলমন ও আমির খানের উদ্দেশে টুইট করেন প্রধানমন্ত্রী, তাঁরা যেন জনতাকে ভোট দিতে উৎসাহিত করেন। আমির সেই মতো আবেদন করেছিলেন। সলমন ঠিক এক সপ্তাহ পরে টুইট করেন!
গুজরাতের সর্দার সরোবর বাঁধ নিয়ে মেধা পাটকরের আন্দোলনকে সমর্থন করেছিলেন আমির। সে সময়ে গুজরাতের মুখ্যমন্ত্রী মোদী। আমিরের ‘ফনা’ গুজরাতে নিষিদ্ধ হয়েছিল। মোদী ক্ষমতায় আসার পরে আমির তাঁর সাক্ষাতে গেলেও অসহিষ্ণুতা বিতর্ক নিয়ে সরব হয়েছিলেন অভিনেতা। শাহরুখ কংগ্রেস ঘনিষ্ঠ বলে পরিচিত। অসহিষ্ণুতা বিতর্ক তিনিই প্রথম তুলে ধরেন। যে বিতর্ক থেকে নিষ্কৃতি পেতে তাঁকে বিজেপি নেতার মেয়ের বিয়ের আসরে নাচতেও হয়! বর্তমানে মোদী সরকারের সঙ্গে শাহরুখের সম্পর্ক অনেক সহজ। তবুও বলিউডের অন্দরে নানা কথা ঘুরে বেড়ায়। বিজেপি সরকারের ইতিবাচক দিকগুলো নিয়ে নাকি ছবি তৈরির বরাত দেওয়া হয়েছে অনেককে। কিন্তু সেই সব ছবির প্রস্তাব শাহরুখ খানের কাছে যাচ্ছে না বলে শোনা যায়।
ব্যতিক্রমের সংখ্যা অল্পই
অনুরাগ কাশ্যপ, নাসিরুদ্দিন শাহ, শাবানা আজ়মিরা অবশ্যই ব্যতিক্রমী। অপর্ণা সেন, সৌমিত্র চট্টোপাধ্যায়েরা গোহত্যা এবং ‘জয় শ্রীরাম’ ধ্বনিকে কেন্দ্র করে হয়ে চলা হিংসার বিরোধিতা করে প্রধানমন্ত্রীকে চিঠি দিলে, তার পাল্টা উত্তর দেন কঙ্গনা রানাউত, প্রসূন জোশিরা। অনুরাগ নিজের বিরোধিতা চেপে রাখেন না। তার জন্য খুন ও তাঁর মেয়েকে ধর্ষণ করা হবে এমন হুমকিও শুনতে হয়েছে!
রাজনীতি আর গ্ল্যামারের মিলমিশে কোনও সমস্যা নেই। কিন্তু তা উদ্দেশ্যপ্রণোদিত হলে, অবশ্যই প্রশ্ন উঠবে!