‘এখানে আকাশ নীল’
গত তিন মাসে বদলে গিয়েছে চারপাশের দুনিয়া। ‘নিউ নর্মাল’-এ অভ্যস্ত হচ্ছেন সকলেই। বাদ থাকছে না শ্রীময়ী, জবা, কৃষ্ণকলিরাও। তাদের রোজনামচাতেও দাপট অক্ষুণ্ণ রেখেছে মারণ ভাইরাস করোনা। সৌজন্যে বাংলা ধারাবাহিকের চিত্রনাট্যকাররা। গত ১১ জুলাই থেকে ক্যামেরা রোল হচ্ছে টেলিপাড়ায়। সিরিয়ালের ঘরবন্দি অনুরাগীরা নিজের জীবনের প্রতিচ্ছবি দেখছেন পর্দার ও-পারের প্রিয় মানুষগুলির জীবনেও।
জনপ্রিয় ধারাবাহিক ‘শ্রীময়ী’তে দেখানো হচ্ছে, অর্ণার (ডিঙ্কার বান্ধবী) স্বামী সংকল্প করোনায় আক্রান্ত। তার জন্য গল্পে যে নতুন মোড় আসছে, তেমন নয়। শ্রীময়ী ও জুন আন্টি ধারাবাহিকের ইউএসপি। ফোকাসে থাকছে তারাই।
আবার ধারাবাহিক ‘নকশিকাঁথায়’ দেখানো হচ্ছে, মুখ্য চরিত্র যশ চিকিৎসক হওয়ার সুবাদে করোনা নিয়ে মিটিং করছে। মেগা ধারাবাহিকে সপ্তাহের পর সপ্তাহ ধরে চিত্রনাট্য লেখা সহজ নয়। বিশেষত, তিন মাসের বিরতির পরে টিআরপির দিকেও নজর রাখতে হয় নির্মাতাদের। তাই সমসময়ের সঙ্গে তাল মেলাতে প্রাথমিক ভাবে করোনাকে ঢাল করে এগোচ্ছে গল্প।
এই উপাদানের সবচেয়ে বেশি সদ্ব্যবহার করেছেন প্রযোজক ও চিত্রনাট্যকার সুশান্ত দাস। তাঁর প্রযোজিত চারটি ধারাবাহিকে করোনার প্রভাব ভাল মতো চোখে পড়ছে। তাঁর ব্যানারের অন্যতম জনপ্রিয় ধারাবাহিক ‘কৃষ্ণকলি’তে মুখ্য চরিত্র শ্যামার ত্বকের রং পরিবর্তন হয়ে যাওয়ায় সমালোচনা হয়েছিল বিস্তর। পরে অবশ্য দেখানো হয়েছে, সে শ্যামা নয়। নতুন চরিত্র মাম। এই চরিত্রটি ঘটনাচক্রে এখন হাসপাতালে ভর্তি। তবে করোনার কারণেই তার কাছে যেতে দেওয়া হচ্ছে না পরিবারের অন্যদের। লকডাউনের কারণে নিখিলের পারিবারিক মশলার ব্যবসায় মন্দা। কর্মী ছাঁটাই করা হবে কি না, তা নিয়ে চলছে ভাইদের দ্বন্দ্ব। ‘আলো ছায়া’ ধারাবাহিকে মুখ্য চরিত্র আলো বাড়ির আপত্তি সত্ত্বেও করোনা দুর্গতদের খাওয়ানোর কাজে যুক্ত হয়েছিল। এর পরে চোদ্দো দিনের হোম কোয়রান্টিনে ছিল সে। ‘কে আপন কে পর’ ধারাবাহিকে জবা-পরমের মেয়ের বিয়ের অনুষ্ঠানে আড়ম্বর নেই। কারণ? সোশ্যাল ডিসট্যান্সিং। ‘সর্বমঙ্গলা’ ধারাবাহিকে মুখ্য চরিত্র অনীশকেও ফেস শিল্ড, মাস্কে দেখা যাচ্ছে বেশি।
শুধুই কি দর্শকের স্বার্থে, না কি করোনার হাত ধরে চিত্রনাট্যকারদেরও লিখতে সুবিধে হচ্ছে? এই প্রশ্নের জবাবে সুশান্ত বললেন, ‘‘রাসমণি বা লোকনাথকে তো মাস্ক পরে দেখানো যাবে না। পিরিয়ড ড্রামায় যে বাধা রয়েছে, সমকালীন গল্পগুলিতে সে অসুবিধে নেই। তাই দর্শক যা নিয়ে বেশি কথা বলছেন, সেটাই গল্পে দেখাচ্ছি।’’
করোনার কারণে রিল ও রিয়্যাল মিলে গিয়েছে ‘এখানে আকাশ নীল’ ধারাবাহিকে। উজান ও হিয়া জুটির ভক্তসংখ্যা কম নয়। তবে করোনার কারণে বিচ্ছেদ ঘটেছে তাদের। সেটা অবশ্য পর্দার পিছনের গল্প। হিয়ার চরিত্রাভিনেত্রী অনামিকা চক্রবর্তীর বাড়ি কনটেনমেন্ট জ়োনের মধ্যে পড়ায় তিনি শুটিং করতে পারছেন না। তাই ধারাবাহিকে এসেছে নতুন চরিত্র ঝিনুক সেন। তার সঙ্গেই কি উজানের নতুন ট্র্যাক তৈরি হবে? দর্শকের কৌতূহল জিইয়ে রেখে ধারাবাহিকের পরিচালক সীমান্ত বন্দ্যোপাধ্যায় বললেন, ‘‘গল্প বলতে পারব না। তবে হিয়ার প্রসঙ্গও আসবে সিরিয়ালে।’’ হাসপাতাল-ডাক্তার এখানে মুখ্য চরিত্র। তাই এই গল্পে করোনার আগমন সবচেয়ে সহজ ও স্বাভাবিক।
আবার কিছু ধারাবাহিকে যেমন খাতে গল্প চলছিল, সেই ট্র্যাকেই আপাতত চলছে। করোনার কৃপায় আগামী দিনে গল্পে বড়সড় টুইস্ট আসবে কি না, সেটাই এখন ভাবছেন ধারাবাহিকের দর্শক।