‘কহানি ২’ ছবিতে বিদ্যা বালন
অবশেষে বিদ্যাকে পাওয়া গেল তা হলে?
মানে?
সারা দেশ জুড়ে তো আপনার নিরুদ্দেশের পোস্টার...
হা হা হা। আসলে এই ছবিটাকে আমরা একটু অন্য রকম ভাবে প্রেজেন্ট করতে চেয়েছিলাম। সে জন্যই ও রকম চমকে দেওয়া পোস্টার।
তা ‘কহানি’র থেকে কতটা অন্য রকম এই ‘কহানি ২’?
একেবারে অন্য রকম। চরিত্রগুলো আলাদা। তাদের জীবনযাপন ভিন্ন। এটা ‘কহানি’র থেকে পুরোপুরি একটা আলাদা জগৎ।
কিন্তু কলকাতাতেই তো শ্যুটিং করলেন?
না, পুরোটা কলকাতায় শ্যুট হয়নি। গল্পের সেটিংটা যেহেতু বাংলা, বিশেষ করে কলকাতা — তাই যতটুকু রাখার ততটা রাখতেই হয়েছে। ছবির বেশির ভাগ অংশের শ্যুট হয়েছে কালিম্পং আর চন্দননগরে। এই ছবির ঘরানাটা ‘কহানি’র মতো, মিল বলতে এ টুকুই।
মনে রাখবেন, এটা ফ্র্যাঞ্চাইজি, বা সিকুয়েল নয় কিন্তু। আমরা বিদ্যা বাগচীর গল্পটাকে এগিয়ে নিয়ে যাচ্ছি না, ‘কহানি’ ফ্র্যাঞ্চাইজিটাকে এগিয়ে নিয়ে যাচ্ছি।
তার মানে বিদ্যা বালনের কাঁধে অনেক দায়িত্ব?
আরে, না, না... পুরো চাপটাই সুজয়ের (ঘোষ)। আমি শুধু অভিনয় করেছি আর প্রচারে মুখ দেখাচ্ছি।
‘কহানি ২’ তৈরি হল কী করে,
একটু বলুন না!
(হেসে) ‘কহানি’র পর আমরা দু’জনে একদিন আলোচনা করছিলাম যে, একটা ‘কহানি ২’ বানালে কেমন হয়? কিন্তু তেমন কোনও আইডিয়া তখন মাথায় আসছিল না। তার পরে একদিন ‘দুর্গা রানি সিংহ’ লিখল সুজয়। শ্যুটিং শুরু করতে যাব, এমন সময় আমি অসুস্থ হয়ে পড়লাম। তাই আর ছবিটা এগোল না।
বছরখানেক আগে সুজয় হঠাৎই একদিন জানাল, আমাকে যে আইডিয়াগুলো শুনিয়েছিল, তার মধ্যে একটার স্ক্রিপ্ট ও তৈরি করে ফেলেছে। আর সেটা আমাকে শোনাতে চায়। শুনলাম আমি। ভাল লাগল গল্পটা। ‘কহানি’র পর কোনও গল্পই আমার তেমন ভাল লাগছিল না। কিন্তু এই স্ক্রিপ্টটা শুনেই মনে হল, আরে! এটাই তো আমাদের পরের ‘কহানি’। ক্যারেক্টারের নাম ‘দুর্গা রানি সিংহ’ সুজয়ের খুব পছন্দের ছিল, তাই ছবিটাও ওই নামে করব ঠিক করলাম।
বিদ্যা তো অনেক দিন ধরেই ‘হিরো’র ভূমিকায় অভিনয় করে যাচ্ছেন। ‘হিরোইন’ হওয়ার ইচ্ছে হয় না?
(হেসে) আমি তো খুব ভাল ভাল রোলের অফার পাচ্ছি, তাই আমার কোনও অভিযোগ নেই। মহিলাকেন্দ্রিক ছবিতে অভিনয় করতে পেরে আমি খুব খুশি। এত অগুন্তি মহিলার মস্তিষ্কে আর হৃদয়ে যে পৌঁছতে পারছি — সেটা তো এই ছবিগুলো করেই। প্রথাগত হিরোইন হওয়ার কোনও ইচ্ছেও আমার নেই। এমনিতেও কোনও হিরোইনের চরিত্রে খুব খারাপই অভিনয় করতাম আমি। টিপিকাল হিরোইন আমি হতে পারব না।
আপনি কিন্তু এখনকার অনেক হিরোইন, যেমন দীপিকা-অনুষ্কাকে পথ দেখিয়েছেন ভিন্ন ধারার ছবি করতে...
থ্যাঙ্ক ইউ সো মাচ। ক্রেডিটটা যতটা আমার ততটাই আমি দেব সমাজকে। কারণ সেটাও বদলাচ্ছে। মেয়েরা মোটেই আর পুরুষদের পরিচয়ে ঢাকা পড়ে নেই। অমুকের মেয়ে, তমুকের বউ — এ সব আর কেউ বলে না। এখন মেয়েদের নিজের পরিচয় আছে। আর সেটা তারা জোর গলায় প্রচার করছে। বাঁচছে নিজেদের টার্মে। সমাজের এই বদলে যাওয়া ছবিটাই ধরা পড়ছে এ সময়ের সিনেমায়। তাই এখন স্ক্রিপ্ট লেখা হচ্ছে সত্যিকারের মহিলাদের জীবন নিয়ে। তাদের দেবী বলেও তুলে ধরা হচ্ছে না, ডাইনি বলেও দুচ্ছাই করা হচ্ছে না — সত্যিকারের একজন রক্তমাংসের মানুষ হিসেবে দেখানো হচ্ছে।
ভাল লাগল, আপনার কাছে বদলে যাওয়া বলিউডের কথা শুনে...
সিনেমা তো সমাজেরই গল্প। তাই ক্রেডিট নেওয়ার কিছু নেই। আমরা আমাদের গল্প পাই দৈনন্দিন জীবন থেকে। বদলে যাওয়া সমাজ যে সিনেমায় ধরা পড়ছে সেটা খুব ভাল একটা দিক। অসাধারণ কাজ করছেন চিত্রনাট্যকার, গল্পের লেখক বা পরিচালকরা। তাঁরা যে অন্য
ধরনের গল্প নিয়ে কাজ করতে চাইছেন সেটাও তো বড় একটা দিক।
আবার সেই গল্প নিয়ে এগিয়ে যেতে উৎসাহ দিচ্ছেন প্রযোজকরা। আমার তো তাই মনে হয়, সিনেমার দিক থেকে খুব ভাল একটা জায়গায় আছি আমরা।
এই বদলে যাওয়া সময়ের পাশাপাশি দেখি অনেকেই বলে, এখনকার সিনেমায় বড় বেশি স্মোকিং দেখানো হয়। আরে, ছবিতে যদি কোনও স্মোকারের চরিত্র থাকে, তাকে সিগারেট খেতে দেখানোয় সমস্যা কী আছে? যদি কেউ
বলে, সে সিনেমা দেখে সিগারেট খাওয়া ধরেছে, আমি বলব ডাহা মিথ্যে। সে সিগারেট খাওয়ার জন্য সিনেমাটাকে এক্সকিউজ হিসেবে দাঁড় করাচ্ছে।
কর্ণ জোহর তো সম্পর্ক আর তার টানাপড়েন নিয়ে অনেক ছবি করেন। আপনাকে কোনও রোলের অফার করেননি?
ওই যে বলছিলাম না, আমি ওই ধাঁচেই পড়ি না। কিন্তু এখন দেখছি ওর সিনেমার ধরনও বেশ পাল্টে যাচ্ছে। ওর প্রোডাকশনের ‘কপূর অ্যান্ড সন্স’ আমার বেশ ভাল লেগেছে।
জেন নেক্সট অভিনেত্রীদের মধ্যে কার কাজ ভাল লাগছে?
(সঙ্গে সঙ্গে) আলিয়া (ভট্ট)। ‘টু স্টেটস’ আর ‘উড়তা পঞ্জাব’য়ে ও যে কাজটা করেছে সেটা এককথায় অসাধারণ। আমার সবথেকে ভাল লেগেছে এত অল্প বয়সে ও কী সুন্দর স্ক্রিপ্ট বেছে বেছে কাজ করছে। এ বয়সে অন্য কেউ হলে কিন্তু সে ভেসে যেত। স্রোতের উল্টো দিকে যেতে সাহসের দরকার হয়, আলিয়া সেটা করে দেখিয়েছে। আমার মনে হয় সেই গুণটা ও কিছুটা পেয়েছে মহেশজি (ভট্ট)র থেকে।
আলিয়া কিন্তু মহেশ ভট্টর সঙ্গে কাজ করেননি!
সেটাই তো ভাল। এ জন্যই তো আমি সিদ্ধার্থ (রয় কপূর)-র সঙ্গে কাজ করি না।
সে কী! উনি তো নতুন ভেঞ্চারে নামছেন। আপনি সেখানে থাকছেন না?
দেখুন, ও যা করবে তাতেই আমি থাকব। আমি যা-ই করি না কেন, তাতে ওর একশো শতাংশ সমর্থন থাকবে। আমরা তো লাইফ পার্টনার। কিন্তু পেশাগত ক্ষেত্রে কখনও একসঙ্গে কাজ করব না।
তাই! এটা শুনে কিন্তু লোকে চমকে যাবে...
(হেসে) সরি, সরি, নেভার সে নেভার। কক্ষনও করব না, সেটা বলছি না। কিন্তু এখন আমরা ঠিক করেছি, প্রোফেশনালি দু’জন একসঙ্গে কাজ করব না। দেখেছি, সেটা করতে গিয়েই যত ঝামেলা বাধে। কাজের চাপ ঘরে ঢুকে পড়ে। আর ঘরের চাপ এসে পড়ে কাজের জায়গায়। সেটা আমরা চাই না।
সেটে পরিচালক সুজয় ঘোষের সঙ্গে
সৃজিত মুখোপাধ্যায়ের ‘বেগমজান’ করলেন তো?
হ্যাঁ, শ্যুট হয়ে গেছে। ঝাড়খন্ড, পঞ্জাব, দিল্লি — অনেক জায়গায় শ্যুট করলাম। ডাবিংয়ের কাজ একটু বাকি আছে। ভারত-পাকিস্তান দেশভাগের পর একটা পতিতালয়ের গল্প এটা। সৃজিত তো বাংলায় এই গল্পটা নিয়েই ‘রাজকাহিনী’ বানিয়েছে।
আপনি তো কবি কমলা দাসের বায়োপিকটাও করছেন?
খুব বেশি কিছু এখনই বলতে পারব না। তবে হ্যাঁ, খুব প্রিপারেশন নিচ্ছি। ওঁর জীবনী আর ওঁর লেখা কবিতা পড়ছি খুব।
আচ্ছা বিদ্যা, একটা কথা বলুন। আপনি তো ঘর সামলান আবার ফিল্ম ইন্ডাস্ট্রিও। ১০০০-৫০০ টাকার নোট বাতিল করার পর সংসার চালাচ্ছেন কী করে?
(একটু ভেবে) দেখুন, নোট বাতিলের প্রভাব সবার ওপরে কমবেশি পড়েছেই। এই তো আজ বাড়ির কাজের মেয়েটাকে ২০০০ টাকার একটা নোট দিয়ে দোকানে পাঠালাম পনির আনতে। কিন্তু দোকানদার খুচরো ফেরত দিতে পারবে না বলে, পনিরই দিল না। ব্যস, আজ হেঁসেলে পনিরই ঢুকল না।
আমাদের নয় চলে যাবে। কিন্তু সাধারণ লোক, যারা দিন আনে দিন খায়, তারা কিন্তু একটু হলেও ক্ষতিগ্রস্ত হল। তবে অর্থনীতির লোকেরা তো এর ভাল দিকটাই দেখছেন। আমিও চাই, সেটাই যেন হয়।
শেষ প্রশ্ন করি, উরি আক্রমণ প্রসঙ্গে নাসিরুদ্দিন শাহ বলেছিলেন, এর পর কোনও পাকিস্তানি ছবি করতে রাজি হওয়ার আগে দু’বার ভাববেন। আপনিও কি একমত?
(বেশ কিছুটা সময় নিয়ে) সেটা করাই ভাল। আর লোকের এখন যা মনোভাব তাতে অন্য কোনও অপশনও নেই। আমি রাজনীতি বা রাজনীতিবিদদের কথা বলছি না, সাধারণ মানুষ এখন এমন জায়গায় রয়েছে, যেখানে আর সহ্য করা যায় না। হয়তো সেটা করলে সন্ত্রাসবাদ বা হিংসা বন্ধ হবে না, কিন্তু তাই বলে তো চুপ করে হাত-পা গুটিয়ে বসে থাকা যায় না। জবাব নাই বা দিলাম, এটা তো বুঝিয়ে দেওয়া যায় যে, সীমান্তের ও পারে যা করা হচ্ছে তার সঙ্গে আমরা একমত নই।