সোনালির বাড়িতে একাধিক বার চুরির চেষ্টা করেছে তাঁর সহকর্মীরা।
সোনালি ফোগটের টাকাপয়সা, সম্পত্তি হাতিয়ে নিতে চেয়েছিলেন তাঁর সহকর্মীরা। বিজেপি নেত্রী তথা অভিনেত্রীকে হত্যার পিছনে মূল কারণ এটিই মনে করছেন তাঁর ভাই রিঙ্কু ঢাকা। যদিও পুলিশ সূত্রে এখনও কিছু নিশ্চিত ভাবে জানানো হয়নি। ঘটনার তদন্ত চলছে। অভিযুক্ত দুই সহকর্মী সুধীর সাঙ্গোয়ান এবং তাঁর সহযোগী সুখবিন্দর সিংহকে পালা করে জেরা করা হচ্ছে।
রিঙ্কু জানান, সোনালির বাড়িতে একাধিক বার চুরির চেষ্টা করেছে তাঁর সহকর্মীরা। ২০২১ সালে ১ ফেব্রুয়ারি অভিনেত্রীর হিসারের বাসভবনে চুরির ঘটনা ঘটে। গোয়ায় থাকাকালীন সোনালি জানতে পারেন, সুধীর এবং তাঁর সঙ্গী মিলেই সেই কাণ্ড ঘটিয়েছিলেন। জানা মাত্রই বাড়িতে ফোন করে জানান, পুলিশে খবর দিতে। তবে তার পরই মাদকে রাসায়নিক মিশিয়ে জোর করে খাইয়ে দেওয়া হয় সোনালিকে।
তবে রিঙ্কু জানান, সোনালির মৃত্যুর পর আরও এক বার চুরি হয় তাঁর ফার্মহাউসে। সেখান থেকে ল্যাপটপ, মোবাইল ফোন এবং সিসিটিভি ফুটেজ চুরি গিয়েছে। তাঁর কথায়, “খামারবাড়ির তত্ত্বাবধায়ক, সতীশ, আমাদের এই বিষয়ে অবহিত করেছেন। আমরা স্থানীয় থানায় একটি অভিযোগ দায়ের করেছি।”
রিঙ্কুর দাবি, “আমরা চাই বিচার হোক। অপরাধীরা উপযুক্ত শাস্তি পাক।”
এ পর্যন্ত তদন্তে জানা গিয়েছে, পার্টিতে জোর করে রাসায়নিক মেশানো মাদক খাওয়ানো হয়েছিল অভিনেত্রী তথা বিজেপি নেত্রী সোনালি ফোগটকে। খাইয়েছিলেন তাঁরই দুই সহযোগী, যাঁরা এখন তাঁর মৃত্যুতে জড়িত থাকার অভিযোগে গ্রেফতার হয়েছেন। ধৃতদের জেরা করে এই তথ্য জেনেছে গোয়া পুলিশ। এই সংক্রান্ত সিসিটিভি ফুটেজও হাতে এসেছে তাদের।
শুক্রবার ইনস্পেক্টর ওমবীর সিংহ বিষ্ণোই বলেন, ‘‘সিসিটিভি ফুটেজ খতিয়ে জানা গিয়েছে, অভিযুক্ত সুধীর সাঙ্গোয়ান এবং তাঁর সহযোগী সুখবিন্দর সিংহ একটি হোটেলে মৃত সোনালির সঙ্গে পার্টি করছিলেন। দেখা গিয়েছে, ওই দু’জনের মধ্যে এক জন জোর করে মৃতাকে কিছু একটা খাওয়াচ্ছেন।’’ ২২ অগস্ট সোনালির সঙ্গে গোয়া গিয়েছিলেন এই দু’জন।
ওমবীর আরও বলেন, ‘‘সুখবিন্দর এবং সুধীর জেরায় স্বীকার করেছেন, তাঁরা ইচ্ছাকৃত সোনালিকে রাসায়নিক মেশানো পানীয় খেতে বাধ্য করেছেন।’’ ধৃতেরা এ-ও জানিয়েছেন, এই কাণ্ড ঘটেছিল উত্তর গোয়ার আঞ্জুনা সৈকতের কার্লিস নামে একটি রেস্তরাঁয়। রাসায়নিক মেশানো মাদক খেয়ে অসুস্থ হয়ে পড়েছিলেন সোনালি। এর পর তাঁকে হোটেলে নিয়ে যান ওই দু’জন। সেখান থেকে সেন্ট অ্যান্থনি হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হয় বিজেপি নেত্রীকে। হাসপাতালের চিকিৎসকরা তাঁকে মৃত ঘোষণা করেন। জেরায় উঠে আসা তথ্য নিয়ে আরও তদন্ত করছে গোয়া পুলিশ বলে জানিয়েছেন ওমবীর।
সোনালির ভাই রিঙ্কু ঢাকা তাঁর মৃত্যুতে থানায় অভিযোগ দায়ের করেছিলেন। জানিয়েছেন, সোনালির সহকারী সুধীর এবং সুখবিন্দর খুন করেছেন তাঁকে। ‘‘সোনালির সম্পত্তি এবং টাকাপয়সা নিয়ে তাঁর রাজনৈতিক কেরিয়ার শেষ করাই ছিল উদ্দেশ্য,’’ দাবি রিঙ্কুর। তাঁর আরও অভিযোগ, সোনালির সহকারী মাদক খাইয়ে ধর্ষণও করেছিলেন অভিনেত্রীকে।
একটি সূত্র অভিযোগ করেছে, সুধীর এবং সুখবিন্দরকে সাহায্য করছেন হরিয়ানার বিধায়ক গোপাল কাণ্ডা। সোনালির ভাই রিঙ্কু অবশ্য সংবাদমাধ্যমকে জানিয়েছেন, তিনি এ রকম কোনও অভিযোগ করেননি। রিঙ্কু দাবি করেছেন, গোয়ায় সোনালির যে ময়নাতদন্ত হয়েছিল, সেই রিপোর্টে বলা হয়েছে, চারটি আঘাত এবং বিষক্রিয়ায় মৃত্যু হয়েছে সোনালির। প্রসঙ্গত, গোয়া পুলিশ আগেই জানিয়েছে, সোনালির শরীরে ভোঁতা অস্ত্রের আঘাত মিলেছে। কোনও ধারালো অস্ত্রের আঘাত-চিহ্ন দেখা যায়নি।টিকটক ভিডিয়োর মাধ্যমে নজর কেড়েছিলেন সোনালি। ২০১৯ সালে হরিয়ানা বিধানসভা নির্বাচনে বিজেপির টিকিটে লড়ে পরাজিত হন তিনি।