কেন এ ভাবে মৃত্যু? উত্তর হাতড়াচ্ছেন বিদিশা দে মজুদারের নিকটজন। ছবি: সংগৃহীত।
চোখ বন্ধ। মুখে কাপড় গোঁজা। মৃত্যুযন্ত্রণার কাতরানি যাতে কেউ শুনতে না পান তাই কি এই পন্থা?
উত্তর হাতড়াচ্ছেন বিদিশা দে মজুদারের নিকটজন। আনন্দবাজার অনলাইনের কাছে তাঁর বক্তব্য, ‘‘বিকেলে ফোন পেয়েই ছুটতে ছুটতে নাগেরবাজার রামগড় কলোনিতে। সারা রাস্তা ঈশ্বরকে ডাকতে ডাকতে এসেছি। খবরটা যেন মিথ্যে হয়। যেন গিয়ে দেখি বিদিশা সুস্থ আছে।’’
বাড়ির কাছে পৌঁছেই বুকটা ছ্যাঁৎ করে ওঠে তাঁর। ফ্ল্যাটের ভিতরে বাইরে পুলিশ দাঁড়িয়ে। প্রশাসনের অনুমতি নিয়ে ফ্ল্যাটের দরজায় পৌঁছন নামপ্রকাশে অনিচ্ছুক বিদিশার আত্মীয়। ভেজানো দরজা খুলতেই দেখেন, ওড়নায় ফাঁস লাগিয়ে বিদিশা ঝুলছেন। শরীরে বিকৃতি দেখা দিয়েছে। নাক থেকে তরল পদার্থ বেরিয়ে এসে জমাট বেঁধে ঝুলছে। প্রত্যক্ষদর্শীর কথায়, ঘরে বাতানুকূল যন্ত্র নেই। অথচ তরল জমাট বেঁধে গিয়েছে। সেটা দেখেই তাঁর অনুমান, মডেলের মৃত্যু হয়েছে সম্ভবত বুধবার ভোরেই।
সাধারণত গলায় ফাঁস দিলে জিভ এবং চোখ বেরিয়ে আসে। এ ক্ষেত্রে বিদিশার চোখ বন্ধই ছিল। পাশাপাশি, মুখে কাপড় গোঁজা থাকায় চিৎকার শোনা যায়নি। জিভও হয়তো বেরিয়ে আসতে পারেনি। অনেক সময় পরনের পোশাকও নষ্ট হয়ে যায় প্রস্রাবে। ঘনিষ্ঠ সূত্রের দাবি, গাঢ় রঙের ট্রাউজার পরে থাকায় সেটিও বোঝা সম্ভব হয়নি। তিনি যখন বেরিয়ে আসছেন তখন দেহ নামিয়ে সাদা কাপড়ে ঢেকে দেওয়া হচ্ছে।
ফ্ল্যাটের এক জন আত্মহত্যা করেছেন, এই খবর প্রকাশ্যে আসতে সারা দিন লেগে গেল? একই প্রশ্ন প্রত্যক্ষদর্শী করেছিলেন বিদিশার ফ্ল্যাটমেট দিশানীকে। তাঁর যুক্তি, বিদিশা কাজ না থাকলে দেরি করে উঠতেন। তাই বন্ধ দরজা দেখে ভেবেছিলেন তিনি ঘুমোচ্ছেন। নির্দিষ্ট সময় পেরিয়ে যাওয়ার পরেও সাড়া না পাওয়ায় প্রথমে বাইরে থেকে বিদিশাকে ডাকেন দিশানী। তার পর দরজা খুলে আবিষ্কার করেন তাঁর ঝুলন্ত দেহ। দিশাহারা দিশানী প্রথমে ফোন করেন বিদিশার মডেল বান্ধবীকে। যিনি বিদিশাকে এই ফ্ল্যাটের হদিস দিয়েছিলেন। ফোন যায় স্থানীয় থানায়, এবং মৃতার পরিবারের কাছে।
মেয়ের মৃত্যুর খবরে ভেঙে পড়েছেন বিদিশার মা। ঘন ঘন মূর্ছা যাচ্ছেন। মেয়েকে হারিয়ে কথা বন্ধ বাবার। প্রত্যেকের একই প্রশ্ন, ভালই তো উন্নতি করছিলেন। কেন এ ভাবে চলে গেলেন বিদিশা?