‘ভটভটি’তে বিবৃতির সাজ
এই বর্ষায় শহরে জলপরীদের গান শোনা যাবে। আর জলের ভিতরের শব্দ। জলের তলায় যাওয়া যাবে? হ্যাঁ যাবে। জলের তলায় প্রাসাদে নিয়ে যাবে ‘ভটভটি’। সঙ্গী হবে জলপরী৷ স্থল থেকে কলকাঠি নাড়বেন পরিচালক তথাগত মুখোপাধ্যায়।
বহু বছরের প্রচেষ্টায় জলের গল্প পর্দায় ফুটিয়ে তুলেছেন তিনি। কোভিড পরিস্থিতির আগেই তৈরি হয়ে গিয়েছিল তথাগতর নতুন ছবি ‘ভটভটি’। কিন্তু গত দু’বছর ধরে আলমারিতে তুলে রাখা ছিল। এ বারের বর্ষায় আর বাঁধ মানবে না জল। একেবারে উপচে পড়বে প্রেক্ষাগৃহে। দু’বছর আগে মুক্তি পাওয়া টিজার আবার মুক্তি পেল সম্প্রতি। এই ছবিতে অভিনয় করেছেন ঋষভ বসু, বিবৃতি চট্টোপাধ্যায়, দেবলীনা দত্ত, রজতাভ দত্ত, প্রয়াত অভিনেতা মনু মুখোপাধ্যায়, দীপঙ্কর দে এবং মমতাশঙ্কর। তা ছাড়াও গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকায় দেখা যাবে অনির্বাণ চক্রবর্তী, লামা হালদার, দেবপ্রসাদ হালদার, অমিত সাহা, নিমাই দে এবং খোদ পরিচালককে।
উচ্চপ্রশংসিত সেই টিজার নিয়েই পরিচালকের সঙ্গে আড্ডা দিল আনন্দবাজার অনলাইন। জানা গেল, জলের তলার দেশের গল্প।
ছবির পোস্টার
ছবিটির কেন্দ্রে রয়েছেন প্রান্তিক মানুষেরা। যাঁরা গঙ্গা রক্ষা করার জন্য লড়াইয়ে নেমেছেন৷ আর তাঁদেরই প্রতিনিধি ‘ভটভটি’। একটি ছেলে। যাকে দেখলে লোকে খ্যাপা বলে। কিন্তু তার মনের জগৎ বিস্তৃত। তার মনেই রয়েছে এক জলপরী। সেই জলপরীর সঙ্গে সে জলের ভিতর যায়৷
তথাগতর সঙ্গে কথা বলে জানা গেল, ৩০ ফুট জলের তলায় শ্যুটিং হয়েছে সেই সমস্ত দৃশ্য। তার জন্য অভিনেতা ঋষভ বসু (‘ভটভটি’) এবং অভিনেত্রী বিবৃতি চট্টোপাধ্যায় (জলপরী বা মৎস্যকন্যা)-কে এক মাস ধরে স্কুবা ডাইভিংয়ের (ডুবসাঁতার) প্রশিক্ষণ নিতে হয়েছে। কিন্তু তা সত্ত্বেও ঘণ্টার পর ঘণ্টা জলের তলায় শ্যুটিং করতে গিয়ে বেগ পেতে হয়েছে নায়ক-নায়িকাকে।স্কুবা ড্রাইভারদের সঙ্গে জলের তলায় যেতে হয়েছে তাঁদের।অক্সিজেন মাস্ক খুলে প্রায় এক মিনিটের শট চলেছে। তার পরেই আবার মাস্ক পরে নিয়েছেন ঋষভ-বিবৃতি। তাঁদের সঙ্গে ছিলেন ক্যামেরা পার্সনও। তাঁর মুখে ছিল অক্সিজেন মাস্ক। জলের তলায় মাইক্রোফোন রাখা ছিল। জলের উপর থেকে পরিচালক যেমন যেমন নির্দেশ দিয়েছেন, তেমন ভাবেই অভিনয় করেছেন শিল্পীরা। এ রকম অবস্থায় একাধিক বার হাবুডুবু খেয়েছেন বিবৃতি। মাত্র এক মাসের প্রশিক্ষণে ডুবসাঁতার রপ্ত করতে পারেননি নায়িকা। কিন্তু তার পরেও গোটা শ্যুট করেছেন বিবৃতি এবং ঋষভ।
মুম্বইয়ের সুইমিং পুলে হয়েছে শ্যুটিং।
তথাগত বললেন, “জলের নীচে ক্রোমা কাপড় টাঙিয়ে শ্যুটিং হয়েছে। মুম্বইয়ের সুইমিং পুল ভাড়া করেছিলাম আমরা। সেখানে শ্যুটের পর কলকাতায় ভিএফএক্স-এর কাজ হয়েছে। বাংলা ছবিতে এর আগে এ রকম ভিএফএক্স দেখা যায়নি।”
জলের তলাতেই বানানো হয়েছিল সেট। ৩০ ফুট গভীর জলের তলায় রাজপ্রাসাদ মাথা উঁচু করে দাঁড়িয়েছিল। সেখানে ঢুকে গিয়ে অভিনয় করেছেন শিল্পীরা।
৩০ ফুট জলের তলায় শ্যুটিং হয়েছে সেই সমস্ত দৃশ্য।
টলিপাড়ার গুঞ্জন, এই ‘ভটভটি’র শ্যুটিংয়ের পরেই বিবৃতি এবং তথাগতর মধ্যে ঘনিষ্ঠতা তৈরি হয়৷ কিন্তু তথাগতর কথায় জানা যায়, বিবৃতির এই ছবির অংশ হওয়ারই কথা ছিল না। বিবৃতি নাকি অডিশনে এসে চিত্রনাট্য পড়েই পালিয়ে গিয়েছিলেন। সে কথা কানে গিয়েছিল পরিচালকের। তিনি শুনেছিলেন, মুম্বই থেকে এক জন বাঙালি অভিনেত্রী এসেছিলেন অভিনয় করতে। কিন্তু চিত্রনাট্য পড়ে বেরিয়ে গিয়েছিলেন। তথাগত খানিক বিরক্তও হয়েছিলেন। কারণ চেহারা অনুযায়ী জলপরীর চরিত্রের সঙ্গে মানিয়েছিল বিবৃতিকে। কিন্তু তার পরে আরও অনেক শিল্পীকে জলপরীর চরিত্রে অডিশন নেওয়া হয়। কাউকেই পছন্দ হয় না। ছবিটির এক জন প্রযোজক বলেন, “যে অভিনেত্রী পালিয়ে গিয়েছিলেন, তাঁর সঙ্গে এক বার কথা বলা যায় না?” তথাগতর উত্তর ছিল, “যে চিত্রনাট্য পড়েই পালিয়ে গিয়েছে, সে অভিনয় করবে কী ভাবে?” কিন্তু উপায় না থাকায় তথাগতর অনিচ্ছা সত্ত্বেও বিবৃতিকে ডাকা হয়। নায়িকা জানান, চিত্রনাট্যে ধর্ষণ, অ্যাসিড আক্রমণ ইত্যাদির কথা পড়ে নেতিবাচক হয়ে পড়েছিলেন তিনি। ভাল লাগছিল না তাঁর। তাই চলে যান।
সকলের অনুরোধে তাঁকে নিজের মতো করে চিত্রনাট্য পড়তে বলা হয়। বিবৃতি পড়েন। পছন্দ হয় পরিচালকের। তার পরেই জলপরী হয়ে ওঠেন তিনি। আর তৈরি হয় ‘ভটভটি’। যদি গুঞ্জন সত্যি হয়, তবে এই ছবির মাধ্যমেই কাছাকাছি আসেন দু’টি মানুষও। তথাগত এবং বিবৃতি।