গানের ক্ষেত্রে যেমন কবীর সুমনের প্রতিভার তুলনা হয় না, ভণ্ডামোর ক্ষেত্রেও তাঁর প্রতিভার তুলনা হয় না, দাবি তসলিমার। গ্রাফিক: শৌভিক দেবনাথ।
যে গানগুলি লিখে এবং গেয়ে কোটি বাঙালির হৃদয় ছুঁয়ে গিয়েছিলেন, সেই গানগুলির কথা আদৌ নিজে বিশ্বাস করেন বা করতেন কবীর সুমন? বৃহস্পতিবার তাঁর ৭৫তম জন্মদিনে প্রশ্নটি তুললেন লেখক তসলিমা নাসরিন। সুমনকে নিয়ে একটিও ভাল কথা লিখতে তাঁর বাধছিল বলে জানিয়েছেন। মনে পড়ে যাচ্ছিল ২০০৭ সালে কলকাতা থেকে তসলিমাকে অন্যত্র চলে যেতে বলার পক্ষেই ছিলেন ‘গানওয়ালা’। অনেক গুণ সত্ত্বেও কেন তাঁকে শ্রদ্ধা করতে পারেন না, তা বুঝিয়ে দীর্ঘ পোস্ট করেন লেখক।
তসলিমা ফেসবুকে লেখেন, “এই সুমনকে আমি ‘মুসলমান সুমন’ বলি না, এই সুমনকে আমি ‘হিপোক্রেট সুমন’ বলি। আমি বিশ্বাস করি না এই সুমন আল্লাহ রসুল নামাজ রোজায় বিশ্বাস করেন। এই সুমন স্বার্থের জন্য যা ইচ্ছে তাই করতে পারেন। যদি দেখেন আঘোরি বা নাঙ্গা সন্ন্যাসী সাজলে কিছু ফায়দা হবে, বা লোককে বোকা বানিয়ে মজা লোটা যাবে, তিনি তাই করবেন।”
অনেক গুণ সত্ত্বেও কেন সুমনকে শ্রদ্ধা করতে পারেন না তা বুঝিয়ে দীর্ঘ পোস্ট করেন তসলিমা। — ফাইল চিত্র।
আনন্দবাজার অনলাইনে সম্প্রতি সাক্ষাৎকার দিয়েছিলেন সুমন। তাতে তাঁর বলা কিছু কথা নিয়েই বিতর্কের আগুনে ঘি পড়ে। সঙ্গীতশিল্পী তাঁর অফুরান উদ্যমের রহস্য প্রসঙ্গে বলেছিলেন, “কাম! মুক্ত কাম! যেখানে অশ্লীলতাই সব। বয়স হয়েছে। রাতে ভাল ঘুম হয় না। কিন্তু আমি বিছানায় চূড়ান্ত ভাবে সক্ষম। নারীরা আমাকে সমৃদ্ধ করেছেন। নতুন ধারণা আবিষ্কার করে প্রেম করাতেই আমার এনার্জি। আঁতলামি নয়, প্রেম করতে হবে শরীর দিয়ে, ভালবাসা দিয়ে এবং সম্মান দিয়ে।”
এই বক্তব্যকে নিশানা করে পাল্টা দেন তসলিমাও। তাঁর দাবি, এ কথা সুমন নারীকে বোকা বানাতে বলছেন নাকি পুরুষকে? কটাক্ষ করেন সুমনের সঙ্গে তাঁর প্রাক্তন সাবিনা ইয়াসমিনের সম্পর্ক নিয়েও।
এর পরই সুমনের আদর্শ নিয়ে প্রশ্ন তোলেন তসলিমা। এক বার বাম শিবিরে এক বার ঘাসফুলে— তিনি আসলে কোথায়? গাড়ি নেই দেখিয়েই বা কী প্রমাণ করতে চান তিনি? কড়া হন তসলিমাও। লেখেন, “আমার আজ সন্দেহ হয়, যে অসাধারণ গানগুলো তিনি লিখেছিলেন, গেয়েছিলেন, সেই গানের কথাগুলো তিনি তখনও বিশ্বাস করতেন না, এখনও বিশ্বাস করেন না। গানের ক্ষেত্রে যেমন তাঁর প্রতিভার তুলনা হয় না, ভণ্ডামোর ক্ষেত্রেও তাঁর প্রতিভার তুলনা হয় না।”
উগরে দেন অতীতের ক্ষোভ, যখন সুমনকে পাশে চেয়েও পাননি। অভিমানী তসলিমার স্বর শোনা যায়, “মনে আছে ২০০৭ সালে তিনি আমার বিরুদ্ধে তান্ডব করা কলকাতার ফতোয়াবাজ জিহাদিদের পক্ষ নিয়েছিলেন?”
যদিও আনন্দবাজার অনলাইনের সঙ্গে সাক্ষাৎকারে রবি ঠাকুরের উদ্ধৃতি টেনে এনে সুমন জানিয়েছিলেন, সারা জীবন একই পথে চলা তাঁরও কর্ম নয়।
তাঁর কথাতেই ছিল ঘন ঘন শিবির পরিবর্তনের ব্যখ্যা। বলেছেন, “কেউ বলতেই পারেন যে আমি কোটেশ্বর রাওয়ের (কিষেনজি) পরিচিত ছিলাম। তা সত্ত্বেও আমি তৃণমূলের সমর্থক। কোনও দিন আমি হয়তো চিনপন্থী হয়ে যাব। কোনও দিন ওবামার...। ভবিষ্যৎ কেউ জানে না।”