নুসরত জাহান এবং তসলিমা নাসরিন।
নুসরত জাহানের মা হওয়ার খবরে তোলপাড় নেটমাধ্যম। অভিনেত্রীর অনাগত সন্তানের পিতৃপরিচয় নিয়ে চলছে অন্তহীন চর্চা, কাটাছেঁড়া। এমন অবস্থায় মুখে কুলুপ এঁটেছে তারকামহল। শব্দহীন স্বয়ং হবু মা। এই নীরবতায় সবাক তসলিমা নাসরিনের কলম। পশ্চিমবঙ্গের সাংসদ তথা অভিনেত্রী নুসরতের প্রসঙ্গে নেটমাধ্যমে লিখলেন কোভিড থেকে সেরে ওঠা লেখিকা তসলিমা।
তসলিমার পোস্টের শুরুতেই নুসরতের সঙ্গে নিখিল জৈনের সম্পর্কের খতিয়ান। দু’জনের সম্পর্ক যে আর মধুর নয়, ‘খবর’ দেখে তা বুঝেছেন তসলিমা। তাঁর প্রশ্ন, ‘…এই যদি পরিস্থিতি হয়, তবে নিখিল আর নুসরতের ডিভোর্স হয়ে যাওয়াই কি ভালো নয়? অচল কোনও সম্পর্ক বাদুড়ের মতো ঝুলিয়ে রাখার কোনও মানে হয় না। এতে দু’পক্ষেরই অস্বস্তি’।
বিতর্ক কখনও পিছু ছাড়েনি তসলিমার। খানিক নুসরতের মতোই। আবার অভিনেত্রীর মতো লেখিকাও বরাবর চলেছেন নিজের শর্তে। খুনের হুমকিও শুনেছেন ধর্ম এবং পুরুষতন্ত্রের বিরুদ্ধে নিজের মত প্রকাশ করার জন্য। নেটমাধ্যমে এই লেখা মাধ্যমে নুসরত এবং অসাম্প্রদায়িকতাকে পাশাপাশি নিয়ে এলেন তসলিমা। লিখলেন, ‘যখন নুসরত আর নিখিল বিয়ে করলেন, বেশ আনন্দ পেয়েছিলাম। ঠিক যেমন আনন্দ পেয়েছিলাম, সৃজিত আর মিথিলা যখন বিয়ে করেছিলেন। অসাম্প্রদায়িকতায় বিশ্বাস করি বলে দুই ধর্মের মানুষের মধ্যে বিয়ে হলে খুব স্বাভাবিক কারণেই পুলকিত হই’। তবে মাত্র কয়েক মাসেই ‘চোখ জুড়ানো জুটি’-র পথ চলা থেমে যাওয়া দেখতে ভাল লাগছে না তাঁর। সে কথাও অকপটে স্বীকার করেছেন ‘লজ্জা’-র রচয়িতা।
যাঁর জন্য এত শব্দ ব্যয়, বহুদিন পর্যন্ত তাঁর কোনও কাজের সঙ্গে পরিচয় ছিল না তসলিমার। কিছুদিন আগে ব্রাত্য বসুর ‘ডিকশনারি’ ছবিতে নুসরতের অভিনয় দেখেছেন। মুগ্ধ হয়েছেন। টলিপাড়ার অভিনেত্রীকে দেখে হলিউডের অ্যাঞ্জেলিনা জোলির কথা মনে পড়েছে তাঁর। ২ দেশের ২ নায়িকার সাদৃশ্য খুঁজে লিখেছেন, ‘মেয়েটি অনেকটা অ্যাঞ্জেলিনা জোলির মতো দেখতে, অভিনয়ও করে বেশ চমৎকার’।
ব্যক্তিগত আলাপ নেই। তবে পর্দায় নুসরতকে দেখে তাঁকে ‘আত্মনির্ভর’ বলে মনে হয়েছে লেখিকার। তসলিমা মনে করেন, একজন নারী স্বনির্ভর এবং সচেতন হলে সন্তানের অভিভাবক তিনি নিজেই হতে পারেন। পিতৃপরিচয়ের মুখাপেক্ষী তাঁকে হতে হয় না। নুসরতকে সেই ভাবেই সন্তানকে বড় করার পরামর্শ দিয়েছেন তিনি। তসলিমার অনুমান, সুখের সন্ধানে নিখিলের সঙ্গে দাম্পত্য থেকে বেরিয়ে যশের সঙ্গে তৈরি সম্পর্কের পরিণতি শেষমেশ একই হবে। কারণ তিনি মনে করেন, ‘নিখিল এবং যশের মধ্যে কী এমন আর পার্থক্য! পুরুষ তো শেষ পর্যন্ত পুরুষই। এক জনকে ত্যাগ করে আরেক জনকে বিয়ে করলে খুব যে সুখময় হয়ে ওঠে জীবন, তা তো নয়’। তাই মনের মতো সঙ্গী পাওয়ার এই ‘রেস’ থেকে নুসরতকে বিরত থাকার উপদেশ দিয়েছেন তিনি। কারণ তাঁর কথায়, ‘স্বাধীনচেতা নারীর কাঙ্ক্ষিত পুরুষ কল্পনায় থাকে, বাস্তবে নয়’।