‘আওয়ারা ভমরে যো হলে হলে গায়ে’, মনে পড়ে গানটা? কাজলের সেই নেচে নেচে গান করার দৃশ্য? ৯০-এর দশকের অন্যতম জনপ্রিয় গান। ১৯৯৭ সালের 'স্বপনে' সিনেমায় এই গানটির প্লে-ব্যাক করেছিলেন হেমা সরদেশাই। বহু সুপারহিট গান গাওয়া সেই গায়িকা এখন কী করছেন?
বলিউডের প্লে-ব্যাক গায়িকা হেমা সরদেশাই। ৯০-এর দশকে যখন কুমার শানু, উদিত নারায়ণ বা অলকা যাজ্ঞিক বলিউড কাঁপাচ্ছেন, তখনই উদয় হেমার। সেই সময় অনেক হিট গান তিনি গেয়েছেন।
‘স্বপনে’, ‘বিবি নম্বর ওয়ান’, ‘জানম সমঝা করো’, ‘সোলজার’, ‘জোশ’ ইত্যাদি ছবিতে তিনি কাজ করেছেন এবং একের পর এক জনপ্রিয় গান তিনি গেয়েছেন। ফিল্মে তাঁর ডেবিউ ১৯৯৬ সালে ‘তেরে মেরে স্বপনে’ সিনেমায় টাইটেল ট্র্যাক গাওয়ার মধ্যে দিয়ে।
বলিউডে এখন আর সে ভাবে দেখা না গেলেও বিভিন্ন জায়গায় অনুষ্ঠান করেন এই গায়িকা। বিদেশেও অনেক জায়গায় অনুষ্ঠান করেছেন। নতুন নতুন গানের সঙ্গে নিজেকে তুলে ধরছেন নতুন রূপে।
২০১৭ সালে আমেরিকায় তাঁর ডেবিউ আন্তর্জাতিক গান 'পাওয়ার অব লভ' রিলিজ করেন। সেই গানের ভিডিয়োতে বলিউড টেলিভিশন অভিনেতা মিশাল রাহেজা-কে দেখা যায়। সেই সঙ্গে গ্র্যামি পাওয়া জেয়ার্ড লি গসলিনও এই প্রোজেক্টে কাজ করেছেন।
চলতি বছর জুলাই মাসে হেমা জানান, তিনি প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী এবং গোয়ার মুখ্যমন্ত্রীর কাছে আর্জি জানাবেন স্থানীয়দের চাকরির সুরক্ষা নিয়ে। তাঁর দাবি, গোয়ার বাইরে থেকে অনেকেই এসে চাকরি পেয়ে যাচ্ছেন, সেখানে রাজ্যের স্থানীয় বাসিন্দাদের চাকরি পেতে অসুবিধে হচ্ছে।
এর আগে ২০১৩ সালে একটি ইংরেজি ছবি 'দ্য কফিন মেকার'-এর জন্য গান লেখেন হেমা। এই ছবিতে নাসিরুদ্দিন শাহ-কে প্রধান চরিত্রে দেখা গিয়েছিল। ছবিটি ২০১৩ সালে ৪৪তম ইন্টারন্যাশনাল ফিল্ম ফেস্টিভ্যাল অব ইন্ডিয়ায় মনোনীত হয়।
সরদেশাই-এর জনপ্রিয় গানের মধ্যে রয়েছে ‘চক দে ইন্ডিয়া’ থেকে ‘বাদল পে পাও হ্যায়’, ‘বাঘবান’ থেকে ‘চলি চলি ফির চলি’, ‘অশোক’ থেকে ‘সান সানানা’, ‘ইয়াদেঁ’ থেকে ‘এলি রে এলি’ ইত্যাদি।
২০১৭ সালে একটি বিতর্কে জড়িয়ে পরেন হেমা। সাধ্বী সরস্বতীর বিরুদ্ধে একটি প্রচারের আয়োজন করেন কয়েক জন শিল্পীকে নিয়ে। সাধ্বী সরস্বতী বলেছিলেন, যাঁরা গোমাংস খান তাঁদের মৃত্যুদণ্ড হওয়া উচিত। সেই বক্তব্যেরই প্রতিবাদ করেন হেমা।
বিভিন্ন রকম সমাজ সেবামূলক কাজের সঙ্গে যুক্ত রয়েছেন হেমা। এ ছাড়াও কেন্দ্রীয় সরকারের 'বেটি বাঁচাও বেটি পড়াও'-সহ আরও বেশ কিছু কর্মসূচির সঙ্গেও যুক্ত তিনি। ২০১৫ সালে মার্চে দিল্লিতে আয়োজিত কর্মবীর পুরস্কারের জন্য মনোনীত হন তিনি।
২০০৬ সালে গোমন্ত তেজস্বিনী পুরস্কার পান তিনি। গানের জগতে অসাধারণ সাফল্য পাওয়ায় তাঁকে এই সম্মান দেওয়া হয়। এ ছাড়াও ২০১৫ সালে অক্টবরে ৩৫তম ব্র্যান্ডস অ্যাকাডেমি অ্যাওয়ার্ড-এ 'আইকন অব দ্য ইয়ার' সম্মানে ভুষিত করা হয় তাঁকে।
২০১৮ সালে পানাজি-তে একটি আঞ্চলিক রাজনৈতিক দল কিছু গাছ কেটে ফেলার চেষ্টা করলে তিনি প্রতিবাদ করেন। তাঁর সঙ্গে ছিলেন ইতিহাসবিদ প্রজল সাখারদাণ্ডে, সমাজকর্মী প্যাট্রিসিয়া পিন্টোরা। কিন্তু শেষ পর্যন্ত তাঁদের এই প্রতিবাদ সফল হয়নি।
হেমা সরদেশাই ইনভেস্টমেন্ট ব্যাঙ্কার জেভিয়ার ডি’সুজাকে বিয়ে করেন। জেভিয়ার প্রথম জীবনে হকি খেলোয়াড় ছিলেন।
হেমার প্রথম জীবন কাটে গোয়ায়। তাঁর বাবা কাশিনাথ সরদেশাই ছিলেন পেশায় চিকিত্সক। গোয়ার একটি ক্রিকেট দলের অধিনায়ক ছিলেন তিনি। আট বছর বয়সে নবরাত্রি অনুষ্ঠানে প্রথম স্টেজে পারফর্ম করেন হেমা। গানের জগতে তাঁর প্রথম গুরু পণ্ডিত শুধাকর কারান্ডিকরের কাছে। এরপরে বিভিন্ন রকমের গান চর্চা করে নিজেকে প্রতিষ্ঠা করেন।
হেমা সরদেশাই ১৯৮৯ সাল থেকে এই বলিউড ইন্ডাস্ট্রির সঙ্গে যুক্ত। সিনেমা এবং টেলিভিশিনে বিভিন্ন কাজ করেছেন। লতা মঙ্গেশকর ছাড়া তিনিই একমাত্র গায়িকা যিনি ভারতের ৫০তম স্বাধীনতা দিবসের অনুষ্ঠানে পারফর্ম করেন।