শ্রীকান্ত
ঠিক দু’বছর আগে জানুয়ারির এক দুপুরে প্রযোজক শ্রীকান্ত মোহতার গ্রেফতারির খবরে জোর ধাক্কা খেয়েছিল টলিউড। ২০২১-এর ১১ জানুয়ারি খুশির হাওয়া ইন্ডাস্ট্রিতে, জামিন পেয়েছেন এসভিএফ-এর অন্যতম কর্ণধার। মাঝের দু’বছরে টলিউডের অনেক সমীকরণই বদলে গিয়েছে শ্রীকান্তের অনুপস্থিতিতে। তবে তাঁর জামিনের খবরে পরিচালক থেকে অভিনেতা সকলেই স্বস্তিতে। স্বস্তি কেন? টলিউডের সবচেয়ে ক্ষমতাশালী লোকটি জেলের ভিতরে থাকা মানে, গোটা ইন্ডাস্ট্রিই তো এক অর্থে সঙ্কটে।
শ্রীকান্তের গ্রেফতারির পরে সংস্থার ভবিষ্যৎ নিয়ে প্রশ্ন উঠেছিল। সেই সময়ে সংস্থা আর্থিক ভাবে দুর্বল হয়ে পড়েছিল বলেও শোনা গিয়েছিল। তবে পরপর কয়েকটি ছবির হিট হওয়া এবং ঝুঁকিহীন কম বাজেটে ছবি তৈরির স্ট্র্যাটেজি সংস্থাকে বিপদ বাড়তে দেয়নি। এসভিএফ সূত্রেও দাবি, শ্রীকান্তের গ্রেফতারির ঘটনার প্রভাব সংস্থার দৈনন্দিন কাজের উপরে পড়েনি।
এসভিএফ-এর ঘরের মেয়ে মিমি চক্রবর্তীর কথায়, ‘‘আমি ভীষণ খুশি এই খবরে। ওঁর অভাব সারাক্ষণ অনুভব করেছি।’’ শ্রীকান্তের গ্রেফতারির পরেই লোকসভা নির্বাচনে প্রার্থী হিসেবে মিমির নাম ঘোষণা করা হয়েছিল। সেই সময়ে অনেক বারই অভিনেত্রীর মুখে উঠে এসেছিল প্রযোজকের নাম। শ্রীকান্তের জামিনে নিজের আনন্দ ব্যক্ত করলেন পরিচালক অরিন্দম শীলও। বলছিলেন, ‘‘ঈশ্বরকে ধন্যবাদ, ও আবার আমাদের মাঝে ফেরত এল। গত দু’বছর অনেক ঝড়ঝাপ্টা সহ্য করেছে। বন্ধু হিসেবে ওর সঙ্গে ছিলাম, আছি এবং থাকব।’’ শ্রীকান্তের সঙ্গে অরিন্দমের বরাবরের হৃদ্যতা। কিন্তু প্রযোজকের গ্রেফতারির পরেই নানা কারণে সংস্থার সঙ্গে অরিন্দমের দূরত্ব তৈরি হয় এবং তিনি এসভিএফ ছেড়ে বেরিয়ে আসেন। পুরনো সম্পর্ক গড়ে উঠবে কি না, সময়ই বলবে। জামিনের খবরে খুশির টুইট রাজ চক্রবর্তী, প্রিয়ঙ্কা সরকার, তনুশ্রী চক্রবর্তীদের। মাঝের সময়টায় এসভিএফ-এর সঙ্গে দূরত্ব তৈরি হয়েছিল অভিনেতা যশ দাশগুপ্তের। প্রযোজকের জামিন পাওয়া প্রসঙ্গে তাঁর বক্তব্য, ‘‘ইন্ডাস্ট্রির জন্য দারুণ খবর। ওঁর হাত ধরেই আমার বড় পর্দায় আসা। সম্পর্কটা শুধু পেশাদারি নয়। এত দিন পর ওঁর মুক্তি আনন্দের এবং স্বস্তির।’’
গত দু’বছরে বড় পর্দাকে ক্রমশ কোণঠাসা করছে ওটিটি। ‘‘শ্রীকান্ত এই সবটা নিয়ে চর্চা করত। নতুন স্ট্র্যাটেজি তৈরিতে ওর জুড়ি মেলা ভার। ও ফিরে আসা মানে বাংলা ইন্ডাস্ট্রিতে ফের একটা সদর্থক বদল আসবে,’’ বলছিলেন শ্রীকান্তের বন্ধু-অভিনেতা রুদ্রনীল ঘোষ। এ দিকে ইন্ডাস্ট্রির অন্দরে শ্রীকান্তের বিজেপি আঁতাতের খবরও ঘুরছে। সে প্রসঙ্গ অবশ্য এড়িয়ে গেলেন অধুনা বিজেপি-ঘনিষ্ঠ এই অভিনেতা, ‘‘ও সব প্রসঙ্গ এখন থাক।’’
শ্রীকান্ত এত দিন রাজ্যের শাসকদলের কাছের লোক হিসেবে পরিচিত ছিলেন। তবে গত দু’বছরে খেলা অনেকটাই ঘুরেছে। ভোটের আগে শ্রীকান্তের জামিন পাওয়ার পিছনে অন্য অঙ্ক দেখছেন অনেকেই। ক্ষমতায় আসার পর শ্রীকান্ত মারফত টলিউডের রাশ নিজের হাতে রেখেছিলেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। এখন অবশ্য দিদির ডাকেই সকলে হাজির হন। শ্রীকান্ত বিজেপি শিবিরে গেলে কি টলিউডের একটা বড় অংশ তাঁর ডাকে গেরুয়া রং লাগাবে গায়ে? অবশ্য তার চেয়ে বড় প্রশ্ন, ফিরে এসে কি শ্রীকান্ত মোহতা তাঁর পুরনো দাপট এবং সম্ভ্রম বজায় রাখতে পারবেন?