আশির দশকের দূরদর্শন মানেই ‘কর্মচন্দ’। আর গোয়েন্দা কর্মচন্দ মানেই তাঁর সহকারী কিটি। এই দুই চরিত্র দর্শকদের নস্টালজিয়ার অঙ্গ। ‘কিটি’-কে দর্শকদের অন্দরমহলের অংশ করে তুলেছিলেন সুস্মিতা মুখোপাধ্যায়।
প্রথম থেকেই বড় পর্দায় বেশি অভিনয় না করে সুস্মিতা বেছে নিয়েছেন মঞ্চ এবং ছোট পর্দাকে।
জেসাস অ্যান্ড মেরি কলেজ এবং দিল্লি বিশ্ববিদ্যালয় থেকে পাশ করার পরে ন্যাশনাল স্কুল অব ড্রামায় ভর্তি হন। সেখান থেকে ১৯৮৩ সালে উত্তীর্ণ হন। এর পর যোগ দেন ব্যারি জনের থিয়েটার দলে।
আশির দশকে দূরদর্শনে প্রথমসারির অভিনেত্রী ছিলেন সুস্মিতা। ‘কর্মচন্দ’ তাঁর আইকনিক কাজের মধ্যে অন্যতম। দীর্ঘ তিন দশকের বেশি বিস্তৃত কেরিয়ারে ছোট পর্দায় আরও অনেক চরিত্র ফুটিয়ে তুলেছেন তিনি।
‘কহিঁ কিসি রোজ’, ‘তলাশ’, ‘কাব্যাঞ্জলি’, ‘কভি সাস কভি বহু’, ‘বালিকা বধূ’, ‘গঙ্গা’-সব বহু সিরিয়ালে অভিনয় করেছেন সুস্মিতা। তবে এখনও তাঁর নাম বললে ‘কিটি’ চরিত্রের কথাই সবার আগে মনে পড়ে।
এক সাক্ষাৎকারে সুস্মিতা নিজেও জানিয়েছেন, তিনি ‘চরিত্র’ হয়েই বেঁচে থাকতে চান। ‘নাম’ হয়ে নয়। এটাই তাঁর থিয়েটারজীবনের অভিজ্ঞতা।
একই ধরনের চরিত্রে অভিনয় করেও যাওয়াতেও তীব্র আপত্তি তাঁর। বার বার চেষ্টা করেছেন নিজের অভিনয়ের ছক ভেঙে ফেলার। পরিচিতি পেয়েছেন খলনায়িকার ভূমিকায় অভিনয় করে।
মঞ্চ ও দূরদর্শনের পাশাপাশি সুস্মিতা দাপটের সঙ্গে কাজ করেছে বড় পর্দাতেও। তবে নায়িকা হওয়ার দৌড়ে তিনি কোনওদিন অংশ নেননি। বরং, হতে চেয়েছেন অভিনেত্রী।
১৯৮৭ সালে সুস্মিতার আত্মপ্রকাশ হিন্দি ছবিতে। তাঁর প্রথম ছবি ‘ইয়ে ওহ মঞ্জিল তো নহিঁ’।
এর পর ‘ম্যায়ঁ জিন্দা হুঁ’, ‘প্রতিকার’, ‘ঘরজামাই’, ‘খলনায়ক’, ‘আদমি খিলোনা হ্যায়’, ‘কিং আঙ্কল’, ‘স্যর’, ‘দিল্লগি’, ‘গোলমাল’, ‘দোস্তানা’, ‘বাত্তি গুল মিটার চালু’-সহ বহু ছবির অন্যতম সম্পদ সুস্মিতার বলিষ্ঠ অভিনয়।
তবে মঞ্চাভিনয় তাঁর কাছে এখনও প্রথম প্রেম। জানিয়েছেন সুস্মিতা। সাধারণ জীবনযাপনে অভ্যস্ত হয়ে থিয়েটারে অভিনয় করে যাওয়া। এটাই তাঁর জীবনদর্শন।
তবে তিনি অভিনয়কে পেশা হিসেবে নিয়েছিলেন বাবা মায়ের ইচ্ছের বিরুদ্ধে। তাঁর বাবা মায়ের স্বপ্ন ছিল, সুস্মিতা আইএএস বা শিক্ষিকার পেশা গ্রহণ করুক।
সুস্মিতা তাঁর জীবনকে নিয়ে যান অন্য খাতে। নিজেই জানিয়েছে, কর্মচন্দে কাজ করার প্রস্তাব তাঁর প্রথমে ভাল লাগেনি। রাজি হতে সময় নিয়েছিলেন বেশ কিছুটা।
২০০৮-এ তিনি অভিনয় করেন হলিউডের ছবি ‘দ্য আদার এন্ড অব লাইন’-এ। সম্প্রতি অভিনয় করেছেন ওয়েবসিরিজেও।
পরিচালক সুধীর মিশ্র ছিলেন সুস্মিতার প্রথম পক্ষের স্বামী। কিন্তু পরে তাঁদের বিচ্ছেদ হয়ে যায়।
অভিনেতা ও রাজনীতিক রাজ বুন্দেলাকে পরে বিয়ে করেন সুস্মিতা। তাঁদের দুই ছেলের নাম রুদ্রাংশ এবং রুদ্রানুজ।
অভিনয়ের পাশাপাশি সুস্মিতা একটি স্বেচ্ছাসেবী সংগঠন পরিচালনা করেন। স্বামীর প্রযোজনা সংস্থারও গুরুত্বপূর্ণ দিক সামলান তিনি।
পাশাপাশি, তিনি এক জন লেখিকাও। ২০১৮ সালে প্রকাশিত হয়েছে তাঁর উপন্যাস ‘মি অ্যান্ড জুহিবেবি’। ১১ বছর ধরে অভিনয়ের ফাঁকে ফাঁকে বইটি লিখেছেন তিনি।