সুশান্তকাণ্ডে এ বার সিবিআই-এর মুখোমুখি রিয়া চক্রবর্তী। ফাইল চিত্র।
নয় ঘন্টা অতিক্রান্ত। এখনও ডিআরডিও গেস্টহাউজে রিয়া চক্রবর্তীকে জেরা করছে সিবিআই। রয়েছেন তাঁর ভাই শৌভিক চক্রবর্তীও। এই প্রথম বার রিয়াকে ডেকে পাঠাল গোয়েন্দা সংস্থা। অন্যদিকে আজ আবারও সিবিআই ডেকে পাঠায় সুশান্তের বন্ধু সিদ্ধার্থ পিঠানি এবং প্রাক্তন ম্যানেজার স্যামুয়েল মিরান্ডাকেও। সিবিআই সূত্রে খবর প্রত্যেককে আলাদা ভাবে জিজ্ঞাসাবাদ করছে সিবিআই। পাশাপাশি সুশান্তের 'ঘনিষ্ঠ' বন্ধু বলে নিজেকে পরিচয় দেওয়া সন্দীপ সিংহের খোঁজ মিলল আজ।
বৃহস্পতিবারও রিয়ার ভাই শৌভিককে অনেক ক্ষণ জিজ্ঞাসাবাদ করেন তদন্তকারীরা। শুরু হওয়ার ১৪ ঘণ্টা পরে রাত ১টা নাগাদ শেষ হয় শৌভিকের ম্যারাথন জেরাপর্ব। জিজ্ঞাসাবাদের জন্য ডাকা হয় সিদ্ধার্থ পিঠানিকেও। শুক্রবার সকাল ১০টার সময় তিনি তদন্তকারীদের মুখোমুখি হন রিয়া। সঙ্গে ছিলেন তাঁর আইনজীবী। সিদ্ধার্থ পিঠানিকে এ দিন প্রথমে ডিআরডিও গেস্ট হাউজে জিজ্ঞাসবাদ করলেও পরে হেডকোয়ার্টারে নিয়ে যায় সিবিআইয়ের দলটি। এরই সঙ্গে আজ হোটেল মালিক গৌরবকে ৩১ অগস্টের আগে হাজিরা দেওয়ার নির্দেশ দিয়ে হোটেলে নোটিস দিয়েছে সিবিআই। গৌরবের সঙ্গেই রিয়ার মাদক সম্পর্কিত চ্যাট কয়েক দিন আগে প্রকাশ্যে আসে। হোটেল ব্যবসার পাশাপাশি গৌরবের মাদক পাচার চক্রের সঙ্গেও যোগাযোগ রয়েছে কিনা তা খতিয়ে দেখতে চায় সিবিআই।
A post shared by Viral Bhayani (@viralbhayani) on
কী কী প্রশ্ন করা হতে পারে রিয়াকে? একটি সূত্র বলছে, সুশান্ত এবং তাঁর সম্পর্ক নিয়ে বিশদে জিজ্ঞাসাবাদ করা হবে রিয়াকে। কোথায় প্রথম আলাপ থেকে সুশান্তের পরিবারের সঙ্গে রিয়ার সম্পর্ক—সব দিক নিয়েই জানতে চাইবেন গোয়েন্দারা। জেরার বড় অংশ জুড়ে থাকবে তাঁদের বিলাসবহুল ইউরোপসফরও।
পাশাপাশি, রিয়ার কাছে গোয়েন্দারা জানতে চাইতে পারেন সুশান্ত সিংহ রাজপুতের স্বাস্থ্য সংক্রান্ত বেশ কিছু প্রশ্নও। রিয়া কি সুশান্তের হাতে ওষুধ দিতেন? যদি হ্যাঁ, তা হলে কার পরামর্শের ভিত্তিতে দিতেন? শোনা যাচ্ছে রিয়ার বাবা নাকি সুশান্তকে ওষুধ দিতেন। জানতে চাওয়া হবে সে প্রসঙ্গেও। এছাড়া হিন্দুজা হাসাপাতালে কেন সুশান্তকে ভর্তি করা হয়েছিল, অথবা গত ৮ জুন সুশান্তের বাড়ি ছেড়ে চলে যাওয়ার আগে রিয়া কি সুশান্তের পরিবারের লোকদের জানিয়েছিলেন সুশান্তের অবসাদগ্রস্ত অবস্থার কথা? সিবিআই গোয়েন্দাদের সামনে রিয়াকে এই প্রশ্নগুলিরও মুখোমুখি হতে হবে বলে মনে করা হচ্ছে।
অন্যদিকে আজ খোঁজ মিলেছে সুশান্তের বন্ধু সন্দীপ সিংহেরও। এর আগে হঠাৎই দিল্লি উড়ে গিয়েছিলেন সন্দীপ। সূত্রের খবর আপাতত তিনি মুম্বইতেই রয়েছেন। যদিও কেন তিনি দিল্লি গেলেন, তা তাঁকে জিজ্ঞাসা করা হলেও সংবাদমাধ্যমের সামনে মুখ খোলেননি। সুশান্ত কাণ্ডে সন্দীপের ভূমিকা নিয়েও উঠেছে প্রশ্ন। সুশান্তের কলরেকর্ড ঘেঁটে দেখা গিয়েছে গত এক বছর সুশান্তের সঙ্গে ফোনে কোনও যোগাযোগ হয়নি তাঁর। অথচ সুশান্তের মৃত্যুর পর অ্যাম্বুলেন্সে, হাসপাতালে দেখা গিয়েছে তাঁকে। মুম্বই পুলিশকে কয়েক বার ফোনও করেছিলেন তিনি। কিন্তু কেন? উঠেছে প্রশ্ন।
গত ১৪ জুন মুম্বইয়ে নিজের বাড়িতে উদ্ধার হয় অভিনেতা সুশান্ত সিংহ রাজপুতের ঝুলন্ত দেহ। তারপর থেকে প্রায় প্রতিদিনই এই ঘটনার চাঞ্চল্যকর দিক সামনে আসছে। প্রথমে ঘটনার তদন্ত করছিল মুম্বই পুলিশ। কিন্তু পরে সুশান্তের বাবা কেকে সিংহ অভিযোগ দায়ের করেন পটনার রাজীবনগর থানায়। তাঁর অভিযোগ, সুশান্তের অর্থ নয়ছয় করেছেন রিয়া এবং চক্রবর্তী পরিবারের বাকি সদস্যরা। কেকে সিংহের অভিযোগের ভিত্তিতে বিহার পুলিশও এই তদন্তে শামিল হয়।
গত ১৯ অগস্ট এই মৃত্যুরহস্যের তদন্তভার সিবিআই-এর হাতে তুলে দেয় সুপ্রিম কোর্ট। পরের দিন থেকেই সিবিআই-এর বিশেষ তদন্তকারী দল বা সিট কাজ শুরু করে। ঘটনার সঙ্গে জড়িত অনেককেই ইতিমধ্য়ে জেরা করেছেন গোয়েন্দারা। সিবিআই ছাড়াও তদন্ত করছে এনফোর্সমেন্ট ডিরেক্টরেট বা ইডি এবং নারকোটিক্স কন্ট্রোল ব্যুরো।
আরও পড়ুন: সুশান্ত-তদন্তে এ বার কি সন্ত্রাসদমন গোয়েন্দারা