গ্রেফতারের পরে নার্কোটিক্স কন্ট্রোল বুরোর (এনসিবি) দফতরে আনা হচ্ছে সুশান্ত সিংহ রাজপুতের বান্ধবী রিয়া চক্রবর্তীকে। মঙ্গলবার। ছবি: রয়টার্স।
তিন দিন জেরার পরে সুশান্ত সিংহ রাজপুতের বান্ধবী রিয়া চক্রবর্তীকে গ্রেফতার করল নারকোটিক্স কন্ট্রোল বুরো (এনসিবি)। রিয়ার বিরুদ্ধে দাখিল করা চার্জশিটে প্রয়াত অভিনেতাকে মাদক জোগানের অভিযোগ এনেছে এনসিবি। যা প্রমাণিত হলে দশ বছর পর্যন্ত জেল হতে পারে তাঁর। তবে রিয়া নিজেও মাদক সেবন করতেন, এ রকম কোনও উল্লেখ আজ এনসিবি-র করা রিম্যান্ড অ্যাপ্লিকেশনে নেই। দুপুরে গ্রেফতারের পরে রাতে রিয়াকে ১৪ দিনের বিচারবিভাগীয় হেফাজতে পাঠানো হয়েছে।
গত শুক্রবার এনসিবি গ্রেফতার করেছিল রিয়ার ভাই শৌভিক চক্রবর্তীকে। তার পরেই রিয়াকে জিজ্ঞাসাবাদ শুরু করে এনসিবি। পর পর তিন দিন ধরে চলে জিজ্ঞাসাবাদ। এনসিবি-র দাবি, আজ শৌভিককে সামনে বসিয়ে জিজ্ঞাসাবাদ করতেই ভেঙে পড়েন রিয়া। কবুল করে নেন, সুশান্তের জন্য মারিহুয়ানা-সহ নানা ধরনের মাদক জোগাড় করতেন তিনি।
২৮ বছর বয়সি অভিনেত্রীকে হেফাজতে না নিয়ে ১৪ দিনের বিচারবিভাগীয় হেফাজতের আবেদন করেছে নারকোটিক্স কন্ট্রোল বুরো। সংস্থার অশোক জৈনের কথায়, ‘‘রিয়ার বিরুদ্ধে আমাদের হাতে প্রমাণ রয়েছে। তার ভিত্তিতেই আমরা ওকে গ্রেফতার করেছি। আর তাকে হেফাজতে নেওয়ার দরকার নেই আমাদের।’’ মেডিক্যাল পরীক্ষার পরে রিয়ার শরীরে কোনও মাদক মেলেনি বলে জানিয়েছেন এই তদন্তকারী। রিয়ার কোভিড পরীক্ষাও হয়েছে। রিপোর্ট নেগেটিভ। মেডিক্যাল পরীক্ষার পরেই ভিডিয়ো লিঙ্কের মাধ্যমে আদালতে তোলা হয় অভিনেত্রীকে। মানেশিন্ডে জানিয়েছেন, ১৪ দিনের বিচারবিভাগীয় হেফাজতে রাখা হয়েছে রিয়াকে।
আরও পড়ুন: রিয়ার গ্রেফতারি নিয়েও কৃতিত্ব দাবি বিজেপির
মৃ্ত্যুর পরে...
• ১৪ জুন: সুশান্ত সিংহ রাজপুতের ঝুলন্ত দেহ উদ্ধার
• ২৫ জুলাই: ঘটনার ছ’সপ্তাহ পরে পটনায় এফআইআর দায়ের সুশান্তের বাবার, সুশান্তের বান্ধবী রিয়া চক্রবর্তী-সহ ছ’জনের নামে আত্মহত্যায় প্ররোচনা ও ১৫ কোটি টাকা তছরুপের অভিযোগ
• ২৮ জুলাই: মুম্বইয়ে পটনা পুলিশের দল
• ৩১ জুলাই: পটনায় করা এফআইআরের ভিত্তিতে স্বতঃপ্রণোদিত মামলা দায়ের করে তদন্ত শুরু এনফোর্সমেন্ট ডিরেক্টরেট (ইডি)-র
• ৪ অগস্ট: সিবিআই তদন্তের সুপারিশ করল নীতীশ কুমার সরকার। যার বিরুদ্ধে সুপ্রিম কোর্টে পাল্টা আবেদন রিয়ার
• ৬ অগস্ট: মুম্বই ছাড়ল পটনা পুলিশের দল
• ৭ অগস্ট: রিয়াকে ছ’ঘণ্টা ধরে জিজ্ঞাসাবাদ ইডি-র
• ১৯ অগস্ট: সিবিআই তদন্তের নির্দেশ সুপ্রিম কোর্টের
• ২০ অগস্ট: গভীর রাতে মুম্বই পৌঁছল সিবিআই
• ২১ অগস্ট: সুশান্তের বাড়িতে গিয়ে তদন্ত শুরু সিবিআইয়ের
• ২২ অগস্ট: সুশান্তের বন্ধু সিদ্ধার্থ পিঠানি ও দুই পরিচারককে পাঁচ ঘণ্টারও বেশি জিজ্ঞাসাবাদ সিবিআইয়ের। এর পরে আরও অন্তত ৭ বার এঁদের জিজ্ঞাসাবাদ করা হয়
• ২৬ অগস্ট: সুশান্ত সিংহ রাজপুতের বান্ধবী রিয়া চক্রবর্তীর বিরুদ্ধে ফৌজদারি মামলা দায়ের নার্কোটিক্স কন্ট্রোল বুরো (এনসিবি)-র। চার্জশিটে রিয়ার বিরুদ্ধে নিষিদ্ধ মাদক রাখা ও পাচার করার অভিযোগ
• ২৭ অগস্ট: ইডি-র তলব রিয়ার বাবা, প্রাক্তন সেনা অফিসার ইন্দ্রজিৎ চক্রবর্তীকে। রিয়ার ভাই শৌভিককে জিজ্ঞাসাবাদ সিবিআইয়ের
• ২৮ অগস্ট: রিয়াকে তলব সিবিআইয়ের। দশ ঘণ্টারও বেশি জিজ্ঞাসাবাদ
• ২৯ অগস্ট: রিয়াকে ফের জিজ্ঞাসাবাদ সিবিআইয়ের
• ১ সেপ্টেম্বর: রিয়ার বাবা ইন্দ্রজিৎ ও মা সন্ধ্যা চক্রবর্তীকে জিজ্ঞাসাবাদ সিবিআইয়ের
• ২ সেপ্টেম্বর: মামলায় প্রথম গ্রেফতার। এনসিবি গ্রেফতার করল মাদক সরবরাহকারী বসিত পরিহারকে
• ৪ সেপ্টেম্বর: ধৃত শৌভিক, দীনেশ সবন্ত, স্যামুয়েল মিরান্ডা
• ৬ সেপ্টেম্বর: রিয়াকে তলব এনসিবি-র
• ৭ সেপ্টেম্বর: ফের জিজ্ঞাসাবাদ রিয়াকে
• ৮ সেপ্টেম্বর: গ্রেফতার রিয়া
এনসিবি-র রিম্যান্ড অ্যাপ্লিকেশনে বলা হয়েছে, ‘‘জিজ্ঞাসাবাদে রিয়া কবুল করেছেন যে, শৌভিক, স্যামুয়েল এবং সুশান্তের পরিচারক দীপেশ সবন্তকে দিয়ে সুশান্তের জন্য মাদক সংগ্রহ করতেন তিনি। এই সংক্রান্ত টাকাপয়সার লেনদেনও তিনি নিজেই করতেন বলে জানিয়েছেন রিয়া।’’ তদন্তকারীদের দাবি, রিয়া জানিয়েছেন, মার্চ থেকে জুনের প্রথম দিক পর্যন্ত তিনি সুশান্তের জন্য মোট ১৬৫ গ্রাম মারিহুয়ানা জোগাড় করেছিলেন। এনসিবির দাবি, ‘‘এ থেকেই স্পষ্ট, ড্রাগ সিন্ডিকেটে রিয়ার যোগ ছিল।’’ যদিও অনেকে প্রশ্ন তুলছেন, মাদক কেনার সঙ্গে ড্রাগ সিন্ডিকেটে যোগ থাকার সম্পর্ক কী করে খুঁজে পেল এনসিবি! রিয়ার আইনজীবী সতীশ মানশিন্ডে বলেছেন, ‘‘মানসিক রোগ রয়েছে এবং মাদকের নেশাগ্রস্ত কাউকে ভালবেসেছিলেন, সেই কারণেই তিনটি কেন্দ্রীয় সংস্থা এক জন মহিলাকে হেনস্থা করছে।’’
আরও পড়ুন: বলিউডের ড্রাগস আসক্তির কাহিনি এ বার প্রকাশ্যে
১৪ জুন বান্দ্রার ফ্ল্যাটে সুশান্তের ঝুলন্ত দেহ মেলার পরে প্রায় দেড় মাস ধরে তদন্ত চালিয়েছে মুম্বই পুলিশ। বিহার পুলিশ তদন্তে নামার পর থেকেই মামলায় রাজনীতির রং লাগে। সমান্তরাল ভাবে তদন্ত চালাতে শুরু করে সিবিআই, এনসিবি এবং এনফোর্সমেন্ট ডিরেক্টরেট (ইডি)। এনসিবি-ই একে একে গ্রেফতার করেছে সুশান্তের বাড়ির পাচক দীপেশ সবন্ত, তাঁর বাড়ির ম্যানেজার স্যামুয়েল মিরান্ডা এবং রিয়ার ভাই শৌভিক চক্রবর্তীকে। এর কয়েক দিন আগে তারা গ্রেফতার করেছিল মাদক চক্রে জড়িত মুম্বইয়ের দুই ব্যবসায়ীকে। এনসিবি-র দাবি, এই দু’জনকে জেরা করেই তারা জানতে পেরেছে যে, সুশান্তকে মাদকের জোগান দিত শৌভিকরা। গ্রেফতারের পরে জেরার মুখে শৌভিক জানায়, দিদি রিয়ার নির্দেশেই সে সুশান্তের জন্য মারিহুয়ানা জোগাড় করত। বলিউডের মাদক যোগ অবশ্য নতুন নয়। এর আগে ২০১১ সালে কোকেন মামলায় গ্রেফতার হন বলিউড অভিনেতা ফারদিন খানও।
আরও পড়ুন: রিয়া চক্রবর্তীর গ্রেফতারির পরে কী বলছে ইন্ডাস্ট্রি?
এ দিন রিয়া পরেছিলেন কালো টি-শার্ট আর নীল জিন্স। টি-শার্টের উপরে ইংরেজিতে লেখা ‘পুরুষতন্ত্র নিপাত যাক!’ রিয়ার পাশে দাঁড়িয়েছেন শাবানা আজমি, বিদ্যা বালন, অনুরাগ কাশ্যপ, দিয়া মির্জারাও। এনসিবি-র দফতর থেকে বেরিয়ে মেডিক্যাল পরীক্ষা করতে যাওয়ার পথে, গাড়িতে ওঠার সময়ে, সাংবাদিকদের দিকে তাকিয়ে হাতও নাড়েন অভিনেত্রী।