প্রত্যাশা জাগিয়েও বক্স অফিসে মুখ থুবড়ে পড়েছে, প্রতি বছরই এমন কিছু ছবি থাকে বলিউডে। ২০১৯-ও তার ব্যতিক্রম নয়। এ বছরও মুক্তি পেয়েছে এমন বেশ কিছু হিন্দি ছবি, যার বাণিজ্যিক যাত্রা আশানুরূপ নয়। এর মধ্যে কিছু ছবি হয়তো সমালোচকদের কাছে প্রশংসিত হয়েছে, কিন্তু প্রযোজকের লক্ষ্মীলাভ হয়নি। আসুন, দেখে নিই ২০১৯-এর সেরকমই ছবির তালিকা। যাদের ব্যবসায়িক যাত্রাপথ সুগম ছিল না।
কর্ণ জোহরের প্রযোজনায় বহু তারকাখচিত ছবি ‘কলঙ্ক’ মুক্তি পেয়েছিল এপ্রিলে। বহু প্রত্যাশা জাগিয়েও বক্স অফিসে মুখ থুবড়ে পড়ে এই ছবি। ঝাঁ চকচকে সেটে মাধুরী দীক্ষিত, সঞ্জয় দত্ত, আলিয়া ভট্ট, সোনাক্ষী সিংহ, আদিত্য রয় কপূরের মতো তারকাদের অভিনয়ও ভরাডুবি বাঁচাতে পারেনি। আকাশছোঁয়া বাজেটের এই ছবি প্রোমোশনেও কার্পণ্য ছিল না। শুরুতে ব্যবসা এগোলেও পরে এর দুর্বল গল্প আর চিত্রনাট্য ফিরিয়ে দেন দর্শকরা। বক্স অফিসে ব্যবসা করে ৮১ কোটি টাকার।
আগাগোড়া হাস্যরসে মোড়া ছবি। নির্মাতাদের প্রত্যাশা ছিল, সামাজিক এই ছবি দেখতে পরিবারের সবাই মিলে ভিড় করবেন মাল্টিপ্লেক্সে। কিন্তু ‘পাগলপন্তী’ ছবি এই আশায় কার্যত জল ঢেলে দিয়েছে। অনিল কপূর-আরশাদ ওয়ারসির অভিনয়ও দর্শককে হলমুখী করতে পারেনি। নভেম্বর মাসে মুক্তি পাওয়া এই ছবি ব্যবসা করেছে ৩৩ কোটি টাকার।
পানিপথের তৃতীয় যুদ্ধ নিয়ে তিন বছর পরে ডিসেম্বরে পর্দায় ফিরেছিলেন আশুতোষ গোয়ারিকর। কিন্তু তাঁর আগের ছবি ‘মহেঞ্জোদাড়ো’-র মতোই ‘পানিপথ’-ও হালে পানি পেল না। অর্জুন কপূর, সঞ্জয় দত্তের অভিনয়ে মরাঠা-আফগান দ্বন্দ্ব সমালোচকদের প্রশংসা পেয়েছে। কিন্তু দর্শকরা এই ছবির থেকে মুখ ফিরিয়েই ছিলেন। ব্যবসার পরিমাণ ৩২.৬২ কোটি টাকা।
মুক্তির দিন পিছিয়ে দেওয়া হয়েছিল। কিন্তু তাতেও শেষরক্ষা হয়নি ‘জবরিয়া জোড়ি-’র। সিদ্ধার্থ মলহোত্র এবং পরিণীতি চোপড়ার জুটিকে জবর বলে মনে হয়নি দর্শকদের। পরিবর্তে সবাই দেখেছে এই ছবির সঙ্গে মুক্তি পাওয়া ‘মিশন মঙ্গল’ এবং ‘বাটলা হাউজ’। ফলে অগস্টে মুক্তিপ্রাপ্ত ‘জবরিয়া জোড়ি’-র বক্স অফিস কালেকশন ১৬.৩৩ কোটি টাকা।
সানি দেওল তাঁর ছেলে করণকে লঞ্চ করছেন। ফলে ‘পল পল দিল কে পাস’ নিয়ে ইন্ডাস্ট্রির কৌতূহল বেশি ছিল। এই ছবিটির মুক্তির দিন বেশ কয়েকবার পরিবর্তিত হয়। শেষ অবধি ছবিটি মুক্তি পায় ২০ সেপ্টেম্বর। কিন্তু এই রোমান্টিক মিউজিক্যাল ড্রামা দর্শক অনুগ্রহ পায়নি। ব্যবসা করেছে ৭.৯৫ কোটি টাকার।
চম্বল উপত্যকার গল্প ‘সোনচিড়িয়া’ নিয়ে দর্শকদের প্রত্যাশার পারদ ছিল প্রথম থেকেই। ছবিতে সুশান্ত সিংহ রাজপুত ও ভূমি পেডনেকরের অভিনয়ও প্রশংসিত হয়। কিন্তু দর্শকরা এই ছবি দেখতে হলে পা রাখেননি। মার্চে মুক্তি পাওয়া ছবিটির প্রযোজকদের সন্তুষ্ট থাকতে হয় ৬.৬০ কোটি টাকার ব্যবসা নিয়েই। অনেকেরই অভিযোগ, দুর্বল প্রোমোশনের জন্যই এই ছবি আশানুরূপ জনপ্রিয়তা পায়নি।
দুর্দান্ত অভিনয়ের পাশাপাশি প্রযোজনাও ছিল সঞ্জয় দত্তের। কিন্তু ‘প্রস্থানম’ বক্স অফিসে মুখ থুবড়ে পড়ে। সেপ্টেম্বরে মুক্তি পাওয়া ছবিটি ব্যবসা করে মাত্র ৪.৭৫ কোটি্ টাকার। চলচ্চিত্র বিশেষজ্ঞদের ধারনা, বক্স অফিসে এই ছবিটির আরও ভাল ফল করা উচিত ছিল।
শিল্পী দাশগুপ্তের পরিচালনায় ‘খানদানী শফাখানা’ মুক্তি পেয়েছিল অগস্টে। বাজেট ছিল ২৬ কোটি টাকা। কিন্তু প্রযোজকদের চরম হতাশ করে এই ছবি ব্যবসা করে মাত্র ৩.৮৩ কোটি টাকার। বরুণ শর্মা, সোনাক্ষী সিংহের স্টারডমও দর্শককে আকর্ষণ করতে ব্যর্থ হয়।
ঋষি কপূর-ইমরান হাশমি অভিনীত ‘দ্য বডি’ হতেই পারত সফল ক্রাইম থ্রিলার। কিন্তু এ বছরের আর একটি থ্রিলার ‘বদলা’ যতটাই সপল, ততটাই ব্যর্থ ‘দ্য বডি’। ছবিটি মুক্তি পেয়েছিল ১৩ ডিসেম্বর। কিন্তু সমালোচক বা দর্শক, কোনও মহলেই দাগ কাটতে পারেনি। মাল্টিপ্লেক্স থেকেও অল্প ক’দিনের মধ্যেই উধাও হয়ে যায় ছবিটি।ব্যবসা করেছে ৩.৪৪ কোটি টাকার।
ইমরান হাশমির আরও একটি অপরাধমূলক ছবি, সৌমিক সেন পরিচালিত ‘হোয়াই চিট ইন্ডিয়া’-ও ব্যর্থ বক্স অফিসে। ছবিটি মুক্তি পেয়েছিল জানুয়ারিতে। ২০ কোটি টাকা বাজেটের ছবি ব্যবসা করেছে ৮.৬৬ কোটি টাকা।
অ্যাকশন কমেডি ‘অর্জুন পাতিয়ালা’ মুক্তি পেয়েছিল জুলাইয়ে। দিলজিৎ দোসাঞ্জ, কীর্তি শ্যানন অভিনীত ছবির বাজেট ছিল ২৫ কোটি টাকা। কিন্তু বক্স অফিসে চলেনি। ব্যবসা করেছে ৯.২৪ কোটি টাকার।
রীতেশ বাত্রার পরিচালনায় ‘ফোটোগ্রাফ’ মুক্তি পায় মে মাসে। তাঁর আগের ছবি ‘লাঞ্চবক্স’-এর মতো এই ছবিটিও সমালোচকদের কলমে প্রশংসিত হয়। নওয়াজুদ্দিন সিদ্দিকি এবং সান্যা মলহোত্রর অনবদ্য অভিনয় ছবিটির মূল সম্পদ। কিন্তু বাণিজ্যিক বিচারে এই ছবি বেশ পিছিয়ে। ব্যবসা করেছে ১.২৯ কোটি টাকার।
২০১৯-এ মুক্তি পাওয়া ব্যর্থ হিন্দি ছবিগুলির মধ্যে আছে ‘ঝুটা কহিঁ কা’, ‘মালাল’, ‘ইন্ডিয়াজ মোস্ট ওয়ান্টেড’, ‘সেটার্স’, ‘ব্ল্যাঙ্ক’, ‘নোটবুক’ এবং ‘জংলি’। এরমধ্যে কিছু ছবি ব্যবসা করেছে এক কোটি টাকারও কম। ‘নোটবুক’ ছবির প্রযোজক ছিলেন সলমন খান। কিন্তু তাতেও ছবি সুপারহিট হওয়া অধরাই থেকে যায়। (ছবি: ফেসবুক)