সাতপাকে বাঁধা পড়ার পরে অভিনয় শুরু করে যে কয়েক জন নায়ক বলিউডে প্রতিষ্ঠিত হয়েছেন, তাঁদের মধ্যে অন্যতম সুনীল শেট্টি। প্রথম ছবিতে অভিনয়ের আগেই তিনি ফ্যামিলিম্যান। নিজের ‘বিবাহিত পরিচয়’ কোনওদিন লুকিয়ে রাখেননি কেরিয়ারের স্বার্থে।
যুবক বয়সে সুনীলের বন্ধুদের সঙ্গে আড্ডায় বসার প্রিয় ঠেক ছিল মুম্বইয়ের একটি রেস্তোরাঁ। রোজ বিকেলে বন্ধুদের সঙ্গে সেখানে গল্প করতে যেতেন সুনীল। সেখানেই প্রথম দেখেন মানা-কে।
প্রথম দর্শনেই মানার রূপে মুগ্ধ সুনীল। কাছে যাওয়ার জন্য বন্ধুত্ব পাতালেন মানার বোনের সঙ্গে। তাঁর মাধ্যমে প্রাথমিক পরিচয়-পর্বের জড়তা কাটল। কয়েক বার দেখা করার পরে এ বার মানা-র ব্যক্তিত্বেও মুগ্ধ হলেন সুনীল।
প্রেমিকার মন সহজে পেয়ে গেলেও সুনীল ধাক্কা খেলেন অন্য জায়গায়। বাধা এল দুই পরিবারের তরফে। মানা-র জন্মগত নাম মনীষা কাদরি। তিনি অন্য ধর্মাবলম্বী পরিবারের মেয়ে। অন্যদিকে সুনীলের পরিবার আদতে দক্ষিণ ভারতীয় গোঁড়া হিন্দু।
ভিন্ন সংস্কৃতির দুই পরিবার থেকেই সুনীল ও মানার সম্পর্কে আপত্তি এল। অভিভাবকরা মনে করেছিলেন, তাঁদের বিয়ে দীর্ঘস্থায়ী হবে না। কিন্তু সুনীল ও মানা তাঁদের সিদ্ধান্তে অনড়।
দু’জনেই জানিয়ে দিলেন, অন্য কাউকে বিয়ে করবেন না। তাঁদের জেদের কাছে অবশেষে হার মানতে বাধ্য হলেন অভিভাবকরা। প্রেমে পড়ার পরে ন’ বছরের অপেক্ষা। ১৯৯১-তে বিয়ে হল সুনীল ও মানার।
বিয়ের জন্য তাঁরা বেছে নিয়েছিলেন বড়দিনকে। যাতে পরিজন ও বন্ধুবান্ধবরা ছুটির আমেজে উপভোগ করতে পারেন বিয়ের আনন্দ। এখনও প্রতি বছর বড়দিনের ছুটিতে কোথাও না কোথাও সপরিবার বেড়াতে যান সুনীল শেট্টি।
বিয়ের পরের বছর, ১৯৯২ থেকে বলিউডে কেরিয়ার শুরু করেন সুনীল শেট্টি। এরপর নানা ওঠাপড়ার মধ্যে দিয়ে এগিয়েছে তাঁর যাত্রাপথ। সব সময় লড়াইয়ে পাশে থেকেছেন তাঁর স্ত্রী, মানা।
নব্বইয়ের দশকে একবার সোনালি বেন্দ্রের সঙ্গে সুনীলের সম্পর্ক আছে বলে গুঞ্জন শোনা গিয়েছিল। কিন্তু সে সব থেকে গিয়েছে জল্পনার স্তরেই। সোনালির সঙ্গে সম্পর্ক প্রথম থেকেই উড়িয়ে দিয়েছেন সুনীল।
স্ত্রীর সঙ্গে সুনীলের সম্পর্ক বন্ধুর মতো। এক বার তো রবিনা টন্ডন বলেছিলেন, তিনি মানার অনুমতি নিয়েই সুনীল শেট্টিকে নিজের ‘বেস্ট বয়ফ্রেন্ড’ বলতে চান। কারণ কেরিয়ারে ঘুরে দাঁড়াতে রবিনাকে সাহায্য করেছিলেন সুনীল।
কিন্তু বলিউডে এতদিন তারকা হয়ে থাকার পরেও কী করে বিতর্ককে ছাড়াই দাম্পত্যজীবন কাটানো যায়? এক সাক্ষাৎকারে সুনীল বলেছিলেন, তিনি মুহূর্তের মোহে পা না দিয়ে পরিবারকেই গুরুত্ব দিতে চান।
শুধু মুখের কথা নয়। আদ্যন্ত ফ্যামিলিম্যান হিসেবেও সুনাম আছে সুনীল শেট্টির। বাড়িতে থাকলে স্ত্রী ও দুই সন্তান আথিয়া-অহনের সঙ্গে কোয়ালিটি টাইম কাটাতে ভালবাসেন তিনি।
আথিয়া ইতিমধ্যেই অভিনয় করেছেন হিন্দি ছবিতে। বলিউডে কেরিয়ার শুরু করার মুখে সুনীলের ছেলে অহনও। এখনও দুই সন্তানের সঙ্গে সুনীল ও মানার সম্পর্ক বন্ধুর মতো।
বলিউডে যেখানে নিত্যনতুন সম্পর্ক ভাঙাগড়া হয়, সেখানে সুনীল-মানার সম্পর্ক প্রায় চার দশকের। তাঁদের বিয়ের বয়সও তিরিশ বছর হতে চলল। অনেক সাক্ষাৎকারেই এর রহস্য জানার জন্য প্রশ্ন করা হয়েছে তাঁদের।
মানা জানিয়েছেন, তাঁরা একে অন্যের উপরে বোঝা হয়ে থাকতে চাননি। বরং, ছোট ছোট ভাললাগাকে গুরুত্ব দিয়েছেন। সুপারস্টারের গৃহিণী হওয়ার পাশাপাশি মানা একজন ফ্যাশন ডিজাইনার ও সমাজসেবী। নিজের স্বতন্ত্র পরিচয় গড়তে তাঁকে সবথেকে বেশি উৎসাহ দিয়েছেন সুনীল-ই।
ব্যস্ততার মাঝেও তিনি চেষ্টা করেন সুনীলকে আনতে বিমানবন্দরে যেতে। অথবা, অনেকদিন আউটডোর শুটিং থাকলে মানা চলে যান স্বামীর কাছে।
মানার কথায়, সিনেমার নায়কের সঙ্গে পর্দার বাইরের সুনীলের অনেক পার্থক্য। ছবির অ্যাকশন হিরো ক্যামেরার বাইরে একজন পুরোদস্তুর রোমান্টিক স্বামী।
দাম্পত্যে প্রেমকে বাঁচিয়ে রাখতে বদ্ধপরিকর সুনীলও। জানিয়েছেন, তিনি চান, প্রতি মুহূর্তে নতুন করে মানার প্রেমে পড়তে। তাঁদের রসায়ন বলিউডের অনেক তারকা জুটির কাছেই ঈর্ষণীয়।