ভবিষ্যতে বাবার হোটেল-ব্যবসায়ে যোগ দেবেন, পরিকল্পনা ছিল সে রকমই। তাই স্কুলজীবনের পরে হোটেল ম্যানেজমেন্ট কোর্স করেছিলেন। কিন্তু জীবন বয়ে গেল অন্য খাতে। সুনীল শেট্টী হয়ে গেলেন ইন্ডাস্ট্রির ‘বড়ে দিলওয়ালে’।
ক্রিকেট খেলারও শখ ছিল সুনীলের। কিন্তু রাজ্য স্তর অবধি পৌঁছতে পারেননি। ফলে ক্রিকেট নিয়ে আর বেশি দূর এগিয়ে যাওয়া সম্ভব হয়নি তাঁর। তাঁর কিছু পরিচিত ছিলেন বলিউডে। তাঁরাই সুনীলকে উৎসাহ দিতেন অভিনেতা হওয়ার জন্য।
বন্ধুদের উদ্যোগেই স্টুডিয়োয় গিয়ে ফোটো শুট করান সুনীল শেট্টী। স্টুডিয়োয় রাখা তাঁর ছবি দেখে পছন্দ হয় পরিচালক দীপক আনন্দের। তিনি তাঁকে নিজের ‘বলবান’ ছবিতে অভিনয়ের সুযোগ দেন।
১৯৯২ সালে মুক্তি পাওয়া ‘বলবান’ ছিল সুনীলের প্রথম ছবি। দীপক তিজোরির অভিযোগ, এই ছবিতে তাঁরই প্রথমে অভিনয় করার কথা ছিল। কিন্তু সুনীল শেট্টী টাকা ও প্রভাব খাটিয়ে সুযোগ ছিনিয়ে নেন।
এই নিয়ে সুনীল ও দীপকের বিবাদ চরমে ওঠে। প্রথম ছবির পরেও ইন্ডাস্ট্রি সে ভাবে স্বাগত করেনি সুনীলকে। বরং তাঁর অভিনয় যান্ত্রিক বলে সমালোচিত হয়।
এমনকি, অনিল কপূর তাঁকে কুস্তিগীর বলেও বর্ণনা করেন। কোথাও কোথাও তাঁকে তুলনা করা হয় আসবাবপত্রের সঙ্গেও।
সে সময় অক্ষয় কুমার ও সুনীল শেট্টী একসঙ্গে অভিনয় করেছিলেন, এমন কিছু ছবি সফল হয়েছিল বক্স অফিসে। কিন্তু এক সময় তাঁদের মধ্যেও সম্পর্ক তিক্ত হয়ে যায়।
১৯৯৪ সালে সুনীলের মুক্তি পাওয়া বেশ কিছু ছবি সফল হয় বক্স অফিসে। ধীরে ধীরে ইন্ডাস্ট্রিতে তাঁরও দর্শক তৈরি হয়। কিন্তু জনপ্রিয়তা পেলেও ইন্ডাস্ট্রির কটাক্ষ পিছু ছাড়েনি। অনিল কপূর তো অক্ষয় কুমার এবং সুনীল শেট্টী দু’জনকেই ‘৫০ শতাংশ অভিনেতা’ বলে মন্তব্য করেন।
কিন্তু ঠিক তার পরের বছর থেকেই সুনীলের কেরিয়ারগ্রাফ নীচের দিকে নামতে থাকে। পর পর তাঁর ছবি ফ্লপ করতে থাকে। এমন পরিস্থিতি হয়, বলিউডের কোনও নায়ক ছবি ফিরিয়ে দিলে তবেই সুযোগ পেতেন সুনীল।
হাল না ছেড়ে ঘুরে দাঁড়ানোর চেষ্টা করেন সুনীল। প্রায় দু’ বছর ধরে অভিনয়-সহ অন্যান্য দিকে নিজেকে পরিমার্জন করেন তিনি। বিরতি কাটিয়ে তিনি আবার ফিরে আসেন অভিনয়ে।
১৯৯৬ সালে মুক্তি পায় তাঁর ছবি ‘শাস্ত্র’। এই ছবিতে সুনীলের নাচের স্টেপেরও বেশ প্রশংসা হয়। বোঝা যায়, তিনি কঠোর অনুশীলন করে ফিরে এসেছেন।
ইন্ডাস্ট্রিতে রবিনা টন্ডনের সঙ্গে তাঁর অন্তরঙ্গ সম্পর্ক ছিল। বেস্টফ্রেন্ড তো বটেই। রবিনা বলতেন, সুনীলের স্ত্রীর কাছ থেকে অনুমতি নিয়ে তিনি সুনীলকেই নিজের ‘অফিশিয়াল বয়ফ্রেন্ড’ বলতে চান।
অক্ষয়কুমারকে বিয়ে করবেন বলে রবিনা টানা দু’বছর কোনও ছবিতে অভিনয় করেননি। কিন্তু অক্ষয় তাঁকে প্রত্যাখ্যান করেন।
এর পরে রবিনা আবার ফিরে আসতে চেয়েছিলেন। কিন্তু সে সময় প্রতিযোগিতা খুব কঠিন। এ সময় তাঁর পাশে দাঁড়িয়েছিলেন সুনীল শেট্টী। সুযোগ দিয়েছিলেন ‘রক্ষক’ ছবিতে। যা সুপারহিট হয়েছিল বক্স অফিসে।
সুনীলের পাশে কেউ না দাঁড়ালেও তিনি প্রয়োজনে অন্যদের দিকে সাহায্যের হাত বাড়িয়ে দিয়েছেন। তাই ইন্ডাস্ট্রিতে তাঁর নাম ‘অন্না’ বা দাদা। যিনি সবাইকে আগলে রেখে রক্ষা করেন।
এর পর ‘মোহরা’, ‘হুতুতু’, ‘হেরাফেরি’, ‘ধড়কন’-এর মতো ছবিতে অভিনয় করেন সুনীল। ধীরে ধীরে অ্যাকশন হিরো থেকে তাঁর ভাবমূর্তি পরিবর্তিত হতে থাকে।
কমেডি, রোমান্টিক নায়ক হিসেবেও নিজেকে তুলে ধরেন সুনীল। এ বার ছবি নির্বাচনের ক্ষেত্রেও সচেতন হন তিনি। বড় বাজেটের ছবিতে ছোট ভূমিকায় অভিনয় করতে লাগলেন তিনি।
পাশাপাশি তিনি নিজের প্রযোজনা সংস্থা শুরু করেন। ২০০৬ সালে তিনি প্রযোজনা করেন ‘ভাগম ভাগ’ ছবি। এ ছবিতে কামব্যাক করেন গোবিন্দ। শোনা যায়, এই ভূমিকায় সুনীল নিজে অভিনয় করবেন ভেবেছিলেন। কিন্তু গোবিন্দ অভিনয়ের সুযোগ চাইতেই সুনীল তাঁকে এই সুযোগ ছেড়ে দেন।
যে নায়কদের খারিজ করা ছবিতে অভিনয় করতেন সুনীল শেট্টী, সেই নায়কদের ছবি প্রযোজনা করতে লাগলেন তিনি। ‘আসবাবপত্র’ থেকে তিনি ইন্ডাস্ট্রির ‘অন্না’ হয়ে ওঠেন।
সুনীল শেট্টীর দুই ছেলেমেয়ে আথিয়া ও অহনও পা রেখেছেন বলিউডে। অতীতের অ্যাকশন হিরো এখন এক জন সফল ব্যবসায়ীও। একই জীবনের বহু দিক সফল করেছেন তিনি।