শিশুশিল্পী হিসেবে প্রথম ছবিতেই আমির খানের সঙ্গে স্ক্রিন শেয়ার। কিন্তু তার পর পরিচিতি পেতে লেগে গিয়েছিল দীর্ঘ ১২ বছর। মূলত কমেডি শো-এর মাধ্যমেই ইন্ডাস্ট্রিতে নিজের জায়গা করে নিয়েছেন তিনি। বিনোদন দুনিয়ায় সুমনা চক্রবর্তীর পরিচয় ‘কপিল শর্মার অনস্ক্রিন স্ত্রী।’
প্রবাসী বাঙালি সুমনার জন্ম লখনউয়ে। সুমনার জন্মের কিছু বছর পরেই তাঁর বাবা কর্মসূত্রে মুম্বই চলে আসেন। অন্ধেরি ইস্ট এলাকায় এক আবাসনে থাকতেন চক্রবর্তী পরিবার। মুম্বইয়ের জয় হিন্দ কলেজ থেকে স্নাতক স্তরের পড়াশোনা সম্পূর্ণ করেন সুমনা।
মুম্বইয়ে এক প্রতিবেশীর সূত্রে সুমনা প্রথম কাজ করেন কিছু বিজ্ঞাপনী ছবিতে। তার পর প্রথম ছবি ‘মন’ মুক্তি পায় ১৯৯৯ সালে। সে সময়ই ১১ বছর বয়সি সুমনা ঠিক করেছিলেন বড় হয়ে তিনি অভিনেত্রীই হবেন।
কিন্তু তাঁর বাড়ি থেকে স্পষ্ট জানিয়ে দেওয়া হয়, অভিনেত্রী হওয়ার আগে স্নাতক হতে হবে। কলেজের পাঠ শেষ করে সুমনা যোগ দেন থিয়েটার গ্রুপে। সে সময় টিভি সিরিয়াল এবং থিয়েটার, দু’টিতেই তিনি সমানতালে অভিনয় করতেন।
২০০৬ থেকে ২০১০ অবধি বিভিন্ন চ্যানেলে বেশ কিছু সিরিয়ালে অভিনয় করেন তিনি। সেগুলির মধ্যে উল্লেখযোগ্য হল ‘কসম সে’, ‘ডিটেকটিভ ডল’ এবং ‘কস্তুরী’। কিন্তু এই সিরিয়ালগুলি থেকে প্রত্যাশিত পরিচিতি পাননি তিনি।
থিয়েটার থেকে যা উপার্জন হচ্ছিল সেটা কোনও ভাবেই যথেষ্ট ছিল না। বাধ্য হয়ে সুমনা পুরোপুরি টেলিভিশনে অভিনয় শুরু করেন। ২০১১ সালে তিনি সুযোগ পান একতা কপূরের সিরিয়াল ‘বড়ে অচ্ছে লগতে হ্যায়’-তে। সিরিয়ালে তাঁর অভিনীত চরিত্র ‘নাতাশা কপূর’ খুবই জনপ্রিয় হয়।
এর পর অন্য ধরনের কাজ করবেন বলে সুমনা অভিনয় করেন ‘কঁহানি কমেডি সার্কাস কি’ শো-এ। এখানেও তাঁর কাজ জনপ্রিয় হয় দর্শকদের কাছে।
সুমনার কাজ দেখে তাঁকে নিদের পরবর্তী শো-এ সুযোগ দেন কপিল শর্মা। ‘কমেডি নাইটস উইথ কপিল’-এ সুমনা হয়ে ওঠেন কপিল শর্মার স্ত্রী।
অনস্ক্রিন স্ত্রীকে নিয়ে রসিকতা কপিল শর্মার শো-এর অন্যতম অঙ্গ। সাক্ষাৎকারে সুমনাকে জিজ্ঞাসাও করা হয়েছে এই রসিকতা নিয়ে। উত্তরে জানিয়েছে, তাঁর খারাপ লাগে না। কারণ এটা তাঁর কাজ। সে বিষয়ে তিনি পেশাদার।
টেলিভিশনের পাশাপাশি সুমনা অল্পবিস্তর কাজ করছিলেন বড় পর্দাতেও। ১৯৯৯ সালে প্রথম ছবির ১১ বছর পরে তিনি অভিনয় করেন দ্বিতীয় ছবি ‘আখরি ডিসিশন’-এ। কিন্তু এই ছবিটি বক্স অফিসে সফল হয়নি।
ছোট পর্দায় পরিচিতি বাড়তে থাকার সঙ্গে ডাক আসে বড় ব্যানারে। ২০১২-এ ‘বরফি’ এবং তার ২ বছর পরে সুমনা অভিনয় করেন ‘কিক’ ছবিতে। দু’টি ছবি মিলিয়ে রণবীর কপূর, প্রিয়ঙ্কা চোপড়া, সলমন খানের মতো তারকার সঙ্গে স্ক্রিন শেয়ার করেন তিনি।
ব্যক্তিগত জীবনকে পর্দার আড়ালে রাখতেই ভালবাসেন সুমনা। সাক্ষাৎকারেও ব্যক্তিগত জীবন নিয়ে প্রশ্ন এড়িয়ে যান তিনি। তার মধ্যেও শোনা গিয়েছিল কাজলের আত্মীয় অভিনেতা সম্রাট মুখোপাধ্যায়ের সঙ্গে ঘনিষ্ঠ সম্পর্ক আছে সুমনার।
২০১৬ সালে তাঁরা বিয়ে করবেন বলেও শোনা গিয়েছিল। কিন্তু সেই রটনা সত্যি হয়নি। পরে এক সাক্ষাৎকারে সুমনা জানান, সম্রাট শুধুই তাঁর ভাল বন্ধু।
যে মুম্বই সুমনাকে যশ ও খ্যাতি দিয়েছে, সেই শহর থেকে আঘাতও পেয়েছে চক্রবর্তী পরিবার। ২০১৭ সালে একবার সুমনার মা অসুস্থ হয়ে পড়েন। বাড়ির কাছেই হাসপাতালে নিয়ে যাওয়ার জন্য সুমনার বাবা একটি অটোরিকশাকে ডাকেন।
কিন্তু অভিযোগ, অত কম দূরত্বে যেতে রাজি ছিলেন না অটোচালক। তাঁর সঙ্গে কথা কাটাকাটিতে জড়িয়ে পড়েন সুমনার বাবা। অভিযোগ, প্রথমে অটোচালক চলে গেলেও পরে ফিরে আসেন। শুধু তাই নয়। সুমনার বাবার মাথায় তিনি পাথর দিয়ে আঘাতও করেন।
পরে এক টেলিভিশন শো-এ ঘটনার বর্ণনা দিতে গিয়ে আতঙ্কিত সুমনা বলেন,মুম্বইয়ের রাজপথে সকাল ১০ টার সময় রক্তাক্ত হয়েছিলেন তাঁর বাবা। কিন্তু সাহায্যের জন্য কেউ এগিয়ে আসেননি। বিপদের সময় কাউকেই পাশে পাননি বলেও অভিযোগ করেন সুমনা। শেষ অবধি সুমনার মা-ই তাঁর সংজ্ঞাহীন বাবাকে নিয়ে যান চিকিৎসার জন্য। এই দিনটিকে নিজের জীবনের সবথেকে খারাপ দিন বলে বর্ণনা করেছেন তিনি।
কিছু বছর আগে সুমনাকে ট্রোল করা হয়েছিল সোশ্যাল মিডিয়ায়। কপিল শর্মা শো-এর শুটিংয়ের মাঝে তাঁর একটি ভিডিয়ো ছড়িয়ে পড়েছিল সোশ্যাল মিডিয়ার বিভিন্ন মাধ্যমে। সেখানে দেখা যাচ্ছিল সুমনা ধূমপান করছেন।
এই ভিডিয়ো ছড়িয়ে পড়ার পরে সুমনাকে ট্রোল করা হয়। অনুরাগীরা তাঁর কাছে আবেদন করেন ধূমপানের অভ্যাস ছেড়ে দেওয়ার জন্য। ২০১৯-এ সুমনা নিজের ফেসবুক প্রোফাইলে জানান, তিনি ধূমপান ছেড়ে দিয়েছেন।
সম্প্রতি আরও একটি কারণে খবরে এসেছেন সুমনা। একটি সাক্ষাৎকারে তিনি নাকি জানিয়েছেন, তাঁর কাছে কাজ নেই। তার জন্য অবশ্য দায়ী করেছেন নিজেকেই। সুমনার আক্ষেপ, তিনি সামাজিক নন। পার্টিতে গিয়ে হইহুল্লোড় করতে পারেন না। তাই তাঁর কাছে কাজের সুযোগ পৌঁছচ্ছে না।
এই খবরের সূত্র ধরে ছোট-বড় অনেক সংবাদমাধ্যমই প্রতিবেদন প্রকাশ করে। কিন্তু তার জেরে ক্ষুব্ধ হন সুমনা। পাল্ট টুইট করে জানান, তিনি নিয়মিত প্রথম সারির কমেডি শো-এর অংশ। তাহলে কেন বলতে যাবেন তাঁর কাছে কাজ নেই?
সুমনার অভিযোগ, এটা তাঁর পুরনো সাক্ষাৎকারের অংশ। কেউ হয়তো সেটাই নতুন করে সোশ্যাল মিডিয়ায় দিয়েছে তাঁর ভাবমূর্তি ক্ষতিগ্রস্ত করার জন্য।
অনেকেই বলেন বহু দিন ইন্ডাস্ট্রিতে থেকেও সুমনার উত্থান আশাপ্রদ নয়। তিনি কিন্তু নিজের অবস্থান নিয়ে খুশি। কাজ নিয়ে বেশ খুঁতখুঁতে। কাজ করতে রাজিও হন খুব বেছে বেছে।
তবে শুধুই বলিউড নয়। সুমনার ইচ্ছে আছে বাংলা ছবিতে কাজ করার। সাক্ষাৎকারে ইতিমধ্যেই জানিয়েছেন, অপর্ণা সেন এবং প্রয়াত ঋতুপর্ণ ঘোষ তাঁর প্রিয় পরিচালক। জীবনে এক বার অন্তত তিনি অপর্ণা সেনের পরিচালনায় অভিনয় করতে চান।