কেরিয়ারে প্রথমেই প্রখ্যাত পরিচালকের ছবিতে অভিনয়। আর এক বিশ্বমানের পরিচালকের সঙ্গে ক্যামেরার পিছনে কাজ করার সুযোগ। কিন্তু তিনি থাকলেন না রঙিন দুনিয়ায়। স্বেচ্ছায় চলে গেলেন বিদেশে নামী প্রতিষ্ঠানে উচ্চশিক্ষার জন্য। জীবনভর উজান-স্রোতে পাড়ি দিয়েছেন সুহাসিনী মুলে।
১৯৫০ সালের ২০ নভেম্বর তাঁর জন্ম পটনায়। মাত্র তিন বছর বয়সে তিনি পিতৃহারা হন। তাঁকে বড় করে তোলেন মা, বিজয়া মুলে। সুহাসিনীর মা বিজয়া নিজেও ছিলেন চলচ্চিত্র জগতের নামী ব্যক্তিত্ব।
বিজয়া ছিলেন তথ্যচিত্র পরিচালক এবং চলচ্চিত্র-ইতিহাসবিদ এবং গবেষক। তাঁর কাছেই ছবির অ-আ-ক-খ পাঠ সুহাসিনীর। তাঁর দৃঢ়চেতা এবং ভিন্নস্বাদের ব্যক্তিত্বের গঠনেও মায়ের অবদান অনস্বীকার্য।
১৯৬৫ সালে মডেলিং শুরু সুহাসিনীর। তিনি নজর কাড়েন পিয়ার্স সাবানের বিজ্ঞাপনে। ওই বিজ্ঞাপন দেখে তাঁকে ‘ভুবন সোম’ ছবির নায়িকা হিসেবে পছন্দ করেন মৃণাল সেন।
১৯৬৯ সালে মুক্তি পায় ‘ভুবন সোম’। প্রথম ছবিতে উচ্চ প্রশংসিত হয় নবাগতা সুহাসিনীর অভিনয়। এরপর তিনি চলে যান কানাডার ম্যাক গিল ইউনিভার্সিটিতে। এগ্রিকালচারাল টেকনোলজি নিয়ে পড়াশোনা করতে। এরপর তিনি সাংবাদিকতা নিয়েও পড়াশোনা করেন।
সাতের দশকের শুরুতে সুহাসিনী ফিরে আসেন দেশে। তবে এই পর্বেও অভিনয় নয়। বরং, তিনি এলেন ক্যামেরার পিছনে। ‘জনঅরণ্য’ ছবিতে তিনি সত্যজিৎ রায়ের সহকারী ছিলেন। মৃণাল সেনকে সাহায্য করেন ‘মৃগয়া’ ছবির ইউনিটে।
তারপর সুহাসিনী ছবি প্রযোজনা শুরু করেন। নির্মাণ করেন ৬০ টি তথ্যচিত্র। চারটির জন্য তিনি জাতীয় পুরস্কার লাভ করেন। ‘ভুবন সোম’-এর প্রায় তিরিশ বছর পরে সুহাসিনী ফিরে আসেন বলিউডের মূলস্রোতে। গুলজারের ‘হু তু তু’ ছবিতে অভিনয়ের জন্য তিনি শ্রেষ্ঠ পার্শ্বঅভিনেত্রী হিসেবে জাতীয় পুরস্কার লাভ করেন।
বেশ কিছু হিন্দি ছবিতে সুহাসিনী অভিনয় করেছেন চরিত্রাভিনেতা হিসেবে। সেগুলির মধ্যে উল্লেখযোগ্য ‘লগন’, ‘দিল চাহতা হ্যায়’ এবং ‘মহেঞ্জোদাড়ো’। ছবির পাশাপাশি সুহাসিনী কাজ করেছেন টেলিভিশন এবং ওয়েব সিরিজেও।
ব্যক্তিগত জীবনকে বরাবর প্রচারের আলো থেকে দূরে সরিয়ে রেখেছেন সুহাসিনী। তিনি দীর্ঘদিন ছিলেন লিভ-ইন সম্পর্কে। সেই সম্পর্ক ভেঙে যায় ১৯৯০ সালে। এরপর ২১ বছর তিনি একাই জীবন কাটান।
২০১১ সালে ষাটোর্ধ্ব সুহাসিনী বিয়ে করেন নামী বিজ্ঞানী ও পদার্থবিদ অতুল গুর্তুকে। তাঁদের আলাপ ফেসবুকে। ২০১১-র ১৬ জানুয়ারি আর্য সমাজে বিয়ে করেন ৬৫ বছর বয়সি অতুল এবং ৬১ বছর বয়সি সুহাসিনী।
সুহাসিনী জানান, তাঁদের দু’জনের কাজের ক্ষেত্র সম্পূর্ণ আলাদা। আণবিক বিজ্ঞানী অতুল সিনেমা নিয়ে আগ্রহী নন। বিপরীত মেরুর মানসিকতাই কাছাকাছি এনেছে তাঁদের।
প্রথমে সুহাসিনীর সিদ্ধান্তে স্বভাবতই বিস্মিত হয়েছিলেন তাঁর পরিজন ও বন্ধুরা। কিন্তু পরে প্রত্যেকেই তাঁর সিদ্ধান্তকে সমর্থন করেন। বিজ্ঞানী অতুলের প্রথম স্ত্রী ছিলেন প্রমীলা। ৩৬ বছরের দাম্পত্যের পরে প্রমীলা মারা যান ২০০৬ সালে। তার আগে ১৯৯১ সালে মৃত্যু হয় অতুল-প্রমীলার একমাত্র সন্তান আশিসের।
অতুলকে বিয়ের পরে সুহাসিনী পঞ্জাবে গিয়ে দেখা করেন প্রয়াত প্রমীলার বাবা মা ও পরিজনদের সঙ্গেও। সুহাসিনীর বিয়েতে উপস্থিত ছিলেন তাঁর ৯০ বছর বয়সি মা, বিজয়াও। ৯৮ বছর বয়সে বিজয়া প্রয়াত হন ২০১৯ সালের ১৯ মে।
বিয়ের পরে অতুল-সুহাসিনী থাকেন মুম্বইয়ে। দু’জনেই সুনামের সঙ্গে কাজ করছেন নিজেদের কাজের জগতে।