নাম সুগন্ধা মিশ্র। তবে লোকে তাঁকে বেশি চেনে ‘বিদ্যাবতী’ নামে।
বিদ্যাবতী ‘কপিল শর্মা শো’-এর একটি চরিত্র। যে পেশায় শিক্ষক, তবে কথা বলে বলিউড অভিনেত্রী কঙ্গনা রানাউতকে হুবহু নকল করে।
দর্শক মহলে বিদ্যাবতী নন্দিত তার কৌতুকের নিখুঁত টাইমিং-এর জন্য। তবে বিদ্যাবতীর নেপথ্য শিল্পী যিনি, সেই সুগন্ধার এ ছাড়াও আরও অনেক গুণ আছে।
সুগন্ধা প্রথম মঞ্চে উঠেছিলেন তিন বছর বয়সে। তাঁর প্রথম পারফরম্যান্স ছিল আবৃত্তি। শ্রোতা হিসেবে উপস্থিত ছিলেন শাবানা আজমির বাবা প্রখ্যাত কবি কইফি আজমি।
মধ্যপ্রদেশের ধ্রুপদ সঙ্গীতের বিশেষ ঘরানা হল ইনদওর ঘরানা। সুগন্ধা সেই ইনদওর ঘরানার পরিবারের মেয়ে। আবৃত্তি দিয়ে শুরু করলেও তাই ছোট বেলাতেই শাস্ত্রীয় সঙ্গীত শিখতে শুরু করেন।
দাদু উস্তাদ আমির খান সাহেবের শিষ্য। তাঁর কাছেই সঙ্গীতের প্রথম পাঠ সুগন্ধার। ১২ বছর বয়সে জাতীয় স্তরের একটি ধ্রুপদ সঙ্গীত প্রতিযোগিতায় প্রথম হন। তাঁর গানের প্রশংসা করেছিলেন পণ্ডিত শিবকুমার শর্মা।
সুগন্ধাই তাঁর পরিবারের চতুর্থ প্রজন্ম, যিনি পারিবারিক সঙ্গীতচর্চাকে এগিয়ে নিয়ে যাচ্ছেন। বলিউডের বেশ কয়েকটি সিনেমায় গান গেয়েছেন। নিজের মিউজিক অ্যালবামও প্রকাশ করেছেন। তবে সুগন্ধা নিজের কেরিয়ার শুরু করেছিলেন একজন রেডিও জকি হিসেবে। একটি সর্বভারতীয় এফএম চ্যানেলে অনুষ্ঠান সঞ্চালনা করতেন তিনি।
তত দিনে স্নাতকোত্তর শেষ হয়েছে সুগন্ধার। ভাল ফল করেছিলেন। বিভিন্ন কলেজ থেকে শিক্ষক হিসেবে কাজের প্রস্তাব আসতে শুরু করেছিল তাঁর কাছে। সেই সব প্রস্তাব অবশ্য ভবিষ্যতের কৌতুকশিল্পীর মনে ধরেনি।
রেডিও জকির কাজ করতে করতেই জিঙ্গল গাইতে শুরু করেন। স্বল্প দৈর্ঘ্যের ছবি, তথ্যচিত্র এমনকি নাটকেও নেপথ্য সঙ্গীত গেয়েছেন সেই সময়ে।
২০০৮ সালে হঠাৎই গান ছেড়ে কৌতুক অভিনয়ের প্রতিযোগিতা ‘দ্য গ্রেট ইন্ডিয়ান লাফটার চ্যালেঞ্জ’-এ প্রতিযোগী হিসেবে যোগ দেন। তার আগে কৌতুক শিল্পী হিসেবে কোথাও কাজ করেননি। কোনও পূর্ব অভিজ্ঞতাও ছিল না। তবে সুগন্ধার অন্য একটি গুণ ছিল, তিনি যে কোনও ব্যক্তিত্বের হুবহু নকল করতে পারতেন।
সুগন্ধা পরে জানিয়েছিলেন, কৌতুক অভিনেতা কপিল শর্মাই তাঁকে ওই প্রতিযোগিতায় অংশ নিতে বলেছিলেন। অমৃতসরের গুরু নানক দেব বিশ্ববিদ্যালয় থেকে স্নাতকোত্তর পড়েছিলেন সুগন্ধা। কপিল ছিলেন তাঁর ‘সিনিয়র’।
সুগন্ধা মনে করেন, ওই প্রতিযোগিতাই তাঁর জীবনের মোড় ঘোরায়। ‘লাফটার চ্যালেঞ্জ’-এ লতা মঙ্গেশকরের গানের নকল করে নজর কেড়েছিলেন সুগন্ধা। এর ঠিক দু’বছর পর তিনি সারেগামাপা সিংগিং সুপারস্টার প্রতিযোগিতাতেও অংশ নেন।
‘লাফটার চ্যালেঞ্জ’-এ ফাইনালিস্ট ছিলেন। তার পর সুগন্ধা অনেকগুলি কমেডি অনুষ্ঠানে কাজ করেছেন। যেমন, 'কমেডি সার্কাস কে তানসেন' (২০১১), 'ছোটে মিয়াঁ বড়ে মিয়াঁ' (২০১১), 'কমেডি সার্কাসকে অজুবে' (২০১১) 'ড্রামা কোম্পানি' (২০১৮)। তবে সবচেয়ে বেশি নজর কাড়েন কপিল শর্মার কৌতুক অনুষ্ঠানে 'বিদ্যাবতী' চরিত্রে।
এর পাশাপাশিই চলছিল গান। তিনটি ছবিতে নেপথ্য সঙ্গীত গেয়েছেন। এ ছাড়া ‘উস লড়কে সে মহব্বত হ্যায়’, ‘চোরি চোরি’, ‘কিন্না সোনা’, ‘ছাল্লা’, ‘লোয়ে লোয়ে’-র মতো নিজস্ব গানের অ্যালবাম প্রকাশ করেছেন।
রেডিও জকি হিসেবে কাজ শুরু করেছিলেন। গান, কৌতুকাভিনয়ের পাশাপাশি সঞ্চালনাও শুরু করেন। ১২ বছরের কেরিয়ারে ২৪টি শো-এ তাঁকে নানা ভূমিকায় দেখা গিয়েছে।
ফিল্মে অভিনয়ও করেছেন সুগন্ধা। ‘হিরোপন্তি’ ছবিতে টাইগার শ্রফের সহ-অভিনেত্রী ছিলেন। তাঁর চরিত্রের নাম ছিল 'শালু'। ২০২২ সালে পরের ছবি মুক্তি পাওয়ার কথা। সেই ছবিরও কাজ চলছে।
বছরের সেরা মনোরঞ্জনকারীর খেতাব পেয়েছিলেন। ২০১৯ সালে টেলিভিশনের আইফা অ্যাওয়ার্ডে ওই সম্মান জানানো হয় সুগন্ধাকে।
বয়স ৩৭। এত কিছু সামলে নিজের ব্যবসাও চালান সুগন্ধা। নিজের ইনস্টাগ্রাম অ্যাকাউন্টে একটি বিশেষ সৌন্দর্য পণ্যের বিজ্ঞাপন করতে দেখা গিয়েছে তাঁকে।
গত ২৬ এপ্রিল বিয়ে করেছেন। তাঁর স্বামী সঙ্কেত ভোঁসলে একাধারে চিকিৎসক আবার কৌতুক অভিনেতাও।
সেলিব্রিটি জুটির ডাকনামও আছে। সুগন্ধা এবং সঙ্কেতের জুটিকে একসঙ্গে ‘সুকেত’ বলেন গুণগ্রাহীরা।
সুগন্ধা জানিয়েছেন, বিভিন্ন ভূমিকায় নিজের এই পারদর্শিতা উপভোগ করেন তিনি। যে কোনও মুহূর্তে যে কোনও ভূমিকায় নিজের সেরাটুকু দেওয়াটাই তাঁর পছন্দের চ্যালেঞ্জ। আর এই চ্যালেঞ্জ ভবিষ্যতেও তিনি বারবার নেবেন।