জামাইষষ্ঠী নিয়ে যাবতীয় উত্সাহ ও উত্তেজনা আমার মায়ের। যাবতীয় রিচ্যুয়াল এখনও মেনটেন করেন। এই বয়সেও যে কোনও কাজের পারফেকশন দেখলে অবাক হয়ে যাই। বাজার করা, রান্না করা, থালাবাটিতে সাজিয়ে পরিপাটি করে পরিবেশন করা— সবটাই করেন একা হাতে। দেখি, আর অবাক হই। মায়ের বয়সে পৌঁছলে এত সব বোধহয় আমি করতে পারব না। আসলে হুল্লোড়টা ভালই লাগে। তারপর খাটনির কথা ভেবে পিছিয়ে যাই।
আমরা তিন বোন। আমার মেজদি, ওকে আমি ‘ভাই’ বলি। বিদিশা। ও মুম্বইতে থাকে। কাজের চাপে আসা হয় না। তাই পালা করে আমার বা দিদির বাড়িতে জামাইষষ্ঠীর সেলিব্রেশন হয়। তবে ওর মুম্বইয়ের ঠিকানায় মা সব কিছু গুছিয়ে পাঠিয়ে দেন।
মনে আছে, আমার বিয়ের পর প্রথম জামাইষষ্ঠীটাতে দিদির (বিদীপ্তা চক্রবর্তী) বাড়িতে সেলিব্রেট হয়েছিল। দুই জামাইয়ের জন্য মা নিজের হাতে রান্না করেছিলেন। দু’দিন আগে থেকে বাজার। একদিন আগে থেকে রান্নার জোগাড়। তার পর অনুষ্ঠানের দিন প্রদীপ জ্বালিয়ে, চন্দনের ফোঁটা দিয়ে বরণ। থালার পাশে সারি সারি বাটি। দই, মিষ্টি, আম, তরমুজ— সে এক এলাহি কাণ্ড। আমার বর অভিষেক তো প্রবল অস্বস্তিতেই পড়েছিল। তারপর দিদির বর বিরসা আর অভিষেক, মানে দুই জামাই আরও লজ্জা পেয়েছিল এটা ভেবে যে, শাশুড়ি এত কিছু করছেন আর আমরা কোনও উপহার কিনতেই ভুলে গিয়েছি। তখনই ভাল শাড়ির খোঁজে দে’ ছুট ‘শ্রাবস্তী’তে।
জামাই বরণ। ছবি সৌজন্যে: সুদীপ্তা চক্রবর্তী।
২০১৫-র জামাইষষ্ঠীতে সবাই মিলে চায়না টাউনে লাঞ্চ করতে গিয়েছিলাম। মা চাইনিজ খেতে খুব ভালবাসেন। আবার ২০১৬-তে আমার মেয়ে খুব ছোট ছিল। তাই আমাদের বাড়িতে জামাইষষ্ঠী হয়েছিল। মা নিজে হাতে সব ব্যবস্থা করেছিলেন। সে বার অভিষেকের দেওয়া সালোয়ার কুর্তা পরে মায়ের আহ্লাদ আর দেখে কে! মাঝরাত অবধি চেঞ্জ করেননি। এ বারও হয়তো আমাদের বাড়িতেই হবে।
এমনিতে অভিষেক রেস্তোরাঁর খাবার পছন্দ করে না। ওর পছন্দ সুক্তো আর মাছ। মা খুব ভাল সুক্তো রান্না করেন। বিরসা আবার মটন ভালবাসে। মায়ের এ সবে কোনও ক্লান্তি নেই। আমি আর দিদি সব সময়েই বলি, মা আছেন বলেই এ সব অনুষ্ঠান এখনও বেঁচে আছে। আমার মেয়ে যখন বড় হবে, এত সব করতে পারব কি না জানি না। আর তখন যুগটাও যে কোনদিকে যাবে…। কিন্তু মা যত দিন আছেন জামাই ভাগ্যে আমাদেরও ভালই পেটপুজো হয়। জামাইষষ্ঠী জিন্দাবাদ!
জামাইষষ্ঠীর মহাভোজ। শাশুড়ি মায়ের সঙ্গে অভিষেক। ছবি সৌজন্যে: সুদীপ্তা চক্রবর্তী।