তিনি ‘অপু’র বাল্যবন্ধু ‘বিমলেন্দু’।
প্রথমে বিনয়ী, তার পরে আত্মবিশ্বাসী। প্রথমে বলেছিলেন, “শুভ্রজিৎ মিত্রের ‘অভিযাত্রিক’ ছবিতে আমার অংশ খুবই ছোট।’’ তার পরেই সংযোজন— “ছোট হলেও দর্শক-মনে ‘বিমলেন্দু’ ছাপ ফেলবে।” বক্তা শুভ্র এস দাস। ছবিতে তিনি ‘অপু’র বাল্যবন্ধু ‘বিমলেন্দু’।
ছোট্ট চরিত্র নিয়েও এমন আত্মবিশ্বাসের নেপথ্যে কী কারণ? অভিনেতার দাবি, বিভূতিভূষণ বন্দ্যোপাধ্যায়ের ‘অপরাজিত’ উপন্যাসে বিমলেন্দু ছিল মাত্র বছর সাতেকের বালক। তাকেই পরিচালক দক্ষতার সঙ্গে ১৯৪০ সাল থেকে পৌঁছে দিয়েছেন ২০২১-এ। সেই সময়ের শিক্ষিত, পরাধীন দেশের স্বাধীনতাকামী, নারী স্বাধীনতায় বিশ্বাসী যুবক হিসেবে। ‘‘আর আমায় পৌঁছে দিয়েছে অরিন্দম শীলের আগামী ছবি ‘মহানন্দা’ পর্যন্ত।’’— আনন্দবাজার অনলাইনের সঙ্গে ‘অভিযাত্রিক’ নিয়ে, নিজের অভিনীত চরিত্র নিয়ে এ ভাবেই অনর্গল শুভ্র।
প্রথম যখন শুভ্রজিতের মুখে নিজের চরিত্রের বিবরণ শোনেন, ভাবতেও পারেননি সেই চরিত্রও নিজ গুণে ছবিতে ভাল জায়গা করে নেবে। শুভ্রর কথায়, ‘‘পাখি পড়ার মতো করে শুভ্রজিৎদা আমায় বিমলেন্দুকে বুঝিয়ে দিয়েছিলেন। ওঁর চোখ দিয়ে দেখেছিলাম ১৯৪০-এর নামী বিশ্ববিদ্যালয় থেকে ভাল রেজাল্ট করে বেরনো শিক্ষিত যুবককে।’’ চরিত্র হয়ে উঠতে গিয়ে লম্বা চুল, দাড়ি-গোঁফ রাখতে হয়েছে। বদল আনতে হয়েছে চলনে-বলনে। পড়াশোনাও করতে হয়েছে বিস্তর। চিত্রনাট্য অনুযায়ী, দিদি ‘লীলা’ ওরফে অর্পিতা চট্টোপাধ্যায়ের কাশীযাত্রার সময়েই ছবিতে দেখা যাবে বিমলেন্দুকে।
নিজের চরিত্রকে আত্মস্থ করার পাশাপাশি শুভ্র কাছ থেকে দেখলেন এই প্রজন্মের ‘অপু’ ওরফে অর্জুন চক্রবর্তীকে। সৌমিত্র চট্টোপাধ্যায় আর অর্জুন চক্রবর্তী কি কোথাও মিলেমিশে একাকার? ‘‘একেবারেই না’’, দাবি অভিনেতার। একই সঙ্গে এ-ও জানিয়েছেন, প্রয়াত কিংবদন্তি অভিনেতার সঙ্গে কাজ করার সুযোগ তাঁর হয়নি। তবুও শুভ্রর ব্যাখ্যা— ‘‘তুলনা না করেই বলতে পারি, দুই অভিনেতা তাঁদের নিজস্ব ভঙ্গীতে একই চরিত্রকে ফুটিয়ে তুলেছেন। অর্জুনদার মধ্যেও অপুর মতোই শিশুসুলভ ভাব লুকিয়ে। ফলে, এই সময়ে তাঁকে ‘অপু’ বলে ভাবতে খুব অসুবিধে হবে না দর্শকদের।’’
ছবিতে অপু, কাজলের সঙ্গে প্রতিটি চরিত্রই সমান্তরাল ভাবে বিন্যস্ত। শুভ্রর মতে— এই প্রজন্মের যাঁরা এখনও ‘পথের পাঁচালী’ পড়েননি, তাঁরা আস্থা রাখতে পারেন ‘অভিযাত্রিক’-এর উপরে। এতে প্রায় সব চরিত্রই নিজ গুণে, বৈশিষ্ট্যে উজ্জ্বল। বলতে বলতেই স্মৃতিতে ডুব দিলেন তিনি, ‘‘বজরায় করে বারাণসীর গঙ্গায় ভ্রমণ। প্রদীপ জ্বালিয়ে গঙ্গাবক্ষে আরতি দেখা। মধুর ভান্ডারকরকে কাছ থেকে দেখার সৌভাগ্য। ভাল শট দিলে পরিচালক, অর্পিতাদি, সোহাগ সেনের প্রশংসা— কোনটা ছেড়ে কোনটা বলি! এগুলোই আমায় আগামী দিনে এগিয়ে দেবে।’’