১৯৪৬ সালের ৬ অক্টোবর পেশোয়ারের এক ব্যবসায়িক পরিবারে জন্ম বিনোদ খন্নার। তাঁর জন্মের এক বছরের মধ্যেই দেশভাগ হয়ে যায়। পেশোয়ার তখন পাকিস্তানের অন্তর্ভুক্ত করা হয়। ফলে পরিবারের সঙ্গে ভিটে মাটি ছেড়ে ভারতে চলে আসতে হয় বিনোদকে।
প্রথমে ভারতের মুম্বইয়ে তাঁর পরিবার বসতি স্থাপন করে। কয়েক বছর পরে পরিবার আবার দিল্লি চলে যায়। বিনোদ তখন খুবই ছোট। দিল্লি পাবলিক স্কুলে পড়াশোনা করেন তিনি। তবে পাকাপাকি দিল্লিতে ছিলেন না, পরে আবার একসময় মুম্বইয়ে চলে যায় পরিবার।
বিনোদের বরাবরই সায়েন্স নিয়ে পড়ার ইচ্ছা ছিল। কিন্তু বাবার ইচ্ছা অনুযায়ী তাঁকে কমার্স নিয়ে পড়াশোনা করতে হয়। মুম্বইয়ে পড়ার সময় তিনি কলেজ থিয়েটার দলে যোগ দিয়েছিলেন।
সেখানেই প্রথম স্ত্রী গীতাঞ্জলি তলেয়ারখানের সঙ্গে তাঁর পরিচয়। গীতাঞ্জলির বরাবরই মডেল হওয়ার ইচ্ছা ছিল। তাঁর ব্যক্তিত্ব বিনোদকে মুগ্ধ করে তুলেছিল।
কলেজ পাশ করার পর থিয়েটারে তাঁর অভিনয় দেখে সুনীল দত্ত তাঁকে ফিল্মে অভিনয়ের সুযোগ করে দিয়েছিলেন। ১৯৬৮ সালে ফিল্মে ডেবিউ করেন বিনোদ।
প্রথম ছবি এতটাই হিট হয়েছিল যে, রাতারাতি বলিউডের জনপ্রিয় অভিনেতা হয়ে যান বিনোদ। পরপর ১৫ ফিল্মে সই করে ফেলেন তিনি।
ইতিমধ্যে গীতাঞ্জলির সঙ্গে তাঁর সম্পর্ক আরও ঘনিষ্ঠ হয়। তবে বিয়ের কথা প্রথম দিকে একেবারেই ভাবতে চাননি বিনোদ। কেরিয়ারে ভালভাবে প্রতিষ্ঠিত হওয়ার পরই তিনি বিয়ের সিদ্ধান্ত নেন।
১৯৭১ সালে গীতাঞ্জলির সঙ্গে বিয়ে হয় বিনোদের। একেবারে আদর্শ স্বামীর ভূমিকা পালন করছিলেন বিনোদ খন্না। একইসঙ্গে পরিবার এবং কেরিয়ার সামলাচ্ছিলেন।
১৯৭২ সালে রাহুল এবং ১৯৭৫ সালে ছোট ছেলে অক্ষয় খন্নার জন্ম হয়। রবিবারটা শুধু পরিবারের জন্যই বরাদ্দ ছিল বিনোদের। ইন্ডাস্ট্রির ভিতরে এবং বাইরে বিনোদের মহিলা ভক্তের সংখ্যা অসংখ্য হলেও কখনও স্ত্রীর সঙ্গে বিশ্বাসঘাতকতা করেননি তিনি।
বিনোদের সেই সুখের পরিবারে হঠাৎ ছন্দপতন! অশান্তি নেমে আসে তাঁর পরিবারের মধ্যে। তার মূলে ছিল বিনোদ খন্নার আধ্যাত্মিক চিন্তধারণা।
আচমকাই তিনি ওশোর শিষ্যত্ব গ্রহণ করেন। তিনি ওশোর চিন্তাধারায় তিনি এতটাই প্রভাবিত হয়েছিলেন যে, বলি ইন্ডাস্ট্রি থেকেও নিজেকে পুরোপুরি সরিয়ে নেন।
আশ্রম থেকে তাঁকে আমেরিকায় পাঠিয়ে দেওয়া হয়। সংসারের মায়া ত্যাগ করেছিলেন বিনোদ। পরিবারের সঙ্গে সে সময়টা তাঁর দেখা তো দূর, কথাও হত না ঠিকভাবে।
অনেক বোঝানোর চেষ্টা করেও ব্যর্থ হয়েছিলেন স্ত্রী গীতাঞ্জলি। সংসারের প্রতি উদাসীনতা মেনে নিতে পারেননি তিনি। ছেলেদের ভবিষ্যতের কথা ভেবে বিনোদকে ডিভোর্স দিয়ে দেন তিনি।
আমেরিকা থেকে বিনোদ খন্না যখন ফিরেছিলেন, তখন তিনি সব হারিয়েছেন। স্ত্রী-সন্তানদের সঙ্গে কেরিয়ারও অনেক পিছনে ফেলে দিয়েছিলেন তিনি ততদিনে। তবে ইন্ডাস্ট্রি বিনোদের কামব্যাক স্বাগত জানিয়েছিলেন।
ফের নতুন করে শুরু করলেন বিনোদ। অমৃতা সিংহের সঙ্গে তাঁর সম্পর্কও তৈরি হয়। কিন্তু অমৃতার মা এটা মেনে নেননি। পরে কবিতা দফতরি নামে এক মহিলার সঙ্গে তাঁর পরিচয় হয়।
কবিতাকেই বিয়ে করে নতুন করে সংসার পাতেন বিনোদ খন্না। দ্বিতীয় পক্ষেও তাঁর দুই সন্তান। এই দ্বিতীয় বিয়ে করার পর প্রথম পক্ষের সন্তানরা (রাহুল এবং অক্ষয়) তাঁর সঙ্গে কোনও যোগাযোগ রাখেননি।
২০১৭ সালে ক্যানসারে বিনোদ খন্নার মৃত্যুর পরও তাঁর প্রথম পক্ষের দুই সন্তানের কেউই বাবার মুখাগ্নি করতে চাননি।