শাহিদ, প্রতীক এবং সুস্মিতা।
ওটিটির সুবাদে তারকা, না কি তারকা বলেই ওটিটিতে? আগামী কয়েক বছরে ভারতীয় ওটিটির ক্ষেত্রে এই প্রশ্ন আরও বড় হয়ে উঠতে পারে। তবে গত এক বছরে ওটিটি প্ল্যাটফর্মে তারকা-প্রবাহের স্রোত বাড়তে দেখে উষ্মা প্রকাশ করেছেন নওয়াজ়উদ্দিন সিদ্দিকি। সম্প্রতি এক সাক্ষাৎকারে নওয়াজ় বলেছেন, ‘‘অতিমারির কারণে সিনেমা হলে ছবি রিলিজ় করছে না। তাই সুপারস্টাররা ওটিটিতে কাজ করছেন। আগে কেন তাঁরা আসেননি? প্রাইম স্ট্রিমিং প্ল্যাটফর্মগুলি এখন তারকাদের নিতে আগ্রহ দেখাচ্ছে। ওটিটিতে প্রথম যাঁরা কাজ করেছিলেন, তাঁরা প্যাশনের জন্যই এসেছিলেন।’’ প্রথম ভারতীয় অরিজিনাল সিরিজ়ের (দ্য সেক্রেড গেমস) গণেশ গাইতোণ্ডের কণ্ঠে কিছুটা হলেও নিরাপত্তাহীনতার ছায়া স্পষ্ট। ওটিটিতে প্রতিযোগিতা বাড়ছে। কিন্তু তারকা চমক কি ওটিটির সহায়?
ওয়েব সিনেমা
২০১৮ সাল থেকে ভারতীয় ওটিটির উত্থান। গত বছর দেশে-বিদেশে তা নজরকাড়া ব্যবসা করেছে। অতিমারি ও তার জেরে সিনেমা হলের দীর্ঘ সময় বন্ধ থাকা হিন্দি ছবি তৈরি ও তা বিক্রি করার চেহারাটাই বদলে দিয়েছে। প্রথম সারির তারকাদের কাছে ওটিটিতে কাজ করা এখন কিছুটা হলেও দায়বদ্ধতা। কারণ আগের মতো বড় পর্দার জন্য ছবি তৈরি হচ্ছে না। কিন্তু তারকা বলেই যে তাঁদের নেওয়া হচ্ছে, সেটা সব ক্ষেত্রে বলা চলে না।
গত সপ্তাহে মুক্তি পাওয়া কর্ণ জোহর প্রযোজিত অ্যান্থলজি ছবি ‘অজীব দস্তানস’-এ মুখ্য চরিত্রে জয়দীপ অহলওয়াত, অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়, শেফালি শাহ। বড় পর্দায় পরিচিত হলেও, ওটিটির দৌলতেই এঁদের পরিচিতি বেড়েছে।
আবার কয়েক বছর আগে ‘লাস্ট স্টোরিজ়’-এ ভিকি কৌশল এবং কিয়ারা আডবাণীর মতো প্রথম সারির তারকাদের নিয়েছিলেন কর্ণ। যে কোনও মাধ্যমের মতোই ওটিটির শুরুর দিনেও হয়তো তারকা ম্যাজিক কাজ করেছে। কিন্তু সেটাই ফর্মুলা হয়ে যায়নি। অনুষ্কা শর্মা প্রযোজিত নেটফ্লিক্স ছবি ‘বুলবুল’-এ ছিলেন প্রায় নবাগতা তৃপ্তি দিমরি। অনুষ্কার আগামী প্রজেক্ট ‘কালা’তেও তৃপ্তি মুখ্য চরিত্রে। ‘দ্য হোয়াইট টাইগার’ ছবিতে দেখা গিয়েছে রাজকুমার রাও এবং প্রিয়ঙ্কা চোপড়াকে। তবে তাঁরা পার্শ্বচরিত্রে ছিলেন। লাইমলাইট কেড়েছেন স্বল্প পরিচিত আদর্শ গৌরব।
ইন্ডাস্ট্রি সূত্রে খবর, বলিউডের বেশির ভাগ নামী ব্যানারগুলির সঙ্গে নেটফ্লিক্স, অ্যামাজ়নের দীর্ঘমেয়াদি চুক্তি রয়েছে। সেখানে ছবি-সিরিজ়ে তারকা, নবাগত এবং চরিত্রাভিনেতাদের নেওয়ার ক্ষেত্রে ভারসাম্য রাখতে হবে।
ওয়েব সিরিজ়
রাজ এবং ডিকের পরিচালনায় একটি ওয়েব সিরিজ়ে কাজ করছেন শাহিদ কপূর। সেফ আলি খানের পরে তিনিই বলিউডের অন্যতম তারকা, যিনি ছবির পাশাপাশি ওয়েব সিরিজ়ের কাজ করছেন। অক্ষয়কুমার এবং হৃতিক রোশনের নানা প্রজেক্টের কথা শোনা গেলেও, তার কোনওটাই চূড়ান্ত হয়নি। ববি দেওল (আশ্রম), সুস্মিতা সেনের (আরিয়া) মতো এক সময়ের তারকারা ওয়েবের সুবাদে নতুন জমি পেয়েছেন। অভিষেক বচ্চনের কেরিয়ারের এই পর্যায়ে ছবি ও সিরিজ় দুটোরই গুরুত্ব রয়েছে। তবে ওটিটিতে তাঁর আসা ছবিগুলি (লুডো, দ্য বিগ বুল) আদতে ওটিটির জন্য তৈরি হয়নি।
অন্য দিকে রাজ আর ডিকের পরিচালনায় ‘দ্য ফ্যামিলি ম্যান’ সিরিজ়ে প্রশংসিত হয়েছেন মনোজ বাজপেয়ী। অক্ষয় খন্না, রবিনা টন্ডন, মাধুরী দীক্ষিতের প্রজেক্টও ওটিটিতে আসবে। তাঁদের ক্ষেত্রে কনটেন্ট এবং তারকা চমক দুটোই কাজ করছে।
ওটিটির সুবাদে তারকা
তারকা শব্দটির মানে অনেকটাই বদলে দিয়েছে স্ট্রিমিং প্ল্যাটফর্ম। এর একটা মানে যদি কাজের পরিধি বাড়ানো হয়, তবে প্রতীক গাঁধী সে ধারার উজ্জ্বল দৃষ্টান্ত। ‘স্ক্যাম ১৯৯২’ সিরিজ়ের পরে স্বল্প পরিচিত গুজরাতি অভিনেতার হাতে এখন বলিউডের তিন-চারটি প্রজেক্ট রয়েছে। কর্ণ জোহর, মালাইকা অরোরা, করিনা কপূর খানের সঙ্গে একটি রিয়্যালিটি শোয়ে শামিল করা হয়েছে তাঁকে।
ছোট-বড় পর্দা নির্বিশেষে তারকারা ওটিটিতে কাজ করছেন। পরিস্থিতি সাপেক্ষে আগামী দিনে তা বাড়বে বই কমবে না। কিন্তু তারকা-চমকেই তাঁদের তরী পার হয়ে যাবে না। বক্স অফিসের বদলে ভিউজ় বাড়ানোর লড়াই আরও কঠিন।