কাঞ্চন-শ্রীময়ী। ছবি: সংগৃহীত।
সময় শান্ত নয়। কেউ ভাল নেই। মন ভাল নেই। আরজি কর কাণ্ডে বিচার চেয়ে পথে নেমেছে শহরবাসী। সমাজমাধ্যম হোক কিংবা টিভি, সর্বত্রই বিদ্রোহের ছবি। ‘বিচার চাই’ স্লোগান দেখতে দেখতে ক্লান্তি আসছিল। সেই অস্থিরতার মধ্যেই ভালবাসার উদ্যাপন করলাম না হয়, ইচ্ছে হল। আমাদের বিয়ের সাত মাস কেটেছে সবে। কিন্তু আমাদের চেনা জানা তো দীর্ঘদিনের। সেই প্রথম চেনার সময় এত ভয় ছিল না, নিরাপত্তার অভাব বোধ হত না। কেউ যখন তখন যে কোনও ছবি প্রকাশ্যে এনে দেবে, এমন দুর্ভাবনা ছিল না।
প্রায় ১২ বছর আগে যখন কাঞ্চনের সঙ্গে আলাপ হয়েছিল তখন সবে মাধ্যমিক দিয়েছি। কথা হত, আজ আমার ভূগোল পরীক্ষা ছিল, নাকি ইতিহাস পরীক্ষা ছিল, সে সব নিয়ে। তখন দামি ফোনও ছিল না। দেখা সাক্ষাৎ হত কাজের জায়গায়। তবে আমরা যে খুব বেশি একসঙ্গে কাজ করেছি তেমনটাও তো নয়। অপেক্ষা করে থাকতাম দুর্গা পুজোর জন্য। সেই সময় একটা দিন বিশেষ ভাবে দেখা হত কাঞ্চনের বন্ধুর বাড়িতেই। কাঞ্চনদের একটা গ্রুপ ছিল, ইন্ডাস্ট্রির অনেক বন্ধুরাই ছিল তাতে। খরাজদার (খরাজ মুখোপাধ্যায়) বাড়িতে আড্ডা বসত। প্রথম দিন থেকে আমাদের সম্পর্কের সাক্ষী খরাজদা।
সেই সব দিন বড্ড মনে পড়ে। এখন এই সমাজমাধ্যমের অতি সক্রিয়তার যুগে সে সব যেন কোথায় হারিয়ে গেল। প্রেমের সূচনা পর্বে কখনও ভয় পাইনি, কিংবা প্রেম জাহির করার প্রয়োজনও বোধ করিনি। গান-বাজনা, আড্ডা এ সব নিয়েই দিন কেটেছে। অনেক বেশি সুরক্ষিত বোধ করতাম।
কিন্তু এখন মানুষের প্রতিবাদ থেকে দৈনন্দিন খুঁটিনাটি— সব কিছুর একটাই জায়গা, সমাজমাধ্যম। বর্তমান সময়ে দাঁড়িয়ে একটা বিষয়ে আমি নিশ্চিত, সম্পর্ক শুরুর দিনগুলি যেমন ঢাক ঢোল পেটাইনি, তেমনই এই সম্পর্কে যদি কোনও দিন ইতি টানতে হয়, তা হলে সেটাও হবে সৌজন্য বজায় রেখেই। হতেই পারে ১০ বছর বাদে আমরা হয়তো একসঙ্গে থাকতে পারলাম না। তখন আমি আমার অন্দরমহলের কথা নিশ্চয় রাস্তায় ছড়িয়ে দেব না! কাঞ্চনের আগের বিয়ের ক্ষেত্রে তো সেই কুৎসা হল। আমার খুব খারাপ লেগেছিল। বিষয়টা ব্যক্তিগত রাখা যেত। সেটা নিয়ে রাস্তায় নামার দরকার ছিল না। পরে একটা বিবৃতি দিলেই তো মিটে যেত। অনেকটা উত্থান-পতন, বাধা-বিঘ্ন পেরিয়ে এই সম্পর্কটা পরিণতি পেয়েছে। আমি চাই আমাদের এই বন্ধুত্ব দীর্ঘজীবী হোক।
এই সময় হয়তো প্রেম উদ্যাপনের সঠিক সময় নয়। শহরের পরিস্থিতি নিয়ে আমিও উদ্বিগ্ন। আরজি কর-কাণ্ডে নিহত তরুণী চিকিৎসক-পড়ুয়ার পরিবারকে সমবেদনা জানাই। আমরা সকলেই বিচার চাইছি। মহিলারা পথে নেমেছেন। তবে একটা প্রশ্ন করতে চাই। শুধু শারীরিক নির্যাতনই কি সব? মানসিক নির্যাতনের বিচার কে করবে? আমাদের বিয়ের সাত মাস কেটে গিয়েছে। কিন্তু ক্রমাগত যে কুৎসিত মন্তব্য আসে সমাজমাধ্যমে, সেটাও তো নির্যাতনই। বলতে পারি মানসিক অত্যচার। এরও বিহিত হওয়া দরকার।