আমাদের সমাজ, সমাজের মানুষেরা এত দ্রুত বদলে যাবেন ভাবিনি! সারাক্ষণ সবাই ফেসবুক, ইনস্টাগ্রাম, টুইটারে। অহরহ সেখানে একে অন্যকে নিয়ে কাটাছেঁড়া করছেন। তার সিংহভাগ জুড়ে যেন তারকারা। তাঁদের পোশাক, ওঠা-বসা, চলন-বলন এবং সম্পর্কে ভাঙন শুনলেই মন্তব্য বাক্স উপচে কটাক্ষের বানভাসি! যেন বাকিদের আর কিছুই হয় না! তাঁরা যেন শতকরা নিরানব্বই ভাগ নিখুঁত।
আমার কথাই ধরুন। আমি ফ্যাশন শ্যুটে বক্ষভাঁজ দেখালে দোষ। স্পষ্ট কথা বললে খারাপ। ফেসবুকে রসিকতায় মাতলে নিন্দিত। সারমেয়দের ভালবাসলে কটাক্ষের শিকার। এখানেই শেষ নয়। এক বার আনন্দবাজার অনলাইন-কে দেওয়া এক সাক্ষাৎকারে মজা করে বলেছিলাম, আমার কি এক পুরুষে চলে? আমার পাঁচ জনকে চাই। কেউ মনখারাপে গান শোনাবেন। কেউ দরকারে বাজারটা সেরে দেবেন। কেউ আমায় নিয়ে বেরোবেন ইত্যাদি ইত্যাদি। তাই নিয়ে এখনও বিভিন্ন সংবাদমাধ্যমে খবর হয়েই চলেছে, শ্রীলেখা নানা বয়সের পুরুষকে খেয়ে দেখেছেন! বয়সে ছোট পুরুষেরাই নাকি বেশি মন কেড়েছে তাঁর!
আমি, আমরা তারকারা কি আদৌ এত রঙিন জীবন যাপন করি?
সব চেয়ে বেশি কাটাছেঁড়া হয় কোনও সম্পর্ক ভাঙলে। যাঁরা বিচ্ছিন্ন হলেন, তাঁরাও একে অন্যের বিরুদ্ধে কুৎসা ছড়ান। সেই সব পড়ে ইন্ধন পান নিন্দকেরা। যে যা পারেন লিখতে শুরু করে দেন। সমাজের রুচি ইদানীং এতই নিম্নগামী যে, সবার নজর যেন এ সব দিকেই। অথচ আমরাই পারি এই রুচিহীন কাজ রুখে দিতে। তার জন্য নিজেদেরও একটু বদলাতে হবে। সেই জন্য আজ আমার কলম ধরা। আমি আমার সমস্ত তারকা বন্ধু, সহকর্মীদের অনুরোধ জানাচ্ছি, দাম্পত্য বা সম্পর্ক ভাঙার কথা প্রকাশ্যে না-ই বা বললেন! হতেই পারে বনিবনার অভাব। এখনকার নারী অনেক স্বাধীন। কারণ, তাঁরা উপার্জন করেন। যা আমাদের মা-কাকিমারা করতেন না। ফলে, অনেক ছোটখাটো সমস্যা তাঁরা গায়ে মাখতেন না। সম্পর্কও টিকে যেত। এই প্রজন্ম সেটুকুও মানতে বা মানাতে চান না। ফলে, বিচ্ছেদ অবশ্যম্ভাবী। কিন্তু সে কথা সবাইকে জানিয়ে কী লাভ? এ ভাবে কী প্রমাণ করতে চাইছেন? কেনই বা জানাবেন বিচ্ছেদের কারণ!
একই সঙ্গে বলব, সম্পর্ক ভাঙার কথা যেমন জানাবেন না, ঠিক তেমনই প্রাক্তনকে প্রকাশ্যে কাঠগড়ায় না দাঁড় করানোই বুদ্ধিমানের কাজ। অতীতে আপনারাই কিন্তু অনেক ভাল সময় কাটিয়েছেন। সে সব ভুলে যেতে হবে বিচ্ছিন্ন হলে? বরং সেই সব মুহূর্ত, কথা, অনুভূতি ছড়িয়ে দিন ফেসবুকে। আপনার লেখা পড়ে ইতিবাচক মানসিকতা তৈরি হোক অন্তত দু’জন মানুষের। তাঁদের থেকে সেই বার্তা ছড়িয়ে যাবে আরও চার জনের মধ্যে। আমি আর আমার প্রাক্তন স্বামী কিন্তু তাই-ই করেছি। আমরা বিচ্ছিন্ন। কিন্তু কখনও একে অন্যের বিরুদ্ধে প্রকাশ্যে আঙুল তুলিনি। মেয়ে মাইয়্যাও তাই সুস্থ পরিবেশে বড় হয়েছে।