অনির্বাণ।
প্র: একেনবাবু আর জটায়ু... এই দু’টি নামই এখন আপনার সঙ্গে সমার্থক। শিক্ষকতার পেশা ছেড়ে পুরোদস্তুর অভিনয়ে আসার সিদ্ধান্ত নিয়ে ভুল করেননি তা হলে?
উ: নাহ (হাসি)। আগে যখন ছবি বা ওয়েবে এত কাজ করতে আরম্ভ করিনি, শুধুই থিয়েটার করতাম, তখনও এটাই মনে হত। আসলে দশটা-পাঁচটার গতে বাঁধা পড়ে যাওয়া পছন্দ নয় আমার। ইনফরমেশন টেকনোলজি ছিল আমার বিষয়, বহু ইঞ্জিনিয়ারিং ও ম্যানেজমেন্ট স্কুলে পড়িয়েছি। শিক্ষক হিসেবে জনপ্রিয়ও ছিলাম। অভিনয়ের প্রতিটা মুহূর্ত উপভোগ করব বলেই ঝুঁকি নিয়ে ১৪ বছরের শিক্ষকতার কেরিয়ার ছেড়েছিলাম।
প্র: মঞ্চ থেকে ক্যামেরার সামনে আসা কী ভাবে?
উ: আমি কিন্তু একেবারেই আনট্রেনড একজন অভিনেতা। বাড়ি ছিল বজবজে, কলকাতায় এসে যখন পাকাপাকি ভাবে থাকতে শুরু করি, তখনই ‘মাঙ্গলিক’, ‘চেতনা’-সহ আরও নানা নাট্যদলে অ্যামেচার অভিনেতা ছিলাম। সেই সময়ে থিয়েটারের রিহার্সাল সাধারণত সন্ধেয় হত, সপ্তাহের নির্দিষ্ট কিছু দিন। পরে বিভিন্ন জায়গা থেকে অভিনেতা এনে ২০-২৫ দিনে একটা নাটক নামিয়ে দেওয়ার চল শুরু হল। সারাদিন ধরে রিহার্সাল, ফলে চাকরির পাশাপাশি সেটা চালিয়ে যাওয়া মুশকিল হচ্ছিল। শেষমেশ চাকরিটা ছাড়লাম। সে সময়ে একসঙ্গে আটটা-ন’টা নাটকে অভিনয় করেছি, এমনও হয়েছে। ধীরে ধীরে ছবিতে ছোটখাটো চরিত্রের প্রস্তাব পেতে শুরু করি। ‘ফড়িং’ আমার প্রথম ছবি। আর ‘একেনবাবু’র জন্য চিত্রনাট্যকার সাহানা দত্ত আমার সঙ্গে যোগাযোগ করেছিলেন। আমার করা প্রথম প্রধান চরিত্র বলতে ওটাই। ‘একেনবাবু’ যদি সফল না হত, এখন পুরো ব্যাপারটাই অন্য রকম দাঁড়াত।
প্র: একেনবাবু থেকে জটায়ু, আপনার চেহারা এই ধরনের চরিত্রে মানানসই। তবে এই একই কারণে কি টাইপকাস্ট হওয়ার ভাবনা মনে এসেছে?
উ: চেহারার ব্যাপারটা আংশিক ভাবে সত্যি। কারণ, গল্পের একেনবাবুর সঙ্গে কিন্তু আমার চেহারার কোনও মিল ছিল না। ‘একেনবাবু’র পরে সকলে বলতে শুরু করেন, আমাকে জটায়ু হিসেবেও ভাল মানাবে। পরে সৃজিত মুখোপাধ্যায় যখন প্রস্তাবটা দিয়েছিল, প্রথমেই বলেছিল, ‘এই প্রজেক্টে আমার একটাই কাস্টিং ঠিক হয়ে রয়েছে, সেটা হল জটায়ু তুমি করছ।’ তবে আমি ভাগ্যবান, একেনবাবু কিংবা জটায়ুর পরেও আমাকে টাইপকাস্ট হতে হয়নি। জ়ি ফাইভের ‘লালবাজার’ সিরিজ়ে কিংবা সৃজিতেরই ‘কাকাবাবুর প্রত্যাবর্তন’-এ একেবারে অন্য ধরনের চরিত্র পেয়েছি। ‘রবীন্দ্রনাথ এখানে কখনও খেতে আসেননি’তে আমি পুলিশ অফিসারের চরিত্রে। অরিন্দম শীলের ‘তীরন্দাজ শবর’, মৈনাক ভৌমিকের ‘মারাদোনার জুতো’ কিংবা বিরসা দাশগুপ্তের ‘সাইকো’র মতো আসন্ন প্রজেক্টগুলিতেও ভিন্ন ধরনের চরিত্র করছি।
প্র: দীর্ঘ দিন পরে দর্শকের সামনে এক নতুন জটায়ু হাজির হল আপনার হাত ধরে। চরিত্রটা করার সময়ে কি বাড়তি চাপ অনুভব করেছিলেন?
উ: এত দিন পরে ফেলুদাকে নিয়ে কাজ হচ্ছে, আর তাতে আমি জটায়ুর চরিত্রটা করছি— ব্যাপারটা নিয়ে এতই মশগুল ছিলাম যে, আলাদা করে কোনও চাপ অনুভব করিনি। আমার রেফারেন্স পয়েন্ট ছিল মূল গল্প দু’টি এবং সৃজিতের ন্যারেশন। নিজের মতো করে করব, এটা মাথায় রেখেই শুরু করেছিলাম। সৃজিতও চায়নি, আমি কাউকে অনুসরণ করি। জটায়ু বলতে এখনও সন্তোষ দত্তকেই দেখতে পাই। আমার ধারণা, বেশির ভাগ মানুষের কাছেই তাই।
প্র: জটায়ুর মতো অনির্বাণ চক্রবর্তীর জীবনও কি নারীবর্জিত?
উ: নারীবর্জিত বলাটা বোধহয় একটু বাড়াবাড়ি হয়ে যাবে। এটুকু বলতে পারি, জীবনের একটা পর্যায়ে বিবাহিত ছিলাম, কিন্তু এখন সব অর্থেই আমি সিঙ্গল।
প্র: সম্প্রতি একটি টিভি চ্যানেলের আলোচনাচক্রে আপনি এসেছিলেন, যে সভায় নিজেদের বক্তব্যের জেরে অভিনেত্রী সায়নী ঘোষ ও দেবলীনা দত্তকে আক্রমণের মুখে পড়তে হয়। কী ভাবে দেখেছেন গোটা বিষয়টিকে?
উ: ওই অনুষ্ঠানটির পরে আমাকে কোনও আক্রমণের মুখোমুখি হতে হয়নি ঠিকই, কিন্তু সায়নী বা দেবলীনার ক্ষেত্রে বিষয়টা যে ভাবে ব্যক্তিগত আক্রমণের দিকে চলে গেল, তা একেবারেই অনভিপ্রেত। সহিষ্ণুতা এতই কমে গিয়েছে যে অন্যের মতামতকে সম্মান করতেও ভুলে গিয়েছি আমরা। এখন সহজেই অন্যকে শত্রু ধরে নেওয়া হয়। এর প্রভাব কাজেও পড়ে।