এত দিন শুধু দক্ষিণী ছবির রিমেক বলিউড কিংবা টলিউডে দেখা গেলেও টিভির সুবাদে হিন্দি ডাব্ড দক্ষিণ ভারতীয় ছবিও মনে ধরেছে সিনেপ্রেমীদের। সেখানকার সিনেমার চিত্রনাট্য, জৌলুসের পাশাপাশি দক্ষিণী নায়কদের জনপ্রিয়তা বিস্তৃত হয়েছে বিন্ধ্য পর্বতের উত্তরেও। দক্ষিণী নায়কদের অভিনয়, নাচের পাশাপাশি অ্যাকশনও মনে ধরেছে সিনে প্রেমীদের। আঞ্চলিক ছবির গণ্ডির বাইরে বেরিয়ে অনেকে পা রাখছেন বলিউডে। বাড়ছে দেশব্যাপী জনপ্রিয়তাও।
প্রভাস- দক্ষিণী তারকাদের মধ্যে নিঃসন্দেহে এই মুহূর্তে সবচেয়ে জনপ্রিয় প্রভাস। ‘বাহুবলী’র পর আসমুদ্রহিমাচলের নয়নের মণি এই তেলুগু তারকা। বাবা প্রযোজক ছিলেন, পাশাপাশি কাকাও অভিনয় করতেন। সেই সংযোগই প্রভাসকে টেনে আনে অভিনয়ের দিকে। তার আগে বি টেক কমপ্লিট করেছিলেন তিনি। প্রায় পনেরো বছরের কেরিয়ারে প্রচুর হিট সিনেমা উপহার দিয়েছেন দর্শকদের। তবে তার মধ্যে কাল্ট অবশ্যই ‘বাহুবলী’। এই ছবির পরেই সহ-অভিনেত্রী অনুষ্কা শেট্টির সঙ্গে প্রভাসের প্রেম নিয়েও জল্পনা তুঙ্গে। এমনও শোনা গিয়েছে, দু’জনের বিয়ের কথাও পাকা। তবে আদ্যন্ত প্রাইভেট পার্সন প্রভাস ব্যক্তিগত বিষয়ের বাইরে নিজের কেরিয়ার নিয়েই ব্যস্ত। আপাতত মন দিয়েছেন তাঁর বহুভাষিক ছবি ‘সাহো’র কাজে। তাঁর বিপরীতে থাকবেন শ্রদ্ধা কপূর।
মহেশ বাবু- দক্ষিণের সুপারস্টার হলেও এক নরম পানীয়ের বিজ্ঞাপনের পরেই দেশ জুড়ে পরিচিত মুখ হয়ে ওঠেন মহেশ বাবু। মাত্র চার বছর বয়সে শিশুশিল্পী হিসেবে গ্ল্যামার দুনিয়ায় পা রাখেন মহেশ। বাবা অভিনয় করতেন, সেই সূত্রেই অভিনয়ের সঙ্গে গাঁটছড়া বাঁধেন তিনি। তবে নায়ক হিসেবে কাজ শুরু করেন ১৯৯৯ সালে। তাঁর অভিনীত ‘ডোকুডু’, ‘বিজনেসম্যান’ দক্ষিণের সুপারহিট সিনেমা। অভিনয়ের সূত্রেই সহ-অভিনেত্রী নম্রতা শিরোদকরের প্রেমে পড়েন মহেশ। কিছু দিন পর বিয়েও করেন। জনপ্রিয়তার সূত্রে পাঁচ বছর আগে একটি নামী ম্যাগাজিনে বিশ্বের প্রথম একশো জন সেলেবের মধ্যে জায়গা করে নিয়েছিলেন তিনি। মহেশের বাৎসরিক আয় চল্লিশ কোটি টাকারও বেশি। তবে তিনি উপার্জনের তিরিশ শতাংশ অর্থ খরচ করেন সমাজসেবায়।
অল্লু অর্জুন- অল্লুও শুরু করেছিলেন চাইল্ড অ্যাক্টর হিসেবে। ২০০৩ সালে ‘গঙ্গোত্রী’তেই প্রথম নায়ক হিসেবে দেখা যায় অল্লুকে। তবে ‘আর্য’তে তাঁর অভিনয়, স্ক্রিন প্রেজেন্স ছাপ ফেলেছিল দর্শকের মনে। সঙ্গে তুখোড় ডান্স তো রয়েছেই। সোশ্যাল নেটওয়র্কিং সাইটেও বেশ সক্রিয় এই অভিনেতা। ফেসবুকে অল্লুর ভক্তসংখ্যা এক কোটিরও বেশি। বিগত তিন বছরেই তিনি স্থান পেয়েছেন একটি ম্যাগাজিনের জনপ্রিয় ১০০ সেলেব্রিটির তালিকায়।
সূর্য-তামিল ছবির অন্যতম জনপ্রিয় তারকা সূর্যকে হয়তো টিভিতে অনেকেই দেখেছেন। তাঁর হাসি, দুর্দান্ত অ্যাকশনে মজে দর্শকরা। তবে সূর্যর অভিনয়ে আসার ঘটনাও বেশ চমকপ্রদ। বাবা অভিনেতা হলেও প্রথম দিকে অভিনয় নিয়ে কোনও উৎসাহই ছিল না সূর্যর। একটি গারমেন্ট এক্সপোর্ট ফ্যাক্টরিতে চাকরি করতেন। সেখানে গোপন রেখেছিলেন বাবার পরিচয়ও। হঠাৎই ছবিতে অভিনয়ের সুযোগ পান মণি রত্নম প্রযোজিত ‘নেরুক্কু নার’ ছবিতে। তার পর আর ফিরে তাকাতে হয়নি তাঁকে। বিয়ে করেছেন জনপ্রিয় অভিনেত্রী জ্যোতিকাকে। কেরিয়ারে ‘গজনী’, ‘সিংহম’, ‘২৪’-এর মতো প্রচুর সুপারহিট ছবি রয়েছে সূর্যর ঝুলিতে। অভিনয়ের পাশাপাশি সমাজসেবামূলক কাজেও জড়িত এই অভিনেতা।
ধনুষ-‘রাঞ্ঝনা’র পরে ধনুষের জনপ্রিয়তা দক্ষিণের গণ্ডি পেরিয়ে সারা দেশেই ছড়িয়েছে। কিংবদন্তি অভিনেতা রজনীকান্তের জামাই হলেও স্বতন্ত্র পরিচয় তৈরি করেছেন এই তামিল তারকা। অভিনয়ে সপ্রতিভ হলেও প্রযোজক, পরিচালক, লেখক, গীতিকার, চিত্রনাট্যকার, গায়ক হিসেবেও সফল ধনুষ। তাঁর মতো বহুমুখী প্রতিভাশীল অভিনেতা সিনে ইন্ডাস্ট্রিতে বিরল। জাতীয় পুরস্কারও রয়েছে তাঁর ট্রোফির ক্যাবিনেটে।
রামচরণ তেজা-‘চিরঞ্জীবীর পুত্র’ এই ট্যাগটা ঝেড়ে ফেলে ক্রমশ তেলুগু ইন্ডাস্ট্রিতে নিজেকে প্রতিষ্ঠিত করেছেন রামচরণ। ব্লকবাস্টার ছবি ‘মগধীরা’য় অভিনয়ের পরে রাতারাতি তারকা হয়ে ওঠেন। তার পরে ‘জঞ্জির’-এর মাধ্যমে বলিউডে পা রাখলেও থিতু হতে পারেননি। তবে তেলুগু ছবিতে বেশ প্রতিষ্ঠিত তিনি। ‘ইয়েভাডু’, ‘ধ্রুব’র মতো বেশ কয়েকটি হিট ছবি রয়েছে রামচরণের কেরিয়ারে।
এঁদের পাশাপাশি সুদীপ, রবি তেজা, এন টি রামা রাও জুনিয়র, বিজয়, কার্তি, রানা দগ্গুবাতীরাও বেশ জনপ্রিয় দক্ষিণ ভারতে। এই একঝাঁক সুপারস্টারের দৌলতেই ক্রমশ বলিউডের জনপ্রিয়তায় থাবা বসাচ্ছে দক্ষিণী ছবিগুলিও। তবে দক্ষিণী ইন্ডাস্ট্রিতে তেলুগু এবং তামিল ছবির দাপট বাকিদের তুলনায় অনেকটাই বেশি।