বাবার মৃত্যু এখনও মেনে নিতে পারেননি পৌলমী।
সৌমিত্র চট্টোপাধ্যায়ের মৃত্যুর এক সপ্তাহ কেটে গিয়েছে। এই এক সপ্তাহ কেমন কাটল সৌমিত্র-তনয়া পৌলমী বসুর? ‘‘অদ্ভূত এক শূন্যতা ভয়ঙ্কর ভাবে গ্রাস করছে সর্ব ক্ষণ। এটা একেবারেই নতুন অনুভূতি। কারণ জন্ম থেকে দেখেছি বাপি আছে। এখনও বুঝে উঠতে পারছি না, তিনি নেই।’’ কথা বলতে বলতেই কান্নায় ভিজে আসে কণ্ঠস্বর। আনন্দবাজার ডিজিটালকে সোমবার তিনি বলেন, ‘‘আমি এতটা মিস করব বাপিকে, কখনও ভাবিনি। সব সময়েই বাপিকে খুঁজছি। মনে হচ্ছে কোথায় গেল, কোথায় গেল? বাড়িটা ফাঁকা লাগছে সব সময়।’’
বাবা যে তাঁর জীবনের সর্বোত্তম শক্তি, সে কথা বরাবরই বলেছেন পৌলমী। হঠাৎ সেই মানুষটার চলে যাওয়ায় তিনি এখনও পরিস্থিতির সঙ্গে মানিয়ে নিতে পারেননি। বলছেন, ‘‘সব সময়ই ভেবে এসেছি বাবা মাথার উপর রয়েছেন। এখনও মনে হচ্ছে এই বোধহয় সিঁড়ি দিয়ে নেমে আসবেন। ঘুম থেকে উঠে মনে হচ্ছে, এ বার বাপি এসে এখানে বসবেন, আমরা ব্রেকফাস্ট করব একসঙ্গে। যেটা রোজ হত। দুপুরে মনে হচ্ছে, এ বার বাপিকে ডাকি লাঞ্চ করতে। আমি ঠিক বলে বোঝাতে পারব না এই অনুভূতি কী রকম।’’ সঙ্গে যোগ করছেন, ‘‘সবচেয়ে বড় কথা কি জানেন, মন খারাপ বা দুঃখ হলে বাপিকেই বলতাম। এখন কাকে বলব?’’
পৌলমীর মন খারাপের আরও একটা কারণ রয়েছে। ক্রমাগত সামাজিক মাধ্যমে ট্রোলিংয়ের শিকার হয়ে সম্প্রতি ফেসবুক ছেড়েছেন। বলছেন, ‘‘কোনও ব্যক্তির মৃত্যুর পর সেই পরিবারের শোকের মধ্যেও মৃত ব্যক্তির চরিত্র নিয়ে এত কাটাছেঁড়া করা হচ্ছে, সেটা আমি নিতে পারিনি। বাবাকে নিয়ে যা বলা হচ্ছে, সেগুলো সবই মিথ্যা। আমি এ-ও একটা জায়গা থেকে শুনলাম, আমার মা নাকি আগেই মারা গিয়েছেন। আমরা তা লুকিয়ে রেখেছি। আমি জানি না, এ নিয়ে কী বলব। এমন কেউ বলতে পারে, সেটাই ধারণার বাইরে!’’
আরও পড়ুন: ভারতে কেন যে এমন সিরিজ হয় না, কুইন-আপ্লুত আনন্দের আক্ষেপ
আর কী শুনতে হয়েছে? পৌলমীর বক্তব্য, ‘‘আমার দাদাকে নিয়ে কুৎসিত নোংরা মন্তব্য করা হচ্ছে। আমি একটা পোস্টে লিখেছিলাম, কোভিডের মধ্যে আমাদের বাড়িতে যেন কেউ না আসেন। সেই পোস্ট উদ্ধৃত করে বলা হয়েছে, বাবাকে কোভিডের মধ্যে অর্থ উপার্জনের জন্য কাজ করতে পাঠিয়েছি, এ দিকে অন্যদের বলছি বাড়িতে না আসতে। এ সব থেকে বোঝা যায়, বাবাকে কতটা চেনেন বা জানেন ওঁরা। কোভিড তো বাড়িতে বসেও লোকের হচ্ছে। আর বাবার যে কাজের প্রতি একটা স্পৃহা ছিল, উনি যে কাজপাগল মানুষ ছিলেন, তা লোকে বোঝে না। অবশ্য আমার কাউকে বোঝানোর দায়ও নেই। কিন্তু বুঝতে পারছি না, শুধু আমাকেই কেন লক্ষ করা হচ্ছে।’’
বোনের সঙ্গে একমত সৌগতও। বলছেন, ‘‘অত্যন্ত কুরুচিকর মন্তব্য দেখেছি। এ নিয়ে চর্চা করতে ভাল লাগে না। আহত হই।’’
শুধু ব্যক্তিগত কুৎসাই নয়, সৌমিত্রের পরিবারকে অর্থসাহায্যও করতে চেয়েছেন কেউ কেউ। পৌলমীর ক্ষোভ, ‘‘একটি অদ্ভুত মেসেজ আমাকে ফরোয়ার্ড করা হয়েছে। কিছু মানুষ অর্থ সাহায্য করতে চাইছেন আমাদের। কারও দয়া বা করুণার পাত্র হতে চাই না। বাবাকে হারিয়ে যে শোক পেয়েছি, তা থেকে সারাজীবন হয়তো বেরোতে পারব না। কিন্তু, বাবা চলে যাওয়ার পর কী ভাবে আমাদের চলবে, সেটা ভেবে কেউ অর্থসাহায্য করতে চাইছেন। দেখুন, আমাদের ব্যক্তিগত যাপন নিয়ে তো কখনও বাইরে আলোচনা করিনি। তা হলে আমাদের ব্যক্তিগত জীবনের উপর অনাবশ্যক এই ফোকাস কেন? এতে অস্বস্তি হচ্ছে এবং অত্যন্ত আহত হচ্ছি। এগুলো কেন, বুঝতে পারছি না।’’
আরও পড়ুন: দু'টি ছবি হাতছাড়া করার আফসোস এত বছর পরেও রয়ে গেছে জুহি চাওলার
সোমবারই সৌমিত্রের ঘাটকাজ সেরে ফিরলেন পুত্র সৌগত চট্টোপাধ্যায়। আগামী কাল, মঙ্গলবার তাঁর শ্রাদ্ধের অনুষ্ঠান। সৌগত বলেন, ‘‘গৌড়ীয় মঠে হবে ওই অনুষ্ঠান। পুরোপুরি পারিবারিক স্তরে যাতে এই অনুষ্ঠান হয়, আমরা সেই বিষয়টার দিকে নজর দিয়েছি। কারণ, কোভিড সংক্রান্ত নিয়মকানুন তো এখনও রয়েছে। ফলে দশ-পনেরো জন মানুষের বেশি কেউ এই অনুষ্ঠানে থাকবেন না।’’
‘অপু’ নেই, মৃত্যুর এক সপ্তাহ পরে এটাই তাঁর সংসারের ছবি।