Soumitra Chatterjee

কেমন ছিলেন ফেলুদা সৌমিত্র, লিখলেন ‘ফেলুদা টোটা’

ফেলুদার চরিত্রে অভিনয় করতে যাওয়া মানেই তো সৌমিত্র-সত্যজিত্ জুটির কঠিন চ্যালেঞ্জ। কী ভাবে সামলালেন সেই চ্যালেঞ্জ? লিখলেন এই প্রজন্মের অন্যতম ‘ফেলুদা’।ফেলুদা সৌমিত্রবাবুর কথা বলা, হাঁটা সবটাই সত্যজিতের নির্দেশে। ওটা ‘আইকনিক’। আমি কিন্তু ওটা মাথা থেকে একেবারে দূরে সরিয়ে দিয়ে ফেলুদা করেছি। সৃজিত যা বলেছে তা-ই করেছি।

Advertisement

টোটা রায়চৌধুরী

শেষ আপডেট: ১৫ নভেম্বর ২০২০ ১৪:০১
Share:

ছোটবেলায় সৌমিত্র চট্টোপাধ্যায় বলে কাউকে চিনতাম না আমি। আমার কাছে ওঁর নাম ছিল ‘ফেলুদা’। খুব দুরন্ত ছিলাম। শুধু ফেলুদার বই হাতে ধরিয়ে দিলে শান্ত হয়ে যেতাম। তখন আমার কিশোরবেলা আর ফেলুদা আমার সবকিছু পারার কল্পলোক। বাবার সঙ্গে ঝগড়া হত। ‘দেশ’ পত্রিকায় ফেলুদার উপন্যাস কে আগে পড়বে! ছোটবেলাতেও ‘সোনার কেল্লা’ দেখেছি। আবার এখনও দেখছি। সিনেমাটা কতবার দেখছি বলতে পারব না। আমার পরের প্রজন্ম আমার সঙ্গে ‘সোনার কেল্লা’ দেখছে। আবার বাবার সঙ্গে বসে আমিও বহুবার ‘সোনার কেল্লা’ দেখেছি। কেন পুরনো হয় না এই ছবি? কিছুতেই ধরতে পারি না!

Advertisement

এই অবধি সব ঠিক ছিল।

কিন্তু যে দিন শুনলাম আমাকে ফেলুদার চরিত্রে অভিনয় করতে হবে, বেশ টেনশন হয়ে গিয়েছিল। একবার ভেবেছিলাম, সৌমিত্র চট্টোপাধ্যায়কে ফোন করে টিপ্‌স নেব। সত্যি কথা বলতে কি, ওই সাহসটাই করে উঠতে পারিনি। মনে হল, যদি বলে বসেন, “ডেঁপো ছেলে! তুমি ফেলুদা করতে শুরু করে দিলে!” নাহ্, তেমন কিছুই উনি বলতেন না। আমার সঙ্গে ওঁর সম্পর্কও খুব ভাল। তা-ও ভয় পেয়েছিলাম। ফলে আমি ঠিক করে নিয়েছিলাম ‘সৃজিত মুখোপাধ্যায়ের ফেলুদা’ হব। ওর কাছে নিজেকে স্রেফ সমর্পণ করে দিয়েছিলাম। সৃজিত ফ্লোরে সারাক্ষণ ‘ফেলুদাসমগ্র’ নিয়ে ঘুরে বেড়াত। বলত, ওই সমগ্র দুটো ওর ‘বাইবেল’। একটা লাইনও যেন এদিক-ওদিক না হয়!

সত্যজিৎ রায় ফেলুদার ক্ষেত্রে যা যা চেয়েছিলেন, ঠিক সেই রকম করে তিনি সৌমিত্রবাবুকে গড়ে তুলেছিলেন। ওই জায়গাটায় আর কোনও অভিনেতার হাত দেওয়ার ক্ষমতা নেই। শুধু ফেলুদা নয়। সন্তোষ দত্ত চলে যাওয়ার পরে সত্যজিৎ রায় তো আর ফেলুদাই করলেন না! আর কাউকে উনি লালমোহনবাবু হিসেবে মেনে নিতে পারেননি। তো, এমন একটা অবস্থায় সৌমিত্রবাবুর জায়গায় আমি ফেলুদা? চিন্তা তো ছিলই আমার। পাশাপাশি, আমি বেণুদার সঙ্গেও কাজ করেছি। এমনকি, বেণুদার অভিনয় করা ফেলুদার ছবিতেও আমি অভিনয় করেছি। সৌমিত্রবাবুর ফেলুদা আর বেণুদার ফেলুদার মধ্যে ২০ বছরের ব্যবধান। যে সময় বাবুদা (সন্দীপ রায়) ফেলুদা করতে গিয়েছেন, তখন সৌমিত্রবাবুর বয়স হয়ে গিয়েছে। উনি নাকি ঠাট্টা করে বলেছিলেন, “এখন আমি ফেলুদা করলে ফেলুজেঠু করতে হবে।”

Advertisement

সৃজিত যা বলেছে তা-ই করেছি। জানতাম নিজে থেকে কিছু করতে গেলেই অভিনেতা হিসেবে সৌমিত্রবাবুর অভিনয়ের দ্বারা চালিত হয়ে যাব।

ফেলুদা সৌমিত্রবাবুর কথা বলা, হাঁটা সবটাই সত্যজিতের নির্দেশে। ওটা ‘আইকনিক’। আমি কিন্তু ওটা মাথা থেকে একেবারে দূরে সরিয়ে দিয়ে ফেলুদা করেছি। সৃজিত যা বলেছে তা-ই করেছি। জানতাম নিজে থেকে কিছু করতে গেলেই অভিনেতা হিসেবে সৌমিত্রবাবুর অভিনয়ের দ্বারা চালিত হয়ে যাব! আমার মনে যে ভাবে উনি ফেলুদা হয়ে বসে আছেন, তাতে আমার মনকে হাইজ্যাক করে নেবেনই। এটাও জানতাম যে, আমার ফেলুদার ভূমিকায় অভিনয় করা নিয়ে অনেকেই সন্দিহান ছিলেন। তবে সৃজিতের মতো এমন খাঁটি ফেলুদাপ্রেমী আমি আর দেখিনি। সেখানেই আমার সব ভরসা। ওর কথা মতোই ‘রায়বাবু’-র সংলাপ বলেছি।

সৌমিত্রবাবুকে ‘অনুসরণ’ করেছি। ‘অনুকরণ’ করলে ক্যারিকেচার হয়ে যেত!

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement