জুটি: নাতির সঙ্গে করিমুল। নিজস্ব চিত্র
খুব বেশি দেরি নেই ৷ যে কোনও মাসেই শুরু হয়ে যাবে শ্যুটিং৷ আর তিনি শ্যুটিং নিয়ে ব্যস্ত হয়ে পড়লে গ্রামের দুঃস্থ মানুষদের যাতে চিকিৎসা পেতে কোনও অসুবিধা না হয়, তার জন্য দুই ছেলের ওপর আরও বেশি করে দায়িত্ব দিতে চাইছেন ‘অ্যাম্বুল্যান্স দাদা’৷
করিমুল হকের কথায়, ‘‘আমার দুই ছেলে সব কিছু শিখে ইতিমধ্যেই আমার সঙ্গে কাজে নেমে পড়েছে৷ তাদের বলেছি, সিনেমার শ্যুটিং শুরু হলে, আমি ব্যস্ত থাকব। তখন গরীব মানুষের স্বার্থে আরও বেশি দায়িত্ব নিতে হবে৷ তারা হাসিমুখে রাজি হয়ে গিয়েছে৷’’
১৯৯৫ সালে গুরুতর অসুস্থ হয়ে পড়েছিলেন তাঁর মা৷ অ্যাম্বুল্যান্স বা গাড়ি না পাওয়ায় মা-কে হাসপাতালে নিয়ে যেতে পারেননি তিনি৷ বাড়িতেই মৃত্যু হয় তাঁর৷ এরপর থেকেই লড়াইটা শুরু করিমুল হকের। এখনও বিশ্বাস করেন, সে দিন মা-কে হাসপাতালে নিয়ে যেতে পারলে মৃত্যুটা ঠেকানো যেত৷ এর পরেই বিনা চিকিৎসায় আর যাতে কারও মৃত্যু না হয়, তার জন্য কিছু করার জেদ চেপে বসে ৷ কখনও সাইকেলে তো কখনও ভ্যানে করে অসুস্থ মানুষদের হাসপাতালে নিয়ে যেতে শুরু করেন তিনি৷ পরবর্তীতে একটি মোটর সাইকেল কিনে সেটাকেই অ্যাম্বুল্যান্স বানিয়ে ফেলেন তিনি৷
তাঁর এই কর্মকাণ্ডের জন্য গত বছর পদ্মশ্রী সম্মান পান।
এর পরই করিমুলের কাজ নিয়ে চারিদিকে হইচই শুরু হয়৷ তাঁর এই লড়াই নিয়ে সিনেমা তৈরির আগ্রহ প্রকাশ করে বলিউড ৷ সম্প্রতি মুম্বইয়ের পরিচালক বিনয় মুর্গেল মালবাজারের রাজাডাঙায় করিমুলের বাড়িতে এসে এ ব্যাপারে চূড়ান্ত কথাবার্তা বলে যান৷
করিমুলের পরিবার সূত্রে জানা গিয়েছে, ছবিতে তাঁর ছোটবেলা ফুটিয়ে তুলবে তাঁরই সাড়ে চার বছরের নাতি৷ এখনকার কোনও প্রতিষ্ঠিত অভিনেতা অভিনয় করবেন করিমুলের নাম ভূমিকায়।
করিমুল হক জানান, এ মাসেই মুম্বই থেকে ফের জলপাইগুড়িতে আসবেন পরিচালক। হয়তো মার্চ মাসেই শুরু হয়ে যাবে শ্যুটিং। তাই আগে থেকেই প্রস্তুতি নিতে শুরু করে দিয়েছেন করিমুল। তিনি ব্যস্ত থাকলেও যাতে কোনওভাবে অসুস্থ মানুষদের পরিষেবা দিতে কোনও অসুবিধা না হয়। তাঁর কথায়, ‘‘আমার ছেলেদের তৈরি করে নিয়েছি। তাই এ কাজে কোনও অসুবিধাই হবে না৷’’
ছবি থেকে যা আয় হবে তার অর্ধেক টাকা তাকে দেওয়া হবে বলে জানিয়েছেন করিমুল হক৷ তার কথায়, ‘‘আমি সেই টাকা নিজে খরচ করব না৷ বরং আমার গ্রামের উন্নতি ও গরীব মানুষের চিকিৎসার কাজে লাগাবো৷’’
তাঁর জীবন নিয়ে এই ছবির শ্যুটিং কবে শুরু হয়, সে দিকেই এখন তাকিয়ে রয়েছে গোটা জলপাইগুড়ি৷