রূপকুমার এবং সোনালি রাঠৌরের প্রেমপর্ব তাঁদের জীবনের মতোই বর্ণময়। প্রথম আলাপ আশির দশকে। সে সময় রূপকুমার ছিলেন অনুপ জলোটার দলে।
তাঁদের প্রেমের সূত্রপাত বিশেষ মসৃণ ছিল না। সোনালি সে সময় ছিলেন অনুপের স্ত্রী। রূপকুমারের সঙ্গে আলাপ হওয়ার পর থেকে ধীরে ধীরে হারাতে থাকে তাঁর মনে গতি।
প্রথমদিকে বিবাহিত জীবন ছেড়ে বেরোতে চাননি সোনালি। কিন্তু পরে সিদ্ধান্ত পরিবর্তন করতে বাধ্য হন। কারণ দু’ নৌকায় পা দিয়ে চলতে চাননি সোনালি।
রক্ষণশীল গুজরাতি পরিবারের মেয়ে সোনালি ভজন শিখতেন অনুপের কাছে। এ ছাড়াও তাঁর সঙ্গীত প্রশিক্ষক ছিলেন পুরুষোত্তম উপাধ্যায় এবং হৃদয়নাথ মঙ্গেশকর।
পরবর্তীতে পরিবারের অমতেই গুরুজি অনুপ জলোটাকে বিয়ে করেন সোনালি। তাঁদের বিয়েতে সম্মতি ছিল না অনুপের পরিবারেরও।
বিয়ের পরে উত্তর ভারতের বিভিন্ন শহরে লাইভ পারফরম্যান্স করতেন অনুপ-সোনালি। তাঁদের অনু্ষ্ঠান জনপ্রিয় ছিল শ্রোতাদের কাছেও।
বাইরে সুসম্পর্ক বজায় থাকলেও ভিতরে ভিতরে কোথায় যেন কেটে গিয়েছিল সম্পর্কের তার। ১৯৮৪ সালে অনুপ আমেরিকায় গিয়ে থাকবেন বলে ঠিক করেন।
কিন্তু স্বামীর সঙ্গে আমেরিকা যেতে অসম্মত হন সোনালি। তত দিনে রূপকুমারের সঙ্গে তাঁর প্রেম অনেক বেশি অন্তরঙ্গ।
পরবর্তীতে এক সাক্ষাৎকারে সোনালি জানিয়েছিলেন তাঁকে রূপকুমার প্রোপোজ করেছিলেন হায়দরাবাদে একটি অনুষ্ঠানে পারফর্ম করার আগে। নার্ভাস সোনালির হাত ধরে বলেছিলেন তিনি তাঁকে ভালবাসেন।
স্বামীর সঙ্গে আমেরিকা যেতে নারাজ সোনালিকে রূপকুমার সিদ্ধান্ত পাল্টাতে বলেছিলেন। তিনি ভেবেছিলেন, সোনালি যদি ভাঙন ধরা সম্পর্ক নতুন করে সাজিয়ে নেন, তিনি সরে যাবেন তাঁর জীবন থেকে।
কিন্তু অনুপ-সোনালির ভেঙে যাওয়া দাম্পত্য আর জোড়া লাগেনি। অনুপকে ডিভোর্সের পরে ১৯৮৯ সালে রূপকুমারকে বিয়ে করেন সোনালি।
বিয়ের পরেও প্রতিবন্ধকতার মুখোমুখি হতে হয়েছে এই জুটিকে। সোনালির অভিযোগ ছিল, তাঁরা যাতে কাজ না পান, সে চেষ্টা করেছিলেন তাঁর প্রাক্তন স্বামী। ফলে বিয়ের প্রথম কয়েক বছর আর্থিক প্রতিকূলতার মুখোমুখি হতে হয়েছে তাঁদের।
এর পর ধীরে ধীরে বলিউডে কামব্যাক করেন রূপকুমার। ‘অঙ্গার’, ‘গুমরাহ’, ‘রাজা’, ‘প্রেমগ্রন্থ’, ‘বর্ডার’, ‘করীব’, ‘গডমাদার’, ‘হু তু তু’, ‘সরফরোশ’, ‘দিল্লগি’, ‘তক্ষক’, ‘মেলা’, ‘ক্রোধ’, ‘ফিলহাল’, ‘জিসম’, ‘বীর জারা’, ‘রব নে বনা দি জোড়ি’, ‘তনু ওয়েডস মনু’-সহ অসংখ্য ছবিতে প্লেব্যাক করেন তিনি।
‘জেহর’, ‘নজর’, ‘ওহ লমহে’, ‘লাইফ এক্সপ্রেস’-সহ বেশ কিছু ছবিতে সুরকার হিসেবেও ছিলেন রূপকুমার।
রূপকুমার-সোনালির একমাত্র মেয়ে রিওয়া-ও সঙ্গীতশিল্পী। পাশাপাশি, তিনি একজন পিয়ানোবাদক। মাঝে মাঝে গান লেখেনও তিনি।
বাবা-মায়ের ধারা অনুসরণ করে ধ্রুপদসঙ্গীত চর্চা করেন রিওয়া। সেইসঙ্গে তাঁর অনায়াস গতি পাশ্চাত্য সঙ্গীতেও।
সোনালির সঙ্গে বিচ্ছেদের পরে আরও দু’বার বিয়ে করেছিলেন অনুপ। দ্বিতীয় স্ত্রী বীণা ভাটিয়ার সঙ্গেও তাঁর ডিভোর্স হয়ে যায়।
অনুপের তৃতীয় স্ত্রী ছিলেন মেধা গুজরাল। ভারতের প্রাক্তন প্রধানমন্ত্রী আই কে গুজরালের ভাইঝি মেধা ছিলেন পরিচালক শেখর কপূরের প্রাক্তন স্ত্রী।
১৯৯৪ সালে মেধাকে বিয়ে করেছিলেন অনুপ। কুড়ি বছর পরে কিডনির জটিল রোগে আক্রান্ত মেধা প্রয়াত হন। তাঁদের একমাত্র সন্তানের নাম আর্যমান।
‘বিগ বস’-এর দ্বাদশ মরসুম পরে গুঞ্জন শোনা গিয়েছিল ৬৫ বছর বয়সি অনুপ জালোটার বিশেষ বান্ধবী এখন ২৮ বছরের জসলীন মথারু। অনুপের কাছে সঙ্গীতচর্চা করেন জসলীন। পরে সত্যতা স্বীকার করে জসলীন জানান, গত সাড়ে তিন বছর ধরে তাঁরা সম্পর্কে আবদ্ধ।