হবু কনে। ছবি: অনির্বাণ সাহা।
এক সময় কনীনিকা মানেই ছিল বহু সম্পর্কের গল্প। এ বার তিনিই বিয়ের পিঁড়িতে। আগামী ৯ ডিসেম্বর মালাবদল করবেন প্রযোজক সুরজিত্ হরির সঙ্গে। কিন্তু সুরজিতের বাবা গুরুতর অসুস্থ। তাই বিয়ের প্ল্যানিংয়ে জড়িয়ে রয়েছে টেনশন। তবুও হিমেল দুপুরে কনীনিকা তখন যেন লাজুক কনে। আড্ডায় কখনও বরের আগের পক্ষের ছেলে, কখনও বা নিজেরই এক্স বয়ফ্রেন্ড। তবে বিনি সুতোর মালা গাঁথলেন বিয়ের একরাশ স্বপ্ন নিয়েই।
অ্যাট্রাকশন
আমি জয়েন্ট ফ্যামিলির মেয়ে। আর সুরজিতের বাড়িও তাই। আমার ওর প্রতি অ্যাট্রাকশনটাও সেখান থেকেই। প্রথম দিন যখন ডেটে যাই আমার মনে আছে প্রথম ওর বাবা ফোন করল, তার পর মা। এই ফোন কিন্তু আমারও আসে। আমরা যারা ডিসিপ্লিনের মধ্যে বড় হয়েছি তাদের কাছে এটা খুব ইমপর্ট্যান্ট। যে কেউ একজন জানতে চাইবে, তুই বাড়ি ফিরে খাবি তো? বা কোথায় তুই, কখন ফিরবি? সেটা ভাল লেগেছিল। মনে হয়েছিল এই মানুষটা এখনও বাবা-মায়ের ছত্রছায়ায় আছে। তাদের ছেড়ে বেরোয়নি।
সুরজিত্দা…
‘ষড়রিপু’র ডাবিংয়ের আগে আমরা সকলে একসঙ্গে একবার রায়চকে গিয়েছিলাম। তখন তো সুরজিত্দা বলতাম। সকালে ঘুম থেকে উঠে দেখি উনি ঘুরে বেড়াচ্ছেন। তখন আমিই ডেকেছিলাম। তারপর ভ্যানে চড়ে গঙ্গাকুটিরে গিয়েছিলাম। ওখানে দু’ঘণ্টা বকবক করেছিলাম। তার পরের দিনই ও আমাকে বিয়ের প্রোপোজাল দেয়। ওখান থেকে ফিরে আমি একাই ইউরোপ ট্যুরে গিয়েছিলাম। তখন রোজ এক ঘণ্টা করে ফোন করত। খুব কেয়ারিং। তখন দেখলাম এই মানুষটার মধ্যে সেই সব কোয়ালিটি আছে যা একজন হাজব্যান্ডের মধ্যে থাকা উচিত।
মায়ের বয়সী ননদ
আমার বড় ননদ আর আমার মা এক বয়সী। বড় ননদ বন্ধুর মতো। মাও বন্ধু। তবে ওই বাড়িতে আমার রেপ্লিকা হচ্ছে দিদি।
শ্বশুর দাদুর মতো!
আর বাবা মানে বাবুর বয়স ৮০। আমার দাদুর মতো। এই মুহূর্তে নার্সিংহোমের ঘর, ওষুধ, ডাক্তার ঘিরে আছে বাবুকে। কখনও খুব রেগে যান, আবার আমায় খুব ভালওবাসেন। এত শরীর খারাপের মধ্যেও কোনি, কোনি কই? আমি গিয়ে বললাম, বলো তো আমি কে? বলল, তুমি আমার ছেলের বউ। সুরজিতের বাড়ির লোকেদের সঙ্গে পরিচয় লাস্ট ছ’সাত মাস। আর আমাদের সম্পর্কও তো খুব বেশি দিনের নয়। মাত্র দেড় বছরের। কিন্তু বাবুর সঙ্গে সম্পর্কটা অন্যরকম।
বিয়ের কার্ড। ছবি সৌজন্য: কনীনিকা বন্দ্যোপাধ্যায়।
বর ডিভোর্সি, ছেলেও আছে
আমার বাবা-মা বিয়ে বিয়ে করে মাথা খারাপ করে দিয়েছিল। প্রচুর এনআরআই সম্বন্ধ আসছিল সে সময়। কিন্তু আমি তো বিদেশে যাব না। বাবা-মায়ের সঙ্গে থাকাটা আমি এনজয় করব। বলতে পারেন, বাবা-মা-কাকার জন্যই কলকাতার ছেলে খুঁজে বের করা। বা ভগবান হয়তো ঠিক সেই সময়েই সুরজিতকে পাঠিয়েছেন। ও জীবনটা একটু আগে শুরু করেছে। তাই ওর ছেলে দ্রোণ আছে।
বরের আগের পক্ষের ছেলের সঙ্গে অ্যাডজাস্টমেন্ট প্রবলেম?
দ্রোণকে মানিয়ে নিতে অসুবিধে হয় তো। যদি না বলি তা হলে মেয়ে হিসেবে মিথ্যে বলব। দ্রোণের সাইকোলজি ভাবলে আমার তো অবাক লাগে যে ও কী ভাবে আমাকে মানিয়ে নিচ্ছে? একটা মেয়ে যাকে ওর বাবা চুমু খাচ্ছে, জড়িয়ে ধরছে, সে কী জামা পরবে সেটাও ঠিক করে দিচ্ছে এটা মানিয়ে নেওয়া তো সহজ নয়। প্রথম প্রথম দ্রোণকে বুঝতে পারতাম না। না বুঝে ওদের বাবা-ছেলের প্রেমিসেসে ঢুকে পড়তাম কখনও। কিন্তু এখন ওর সিক্রেট ও আমার সঙ্গে শেয়ার করে। প্রথমে মাসি বলে ডাকত। আমি বলেছিলাম কোনি বল। তারপর বড়রা রে রে করে উঠল। তো এখন মা বলে ডাকে। আমি হয়তো সাড়া দিতে ভুলে যাই। অভ্যেস নেই তো। ওর মধ্যে বয়ঃসন্ধিকালের একটা দ্বন্দ্ব কাজ করে হয়তো।
দ্রোণের সঙ্গে কনীনিকা। ছবি সৌজন্য: কনীনিকা বন্দ্যোপাধ্যায়।
আমার সন্তান এলে দ্রোণকে মানিয়ে নিতে পারব?
একটা সময় আমার ছ’বছরের ছোট বোনকে সহ্য করতে পারতাম না। ওকে মারারও চেষ্টা করেছি। ও হওয়ায় মা সাড়ে চার মাস মতো হাসপাতালে ছিল, আর আমি ভাবতাম ও হয়েছে বলে মা আমাকে ছেড়ে আছে। মা-র বয়স কম ছিল, ভাল যে বাসত সেটা তো আলাদা করে বলার কিছু নেই। কিন্তু আমার সেই বয়সের ইমোশন হয়তো বুঝতে পারেনি। কিন্তু আমি দ্রোণকে কখনও নেগলেক্ট করব না। আমাকে ব্যালান্স করতে হবে। আর না হলে তখন ভাবা যাবে।
এক্স বয়ফ্রেন্ড
আমার জীবন তো সবসময়ই খোলা খাতা। চার বছর একা ছিলাম। বিয়ে করব না ঠিক করেছিলাম। এখন মনে হয় মলয়ের সঙ্গে সম্পর্কটা ভেঙে গিয়ে ভালই হয়েছে। মলয়, মলয় প্রধান। সাত বছরের সম্পর্ক ছিল আমাদের। ও ভাল আছে, ভাল কাজ করছে। সাকসেসফুল লাইফ। এটা ভেবে ভাল লাগে সেখানে কোথাও আমারও অবদান রয়েছে। আমি আমার কেরিয়ার স্যাক্রিফাইস করেছিলাম ওর জন্যই। আমরা খুব ভাল বন্ধু ছিলাম। ব্রেকআপের পর খারাপ লাগার থেকেও বেশি অবাক হয়েছিলাম। বুঝলামই না যে মানুষটা আমার জীবন থেকে বেরিয়ে গেল। তবে ও আমার অনেক কিছু শিখিয়েছে। একা বাঁচা, মেয়ে হয়ে সোজা ভাবে দাঁড়ানো— সব। সে সময় দেবদাসী টাইপ হয়েছিলাম। তবে এই পর্যায়টা সব মানুষের জীবনেই আসে বলে মনে হয়। সুরজিত্ সবটাই জানে। আর ও খুব পজেসিভ।
প্রি-হনিমুনে প্যারিসে কনীনিকা-সুরজিত্। ছবি সৌজন্য: কনীনিকা বন্দ্যোপাধ্যায়।
মনকেমন
সম্পর্ক ভাঙার পর ডিপ্রেশন হয়েছিল কিনা জানতে চান অনেকে। এখন তো ‘ডিপ্রেশন’ আমরা একটা গালভরা নাম দিয়েছি। ভাবুন তো আমার দাদু, ঠাকুমার চিঠিতে ঝগড়া হত। আর এখন আমাদের হোয়াটস্অ্যাপে ব্রেকআপ হয়ে যায়! ডিপ্রেশন নয়, বরং মনকেমন বলতে পারি। আমি সুরজিত্কে একবার হোয়াটস্অ্যাপে লিখতে গিয়েছিলাম তোমার জন্য মনকেমন করছে। তার পর ভাবলাম, এ সব কথার কি এখন আর কোনও মানে আছে আমাদের কাছে? আমরা রিলেট করতে পারব?
বিয়ের পর ফ্লার্টিং
ছেলে নিয়ে হনিমুন!
আমাদের প্রি ম্যারেজ হনিমুন হয়েছে দ্রোণকে নিয়ে। প্যারিস, রোম, মাদ্রিদ, বার্সিলোনা। খুব এনজয় করেছি আমরা।
পোস্ট ম্যারেজ হনিমুন
না! এ বার আর ছেলে থাকবে না। এটা একটু বাড়াবাড়ি হয়ে যাবে। তবে কোথায় যাব আমরা এখনও ঠিক করিনি।
বরকে প্রোডিউসই করতে দিচ্ছি না
আমার বরের পারিবারিক ব্যবসা। আর সিনেমা বানায় শখে। তবে এখন আর বরকে প্রোডিউসই করতে দিচ্ছি না। ইন্ডাস্ট্রিতে অনেক শত্রু হয়েছে সে জন্য আমার। আসলে ও কষ্ট করে রোজগার করে ইন্ডাস্ট্রিতে এসে ঢেলে দেয়, তার পর টাকা হুশ হয়ে যায়। আমাদের ইন্ডাস্ট্রিতে টুপি পরানোর মতো অনেক লোক আছে। যেখানে লাস্ট ১৭ বছর করে খাচ্ছি, সেখানে দাঁড়িয়ে তো এই ছেলেখেলাটা করতে দিতে পারি না। ও দুটো ছবি প্রোডিউস করেছে এখনও। প্রথমটা ‘টান’। তখন আমার সঙ্গে ওর আলাপ হয়নি। আর ‘ষড়রিপু’র ডাবিংয়ে ওর সঙ্গে আলাপ। আগে আলাপ হলে হয়তো ‘ষড়রিপু’ করতে দিতাম না। সে সময় এ শহরে আমাদের কমপিটিটার ছিল ‘প্রাক্তন’। মার্কেটিং, ডিস্ট্রিবিউশন কিচ্ছু ঠিক ছিল না। কুরুক্ষেত্রের যুদ্ধের জায়গায় অস্ত্র চালাতে না জানলে বধ হয়ে যাবে বস। এখানে সব রথী-মহারথীরা দাঁড়িয়ে রয়েছে।
গ্রাফিক্স: সোমনাথ মিত্র।