সেলিব্রিটি ম্যাচে কাঞ্চনজঙ্ঘা স্টেডিয়ামে শ্রীদেবী। সেই তাঁর শেষ বার শিলিগুড়ি আসা। ফাইল চিত্র
বেড়ার উপরে টিন বেঁধে দেওয়া হয়েছিল মোটা দড়ি দিয়ে। অতিকায় খুঁটি পুঁতে লাগোনা হয়েছিল কোলাপসিবল গেট। কিসের কী! বিন বেজে উঠতেই শুরু হল ধাক্কা। বেড়ার ওপারে থিকথিক করছিল ভিড়। ‘‘ম্যায় তেরা দুশমন, দুশমন তু মেরা......’’ গানের মুখরাও শেষ হয়নি। ভেঙে গেল গেট-বেড়া। পিলপিল করে লোক ঢুকতে শুরু করল জলসায়। রবিবার দুপুরে শিলিগুড়ির হাকিমপাড়ার বাড়িতে বসে মনে করছিলেন প্রবীণ আইনজীবী মলয় চক্রবর্তী। হিন্দি হাই স্কুলের মাঠে জলসার মঞ্চ বাঁধা হয়েছিল। মলয়বাবু বলেন, ‘‘বাঁশিতে নাগিন সুর শুরু হতেই বাইরে অপেক্ষারত ভিড় বুঝে নিয়েছিলেন তাঁদের স্বপ্নের নায়িকা মঞ্চে চলে এসেছেন।’’ শ্রীদেবীর সেই প্রথম শিলিগুড়িতে কোনও অনুষ্ঠানে আসা। নায়িকার মৃত্যু সংবাদ পেয়ে শোকাগ্রস্ত মলয়বাবু। সে বার এক কৌটো দার্জিলিং চা-ও তুলে দেওয়া হয়েছিল নায়িকার হাতে।
শ্রীদেবী শিলিগুড়িতে এসেছেন তার পরেও বেশ কয়েকবার। কখনও পেশাগত কাজে কখনও বা নিছকই ব্যক্তিগত কাজে। শিলিগুড়ি মহকুমা ক্রীড়া পরিষদের সচিব অরূপরতন ঘোষ মনে করতে পারলেন বছর পাঁচেক আগে ‘সেলিব্রেটি’ ক্রিকেট খেলার মাঠে উপস্থিত ছিলেন নায়িকা। তবে শ্রীদেবী অবশ্য মাঠে নামেননি। তিনি এসেছিলেন সংগঠক হিসেবে। বনি কপূর এবং শ্রীদেবী দু’জনেই ছিলেন আয়োজকদের দলে। এক পরিচিত শ্রীদেবীর সঙ্গে আলাপ করিয়ে দিয়েছিল, মনে আছে অরূপবাবুর। তাঁর কথায়, ‘‘এতবড় একজন গ্ল্যামারাস নায়িকা। কিন্তু কোনও অহং নেই। আমার মতো একজন সাধারণের সঙ্গে কত সহজ ভাবে কথা বললেন তিনি।’’ মাঠের ধুলোতে বসেও পড়েছিলেন নায়িকা। চড়া রোদে স্টেডিয়ামে ছিলেন দীর্ঘক্ষণ। সকলকে অটোগ্রাফ দিয়ে হেসে কথাও বলেছেন। শিলিগুড়ির স্টেডিয়াম ভাল লেগেছিল বলে জানিয়ে যান নায়িকা। শিলিগুড়ি থেকে কাঞ্চনজঙ্ঘার রেখা দেখেও মুগ্ধ হয়েছিলেন। বলে গিয়েছিলেন আবার আসবেন। ২০১৩ সালের সে সময়টাও ছিল বসন্তকাল, ফেব্রুয়ারি।
আরও পড়ুন: ময়নাতদন্ত শেষ, সোমবার ফিরতে পারে শ্রীদেবীর দেহ
আশির দশকের একেবারে শেষে নাগিনা সিনেমা মুক্তির পরে প্রথমবার শিলিগুড়িতে এসেছিলেন ‘চাঁদনি’র নায়িকা। হিন্দি হাইস্কুলের মাঠে তাঁর জন্য আলাদা গ্রিনরুম করতে হয়েছিল। সিনেমার পর্দায় যে সাজে নাচতে দেখা গিয়েছিল নায়িকাকে সেই পোশাক পরেই শিলিগুড়ির মঞ্চে উঠেছিলেন। সেই অনুষ্ঠানে স্বেচ্ছাসেবকদের প্রধান ছিলেন আইনজীবী মলয়বাবু। শহরে অগুনতি অনুষ্ঠানের আয়োজনের সঙ্গে যুক্ত ছিলেন মলয়বাবু। বহু জনপ্রিয় নায়ক-নায়িকা-গায়ককে কাছ থেকে দেখেছেন তিনি। তাঁদের সঙ্গে কথা বলে অনুষ্ঠানে আসার কথা আদায় করেছেন। মলয়বাবুর কথায়, ‘‘শ্রীদেবীর কিন্তু কোনও বায়নাক্কা ছিল না। তখন তিনি খ্যাতির তুঙ্গে। তাঁর ম্যানেজাররা সব সময়ে তটস্থ। কিন্তু ওঁর তেমন মেজাজ দেখিনি।’’ টিকিট শেষ হয়েছিল নিঃশেষে। মঞ্চে নাগিনা সিনেমার গানের সঙ্গে শ্রীদেবীর নাচ শুরুর সঙ্গেই টিকিট না পাওয়া ভক্তরা হামলে ঢুকে পড়েছিল, ভেঙে দিয়েছিল বেড়া। মলয়বাবুর কথায়, ‘‘কী করে যে সে দিন সামলানো হয়েছিল, তা ভাবলে আজও ভয় হয়।’’