দশ মাস পরে বোর্ডিং থেকে বাড়ি ফিরছে চার বছরের ছেলে। বিমানবন্দরে তাকে নিতে হাজির বাড়ির সবাই। চেনা মুখ দেখে শিশুর হাসি তো আর ধরে না। তার মধ্যেই খুব অবাক সে। একজনকে দেখে চেঁচিয়ে উঠল, ‘আরে ! কমেডিয়ান মেহমুদ!’ বেচারি জানতই না, এই কমেডিয়ান তাঁর বাবা! (ছবি: সোশ্যাল মিডিয়া)
অভিনেতা মেহমুদ এত ব্যস্ত থাকতেন, পরিবারের সঙ্গে সময় কাটাতে পারতেন না বললেই চলে। তার উপর ছোট থেকেই ছেলে মকসুদের পড়াশোনা মুসৌরির বোর্ডিং স্কুলে। ফলে বাবা-ছেলের সম্পর্ক সে ভাবে গড়েই ওঠেনি। সে কথা পরে স্বীকার করেছেন দু’জনেই। মেহমুদ নিজে এবং মকসুদ ওরফে লাকি আলি। অনেকেই জানেন না মেহমুদের আট জন সন্তানের মধ্যে দ্বিতীয় সন্তান, লাকি আলি। (ছবি: সোশ্যাল মিডিয়া)
লাকি আলির মা মহলেকা ছিলেন অভিনেত্রী মীনাকুমারীর বোন। বলিউডের আর এক অভিনেত্রী ও নৃত্যশিল্পী মিনু মুমতাজ তাঁর পিসি। মুসৌরির সেন্ট জর্জেস কলেজের পরে কনভেন্ট অব জেসাস অ্যান্ড মেরি। মুম্বইয়ের দু’টি স্কুল বম্বে স্কটিশ এবং বিশপ কটন বয়েজ স্কুলেও পড়েছেন লাকি। (ছবি: সোশ্যাল মিডিয়া)
গানের আগেও লাকি আলির সিনেমায় আগমন অভিনয়ে। তাঁর প্রথম ছবি ১৯৬২ সালে, মেহমুদের পরিচালনায় ‘ছোটে নবাব’। সাত ও আটের দশকে ‘ইয়ে হ্যায় জিন্দগি’, ‘হমারে তুমহারে’ এবং ‘ত্রিকাল’-এর মতো কিছু ছবিতে দেখা গিয়েছে তাঁকে। শ্যাম বেনেগাল পরিচালিত টিভি সিরিজ ‘ভারত এক খোঁজ’-এও অভিনয় করেছেন লাকি। দীর্ঘদিন পর ২০০২ সালে তিনি অভিনয় করেন ‘কাঁটে’ এবং ‘সুর’ ছবিতে। (ছবি: সোশ্যাল মিডিয়া)
নয়ের দশকে বলিউডে হিন্দি পপ গানের জোয়ার আসে। লাকি আলি ছিলেন প্রথম সারির পপ গায়ক। তাঁর অন্যরকম গায়কি তুমুল জনপ্রিয়তা পেয়েছিল। ১৯৯৬ সালে প্রথম মিউজিক অ্যালবাম ‘সিফার’ ছিল সুপারহিট। এরপর ‘সুনো’, ‘কভি অ্যায়সা লগতা হ্যায়’, ‘অকস’ অ্যালবামগুলিও জনপ্রিয় হয়েছিল। (ছবি: সোশ্যাল মিডিয়া)
মিউজিক অ্যালবামের অনেক আগে লাকি এসেছিলেন প্লেব্যাক-এ। ১৯৭৬ সালে মেহমুদের ছবি ‘এক বাপ ছয় বেটে’ ছবিতে প্রথম গান করেন লাকি। এর অনেক বছর পরে ২০০০ সালে ‘কহো না প্যার হ্যায়’ ছবিতে আইকনিক ‘না তুম জানো, না হাম’ গান। এরপর ‘সুর’, ‘বচনা অ্যায় হাসিনো’, ‘অনজানা অনজানি’, ‘তামাশা’ ছবিতে তিনি প্লেব্যাক করেছেন। (ছবি: সোশ্যাল মিডিয়া)
কাজ করতে গিয়েই লাকির আলাপ মেগান জেন ম্যাক ক্লিয়ারি-র সঙ্গে। নিউজিল্যান্ডের এই মডেল লাকির মিউজিক ভিডিও ‘ও সনম’-এ অভিনয় করেছিলেন। ১৯৯৬ সালে বিয়ে করেন দু’জনে। তার আগে ধর্মান্তরিত হন মেগান। তাঁদের দু’জন সন্তান, তাওয়ুজ এবং তসমিনা। (ছবি: সোশ্যাল মিডিয়া)
লাকি বরাবর স্বীকার করেছেন, তিনি একজন স্ত্রী বা একজন নারীর সঙ্গে সম্পর্কে বিশ্বাসী নন। তিনি তিনবার বিয়ে করেছেন। প্রতিবার আগের পক্ষের স্ত্রীর কাছে অনুমতি নিয়ে নতুন নারীকে জীবনসঙ্গিনী করেছেন। সংবাদমাধ্যমের কাছেও লুকোননি তাঁর বহু সম্পর্ক। (ছবি: সোশ্যাল মিডিয়া)
২০০২ সালে লাকির দ্বিতীয় বিয়ে। এ বার তাঁর অর্ধাঙ্গিনী অনাহিতা। লাকিকে বিয়ে করবেন বলে এই পার্সি নারী ধর্মান্তরিত হন। তাঁর নতুন নাম হয় ইনায়া। লাকি-ইনায়ার দুই সন্তান, রাইয়ান এবং সারা। (ছবি: সোশ্যাল মিডিয়া)
প্রথম দু’জন স্ত্রীর অনুমতি নিয়ে ২০০৯ সালে তৃতীয় বিয়ে প্রাক্তন মিস ইংল্যান্ড কেট এলিজাবেথ হ্যাল্লামকে। ধর্মান্তরিত কেটের নতুন নাম হয় আয়েষা। তাঁদের ছেলে ডানির জন্ম ২০১১-এ। (ছবি: সোশ্যাল মিডিয়া)
তবে লাকির তৃতীয় বিয়ে স্থায়ী হয়নি। ২০১৮ সালে বিচ্ছেদ হয়ে গিয়েছে দু’জনের। বিচ্ছেদের সিদ্ধান্ত কেটের। সংবাদমাধ্যমে জানিয়েছেন, লাকির তিন স্ত্রী আলাদা আলাদা শহরে থাকতেন । উৎসবে বা অন্য কোনও উপলক্ষে এক জায়গায় মিলিত হতেন। কিন্তু তাঁর স্বামীর আরও স্ত্রী আছেন, এটা মেনে নিতে পারছিলেন না কেট। স্বামীকে অন্য কারও সঙ্গে ভাগ করে নেওয়া সম্ভব হচ্ছিল না। (ছবি: সোশ্যাল মিডিয়া)
বিয়ে ভাঙলেও ছেলের স্বার্থে বন্ধুত্বের সম্পর্ক বজায় রেখেছেন লাকি ও কেট। প্রাক্তন স্বামীর বিরুদ্ধে কোনও অভিযোগও নেই তাঁর। (ছবি: সোশ্যাল মিডিয়া)
দাম্পত্যের বাইরেও লাকির জীবন বর্ণময়। সঙ্গীতশিল্পীর হওয়ার পাশাপাশি বিভিন্ন কাজ করেছেন। বিভিন্ন প্রজাতির ঘোড়া পালন করেছেন। পুদুচেরিতে খনিজ তৈল নিষ্কাশনের কাজেও অভিজ্ঞতা আছে। কার্পেট পরিষ্কার এবং কার্পেট বিক্রির ব্যবসাও ছিল তাঁর। তা ছাড়া তিনি একজন কৃষক। বিশ্বাস করেন জৈব পদ্ধতিতে কৃষিকাজ করাতেই লুকিয়ে সাফল্য। (ছবি: সোশ্যাল মিডিয়া)